চকরিয়ায় লবণ উৎপাদনের ধুম, লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভবনা

চকরিয়া প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের সাত উপজেলা ও পাশ্ববর্তী চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে প্রায় ৬০ হাজার একর জমিতে চলছে লবণ উৎপাদনের ধুম। তীব্র রোদের পাশাপাশি আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় এবার লক্ষ্য মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন প্রান্তিক চাষিরা।

জানা যায়, লবণ উৎপাদনের ভরা মৌসুমে প্রকৃতির বৈরি আচরণে কয়েকদিন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ায় কিছুটা ক্ষতির সম্মুখিন হন মাঠ পর্যায়ের চাষিরা।

এতে কক্সবাজার সদর, চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, উখিয়া, টেকনাফ ও চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে প্রায় ৬০ হাজার একর জমিতে ব্যহত হয় লবণ উৎপাদন।

এই অবস্থায় আর্থিকভাবে কিছুটা ক্ষতির মুখে পড়েন এখানকার লক্ষাধিক চাষি। তবে বৈরি আবহাওয়া কেটে গিয়ে স্বাভাবিক হয়ে আসায় ফের পুরোদমে মাঠে নামেন চাষিরা। এতে লবণ উৎপাদন ভালো হওয়ায় হাসি ফুটেছে তাদের মুখে।

তবে গত কয়েক মৌসুমে দেশে চাহিদা মিটিয়ে লবণ উদ্বৃত্ত থাকলেও বিদেশ থেকে লবণ আমদানির চক্রান্তে মাথায় হাত উঠছে চাষিদের।

তাদের দাবি, দাম ঠিক রেখে লবণ চাষিদের ন্যায্য দাবি মেনে নিতে হবে এবং বিদেশ থেকে লবণ আমদানির চক্রান্তের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

এজন্য প্রধানমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেন তারা।

লবণ চাষিদের মতে, কয়েকদিনের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে কক্সবাজারের লবণমাঠ বৃষ্টিতে তলিয়ে যায়। বিশেষ করে পলিথিন পদ্ধতিতে উৎপাদিত সাদা লবণ পানির সাথে মিশে গিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতি হয়েছে তাদের।

লবণ চাষিরা জানান, চলতি বছর লবণ মৌসুম শুরুর পর এখন পর্যন্ত প্রতি কানিতে ৮০ থেকে ১শ’ মণ লবণ উৎপাদন করেন চাষিরা।

বৃষ্টিপাতের কারণে প্রায় এক সপ্তাহ লবণ উৎপাদন ব্যাহত হয়। তবে আবহাওয়া শুষ্ক ও স্বাভাবিক হওয়ায় বর্তমানে পুরোদমে মাঠে নেমেছেন তারা।

কক্সবাজার বিসিকের একাধিক কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ লবণ চাষি সমিতির কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, বৈরি আবহাওয়ায় কয়েকদিন লবণ উৎপাদন ব্যাহত হলেও তা লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কোনো প্রভাব ফেলবে না। কারণ গত বছরের উৎপাদিত উদ্বৃত্ত বিপুল পরিমাণ লবণ এখনো মাঠে মজুদ রয়েছে।

তাছাড়া বৃষ্টিপাতে লবণ চাষিদের আর্থিকভাবে বড় অঙ্কের ক্ষতি হবে না। কারণ বৃষ্টিপাতের আগাম আভাস থাকায় মাঠের বেশির ভাগ চাষি উৎপাদিত লবণ নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন।

আবার অনেকে মাঠের ভেতরে পলিথিন মুড়িয়ে উৎপাদিত লবণ মজুদ করে রেখেছেন। ফলে অল্প পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হলেও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায় তেমন প্রভাব পড়বে না।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (বিসিক) কক্সবাজার কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক দিলদার আহমদ চৌধুরী বলেন, চলতি বছর দেশে লবণের চাহিদা রয়েছে প্রায় ১৬ লাখ ৭০ হাজার মেট্টিক টন। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ১৮ লাখ মেট্টিক টন। এর বিপরীতে গেল ২৫ মার্চ পর্যন্ত ৬০ হাজার একর জমিতে প্রায় ১২ লাখ ৫ হাজার ২শ’ মেট্টিক টন লবণ উৎপাদন হয়েছে।

তিনি বলেন, উৎপাদন মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টিতে কয়েকদিন বন্ধ থাকলেও বর্তমানে লবণ উৎপাদনে মাঠে কাজ করছেন চাষিরা।

এছাড়া আরও দুইমাস মতো হাতে সময় থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উদ্বৃত্ত লবণ উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এসময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে উদ্বৃত্ত লবণ উৎপাদন করতে সক্ষম হবেন চাষিরা।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ লবণ চাষি সমিতির সভাপতি ও বৃহত্তর লবণ উদপাদনকারী প্রতিষ্ঠান চকরিয়া উপজেলার দরবেশকাটা এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, লবণ উৎপাদনের ধুম চলছে মাঠে মাঠে। ইতোমধ্যে বিসিকের লক্ষ্যমাত্রার সিংহভাগ লবণ উৎপাদন হয়ে গেছে। তাই কোনোভাবেই লবণের ঘাটতি হবে না। হাতে থাকা সময়ের মধ্যে লবণ উৎপাদন দ্বিগুণ হতে পারে।

তিনি জানান, বর্তমানে প্রতি কানিতে ৮০ থেকে একশ’ মণ লবণ উৎপাদন করছেন চাষিরা।

শহিদুল ইসলাম বলেন, দেশে ভোক্তা ও শিল্প পর্যায়ে লবণের চাহিদা প্রচুর। সেই সাথে মাঠপর্যায়ের চাষিরা ভালো দামও পাচ্ছেন। বাকী সময়ের মধ্যে বিসিকের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে দেশে বিপুল পরিমাণ উদ্বৃত্ত লবণ উৎপাদন হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন