গুইমারা বাজারে প্রকাশ্যে চোলাই মদ বিক্রি বন্ধ
গুইমারা প্রতিনিধি:
খাগড়াছড়ির গুইমারা বাজারসহ আশ পাশের এলাকায় প্রকাশ্যে সাধারণ পন্যের মত চোলাই মদ বিক্রি করা যুগ যুগের ঐতিহ্য হয়ে এসেছে। এই এলাকার সাধারণ মানুষের মনে চোলাই মদই ছিলো ঐতিহ্যের জুস যার ছদ্ম নাম জঙ্গল জুস বলে বাজারে পরিচিতি রয়েছে। আর এটি বন্ধ করা যেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্সাধ্য বিষয় ছিলো। এই বিষয়টি নিয়ে বরাবরই আশপাশের উপজেলা গুলোতে আলোচনা সমালোচনা করা হতো গুইমারার প্রশাসনকে নিয়ে।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে গুইমারা থানায় যোগদানের পর গুইমারাকে মাদকের স্বর্গ রাজ্য থেকে স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে নিয়ে আসার জন্য নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন নবযোগদানরত অফিসার ইনচার্জ সাহাদাত হোসেন টিটু।
গুইমারা উপজেলা প্রশাসনের মাসিক সমন্বয় সভায় চোলাই মদ ব্যবসায়ীদের, অনৈতিক পন্থা ছেড়ে স্বাভাবিক কর্মে ফিরে আসার জন্য ১ মাসের সময় সীমা বেধে দেন তিনি। এবং যদি এই পথ থেকে মাদক ব্যবসায়ীরা ফিরে আসে তবে পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরীর সহযোগিতায় মদ ব্যবসায়ীদের ১০ হাজার টাকা করে পূর্নবাসন পূর্বক সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি। অন্যথায় পরবর্তীতে গুইমারার মাদক ব্যবসায়ী ও সেবন কারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন।
তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ২ মাসে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে,৭৪ লিটার চোলাই মদ উদ্ধারসহ মোট ৬জন নারী পুরুষ মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে ৩টি মামলা দায়ের করেন এবং সংশোধনের জন্য অনেক কিশোরকে তাদের অভিভাবকদের নিকট দায়িত্ব দেন।
এই ধারাবাহিকতায় গুইমারা বাজার ও আশপাশের এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী ও সেবন কারীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখেন বলে থানা সূত্রে জানাযায়। যার ফলে বর্তমানে প্রকাশ্যে বাজারে মদ বিক্রি বন্ধ হয় গেছে। গুইমারা বাজারের দীর্ঘ দিনের প্রকাশ্যে মদ বিক্রি করার একটি ঐতিহ্য ধ্বংস হয়ে গেল।
এই বিষয়ে গুইমারা বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাজারে প্রকাশ্যে মদ বিক্রির বিষয়টা আমাদের জন্য একটি কলঙ্কিত অধ্যায় ছিলো। এটি বন্ধের বিষয়ে আমরা অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। কিন্তু বর্তমান গুইমারা থানা অফিসার ইনচার্জ সাহাদাত হোসেন টিটুর নেতৃত্বে বন্ধ হয়েছে এজন্য বাজার ব্যবসায়ী ও গুইমারা এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
গুইমারা সদর ইউপি চেয়ারম্যান মেমং মার্মা বলেন, মাদক কোন সমাজের জন্য সুফল ভয়ে আনতে পারেনা। চোলাই মদ ব্যবসায়ীদের এ পেশা থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য ভিজিএফ, ভিজেডিসহ নানান সহযোগিতা করেছি এবং এই পেশা থেকে ফিরানোর জন্য আমি নিরলস চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। তবে বর্তমানে প্রশাসনের উদ্যোগে বাজারে প্রকাশ্যে মদ বিক্রি বন্ধ হয়েছে। তার জন্য তাদেরকে গুইমারা ইউনিয়ন বাসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
এই বিষয়ে বাজারের সাধারণ ব্যবসায়ীরা বলেন, সাহাদাত হোসেন টিটু গুইমারা থানার সফল একজন ওসি। তিনি গুইমারা থানায় যোগদানের পর নিজ যোগ্যতা আর দক্ষতার বলে বাজারে প্রকাশ্যে মদ বিক্রি বন্ধ করে আমাদের মন জয় করেছেন। এই থানায় অনেক ওসি এসেছেন যা আর কেও করতে পারেন নাই। বর্তমান দেশের সকল থানায় এমন একজন ওসির প্রয়োজন, আমরা গুইমারা বাজার ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে তার এমন মহতী কাজের জন্য অভিনন্দন ও সাধুবাদ জানাই।