Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

চকরিয়া উপকুলীয় বদরখালীতে চলছে জলাশয় ভরাট: পরিবেশ আইন লঙ্ঘন

চকরিয়া প্রতিনিধি:

চকরিয়া উপজেলার বদরখালীতে পরিবেশ আইন লঙ্ঘনের মাধ্যমে চলছে জলাধার ভরাটের মহোৎসব। সাগর চ্যানেলের তলদেশ থেকে মেশিন বসিয়ে উত্তোলন করা হচ্ছে কাদামাটিযুক্ত বালু। এসব বালু পাইপের মাধ্যমে ফেলা হচ্ছে জলাধারে। ভরাটের পর সেখানে বহুতল বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণে নেমেছে এশিয়ার বৃহত্তম সমবায়ী প্রতিষ্ঠান বদরখালী সমবায় ও কৃষি উপনিবেশ সমিতি।

এ ঘটনায় গত ১৯ সেপ্টেম্বর বিষয়টির আলোকে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন বদরখালী সমিতির সভ্য ও স্থানীয় পরিবেশ সচেতন নাগরিক মো. রিদুয়ানুল হক। কিন্তু অভিযোগটি দাখিল করার পর একমাস সময় অতিবাহিত হলেও অদ্যবদি পরিবেশ অধিদপ্তর এব্যাপারে কার্যকর কোন ধরণের প্রদক্ষেপ নেয়নি। এ অবস্থার ফলে পরিবেশ অধিদপ্তরের ভুমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

অপরিকল্পিতভাবে জলাধার ভরাটের ফলে ওই এলাকায় প্রাকৃতিক পরিবেশের সুরক্ষা চরম হুমকিতে পড়েছে। এতে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে নানা প্রজাতির জীববৈচিত্র। অপরদিকে জলাধার ভরাট হলে বর্ষাকালে পানি চলাচল প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এতে এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার সঙ্গে বন্যার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় পরিবেশ সচেতন মহল।

অভিযোগ উঠেছে, জলাধার ভরাটের পর বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণের মাধ্যমে দোকান বরাদ্দখাতে বড় ধরণের আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য পরিবেশ বিধ্বংসী একাজে নৈপথ্যে ভুমিকায় রয়েছেন বদরখালী সমিতির সভাপতি হাজি নুরুল আলম সিকদার ও সম্পাদক একেএম ইকবাল বদরী। সেজন্য তাঁরা পরিবেশ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দিব্যি এ অপর্কমটি চালিয়ে যাচ্ছেন।

বদরখালী সমিতির সভ্যরা জানিয়েছেন, সমিতির মালিকানাধীন বাজারের পশ্চিম অংশে শতবছরের পুরানো একাধিক গর্ত (বর্ধিত খাই জায়গা) রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এসব গর্তে অন্তত ২০ একর মতো জায়গা আছে। প্রতিবছর বর্ষাকালে বাজারের বৃষ্টির পানি গড়িয়ে পশ্চিম অংশের ওই গর্ত গুলোতে জমাট হয়। ক্রমান্নয়ে তা পশ্চিম অংশের সাগর চ্যানেলে নেমে যায়। ফলে বাজার ও আশপাশ এলাকা জলাবদ্ধতার কবল থেকে মুক্ত থাকে।

সচেতন মহলের মতে, বৃষ্টির পানি গড়িয়ে পড়ে জমাটের পাশাপাশি সমিতির পক্ষ থেকে খাই গর্তের উল্লেখিত পরিমাণ জায়গা প্রতিবছর নিলামের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ডাককারীকে মৎস্য চাষের জন্য ইজারা দেয়া হয়। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে উল্লেখিত পরিমাণ খাই গর্তের জায়গা দুইবছর (২০১৮ ও ১৯ সালের জন্য) মেয়াদে ১৬ লাখ ১০ টাকা সর্বোচ্চ ডাককারী হিসেবে সমিতির সভ্য বদিউল আলম মানিক নামের একজনকে ইজারা দেয়া হয়েছে। ডাককারী মানিক সেই সময় সমিতির কাছে ৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা রিসিটমুলে পরিশোধ করে যথারীতি মৎস্য চাষও শুরু করেছেন।

ইজারাদার বদিউল আলম মানিক বলেন, দুইবছর মেয়াদে আমি উল্লেখিত খাই গর্তের জায়গা সমূহ মৎস্য চাষের জন্য সমিতির কাছ থেকে ইজারা নিই। প্রথম বছর আমি সমিতির কাছে ৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা পরিশোধ করে চাষও শুরু করি। এখনো মেয়াদ শেষ হতে আমার আরো একবছর দুইমাস সময় অবশিষ্ট আছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার ইজারা মেয়াদ এখনো বাঁকি আছে। কিন্তু এখন দেখি আমার মৎস্য চাষের ওই খাই গর্তের জায়গায় সেলো মেশিন বসিয়ে মাটি ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। বিষয়টি সমিতির সভাপতি সম্পাদকের কাছে জানানোর পরও কোন ধরণের প্রতিকার পাইনি। এখন আমি কী করব ভেবে পাচ্ছিনা।

বদরখালী সমিতির মালিকানাধীণ শতবছরের পুরানো খাই গর্তের জলাধার ভরাটের ঘটনায় ইতোমধ্যে সমিতির সভ্য রিদুয়ানুল হক কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তাঁর অভিযোগের প্রেক্ষিতে শনিবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে ঘটনাস্থলে সরেজমিনে গেলে সেলো মেশিন বসিয়ে মাটি ফেলে জলাধার ভরাটের সত্যতা পাওয়া গেছে।

বদরখালী সমিতির একাধিক সভ্য ও পোষ্যরা অভিযোগ তুলেছেন, গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে বাজারের পশ্চিম অংশে সাগর চ্যানেলে সেলো মেশিন বসিয়ে পরিবেশের সুরক্ষা নিধনের মাধ্যমে জলাধার ভরাটের কাজটি শুরু করেছেন সমিতির সভাপতি হাজি নুরুল আলম সিকদার ও সম্পাদক একেএম ইকবাল বদরীসহ একটি চক্র।

মুলত ভরাটের পর ওই জায়গায় বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণের মাধ্যমে দোকান বরাদ্দখাতে বড় ধরণের আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য সমিতির অভিযুক্ত এসব কর্মকর্তারা পরিবেশ বিধ্বংসী একাজে নৈপথ্যে নাটের গুরুর ভুমিকায় রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিলিপ্তার সুযোগে অভিযুক্ত চক্রটি বর্তমানে জলাধার ভরাটে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।

কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের পরির্দশক মো. মুমিনুল হক মুঠোফোনে বলেন, জলাধার ভরাটের ঘটনায় বদরখালী সমিতির সভাপতি সম্পাদকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে রিদুয়ানুল হক নামের একজন লিখিত অভিযোগ করেছেন। জনবল সল্পতা আবার দাপ্তরিক বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে অভিযোগটি যথাসময়ে ফলোআপ করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, আশাকরি চলতি সপ্তাহেই আমরা সেখানে অভিযান পরিচালনা করবো। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে পরিবেশ অধিদপ্তর।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বখতিয়ার উদ্দিন বলেন, জলাধার ভরাটের মাধ্যমে পরিবেশের সুরক্ষা নিধনের ঘটনায় আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। তারপরও বিষয়টি যেহেতু জনস্বার্থে তাই পরিবেশ অধিদপ্তর চাইলে থানা পুলিশ অভিযানকালীন প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবে।

বদরখালী সমিতির সম্পাদক একেএম ইকবাল বদরী বলেন, যেখানে মাটি ফেলা হচ্ছে মুলত ওই জায়গাটি অনেক আগের ভরাট জায়গা। ওখানে কোন ধরণের জলাধার নেই। তবে বাজারের গড়িয়ে পড়া ময়লা পানি জমে জায়গার কিছু অংশে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, সমিতির উন্নয়ন ও সভ্যদের বৃহত্তর স্বার্থে আমরা পতিত এই জায়গাটির সংস্কার করছি। তবে ভরাটের অভিযোগটি অসত্য।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন