ঘরে উঠল বিনা’র সোনালী ফসল : হাসি ফুটল কৃষকের মুখে

Coxs Bina cuting

আবদুল্লাহ নয়ন, কক্সবাজার

দীর্ঘ ৮ বছর সাধনার পর অবশেষে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছালেন বিজ্ঞানীরা। এই প্রথমবারের মতো ঘরে উঠলো বিনা’র সোনালী ফসল। মাঠ ভরা ফসল কেটে ঘরে তুলতে পারায় ‘ হাসি’ ফুটেছে কৃষকের মুখেও। শনিবার দুপুরে চকরিয়ার বদরখালী এলাকায় বিনা উদ্ভাবিত লবণ সহিষ্ণু ধান কাটা উদ্বোধন করেন বিজ্ঞানীরা।

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউ সুত্র জানিয়েছেন, দেশের উপকূলীয় জেলা সমুহের প্রায় ১০ লাখ হেক্টর জমি রয়েছে। যেখানে লবণাক্ততার কারণে ধান চাষ হয় না। অপরদিকে কক্সবাজার জেলায় এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী মিলিয়ে ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে লবণ চাষ হয়। পাশাপাশি উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছাস, ঘুর্ণিঝড় সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সমুদ্রের লোনা পানি কৃষি জমিতে প্রবেশ করে আবাদী জমি ক্রমাগত লবণাক্ত হয়ে পড়ায় ধান চাষ মারাত্মকভাবে বিঘিœত হচ্ছে। পাশাপাশি বৈশ্বিক উঞ্চতা বাড়ার কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে যা দেশের কৃষি ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাবের সৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে। এ অবস্থায় দেশের উপকূলের বিস্তুীর্ণ লবণাক্ত এলাকাকে ধান চাষের আওতায় আনতে ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানিরা লবণ সহিষ্ণু ধানের বীজ আবিষ্কারে গবেষণা চালিয়ে আসছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৫ সালে বিজ্ঞানীরা বিনা-৮ ও বিনা ১০ নামে ধান আবিষ্কার করে। বিনা ধান ৮ যা ৮ থেকে ১০ ডেসিমিটার ও বিনা ধান ১০ যা ১০ থেকে ১২ ডেসিমিটার মাত্রায় লবণ সহনশীল।

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার রাজাখালি ও পাশ্ববর্তী বাঁশখালি উপজেলায় কিছু কিছু কৃষক লবণ চাষের পাশাপাশি বিনা ৮ ও বিনা ১০ ধান চাষ করছে। 

এদিকে উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল লবণ সহিষ্ণু ধানের জাত বিনা ধান- ৮ ও ১০ এর প্রচার ও সম্প্রসারণের  লক্ষ্যে গতকাল আয়োজিত ‘মাঠ দিবস’ অনুষ্ঠান শেষে লবণ সহিষ্ণু ধানের পরীক্ষামূলক প্লটে ধান কেটে সোনার ফসল তোলার কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এসময় বিনা’র গবেষণা বিভাগের পরিচালক ড. মোহাম্মদ আবদুস সালাম, ময়মনসিংহস্থ বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম সহ প্রশাসনের কৃষি সংশ্লিষ্ট পদস্থ কর্মকর্তা, স্থানীয় চাষীরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তিন মৌসুমে চাষ উপযোগী এসব বিনা ধান এখন থেকে পুরো দেশের লবণ সহিষ্ণু এলাকায় ব্যাপকহারে চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, “পারমানবিক এবং মলিকুলার কলাকৌশলের মাধ্যমে ফসলের নতুন জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন” কর্মসূচী এসব ধানের বীজ উদ্ভাবনে কাজ করছে বিজ্ঞানীরা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন