চরম শিক্ষক সংকটে রামগড় সরকারী কলেজে, শিক্ষা কার্যক্রম প্রায় অচল

 

school

বিশেষ প্রতিনিধি:

খাগড়াছড়ি জেলার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্মৃতি বিজরিত রামগড় সরকারী ডিগ্রী কলেজে শিক্ষক সংকটে শিক্ষা কার্যক্রম অচল হয়ে পড়েছে। ২১ শিক্ষকের মধ্যে আছেন মাত্র ৬ জন শিক্ষক। শূণ্য রয়েছে ১৫জন শিক্ষকের পদ। চারটি বিষয়ের কোনো শিক্ষক নেই। শিক্ষক সংকটের কারণে কলেজে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকরা চরম দুশ্চিতার মধ্যে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮০ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়উর রহমানের ঘোষনায় রামগড় কলেজটি স্থাপিত এবং ১৯৯২ সালের ১৩ মে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ঘোষনায় জাতীয়করণ করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে কলেজটিতে সুনামের সাথে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। গত সাড়ে চার বছরে কলেজ থেকে শিক্ষকরা একের পর এক চলে যাওয়ায় কলেজটি এখন প্রায় শিক্ষক শূণ্য বললেই চলে। নতুন কোন শিক্ষককে পোষ্টিং দেয়ায় কলেজটিতে আজ চরম শিক্ষক সংকট চলছে।

সর্বশেষ গত জানুয়ারী মাসে অধ্যক্ষসহ ব্যবস্থাপনা বিভাগের দুজন এবং ইসলামের ইতিহাস বিভাগের একজন শিক্ষককে অন্য কলেজে বদলি করা হয়। এর মধ্যে শুধু অধ্যক্ষের শূণ্য পদে পোষ্টিং দেয়া হলেও বর্তমানে দর্শন, ব্যবস্থাপনা, হিসাব বিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে কোনো শিক্ষক নেই। প্রত্যেক বিষয়ের দুটি করে পদ থাকলেও বাংলা, অর্থনীতি, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে কর্মরত আছেন একজন করে শিক্ষক। অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ বর্তমানে শূণ্য রয়েছে। সহযোগী অধ্যাপক দাপ্তরিক কাজে প্রায় ব্যস্ত থাকেন। অবশিষ্ট ৫জন শিক্ষক দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম বর্ষ ও দ্বিতীয় বর্ষের মানবিক, বাণিজ্য ও বিজ্ঞান বিভাগের ক্লাস এবং স্নাতক শ্রেনীর প্রথম বর্ষ ও তৃতীয় বর্ষের মানবিক, সমাজ বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগের ক্লাস চালানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে শিক্ষা কার্যক্রম অচল হয়ে পড়েছে। ক্লাস না হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীরা কলেজ ক্যাম্পাসে ঘুরাফেরা ও আড্ডা দিয়ে সময় কাটায়। হতাশাগ্রস্থ শিক্ষার্থীরা কলেজ বিমুখ হয়ে পড়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, শিক্ষক শূণ্যতা পূরণের আবেদন জানিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ একাধিক বার মহাপরিচালকের দপ্তরে পত্র পাঠিয়েছেন। এছাড়া গত বছরের ২৮ জুন ট্রাস্কফোর্স চেয়ারম্যান যতীন্দ্রলাল ত্রিপুরা এমপি এবং ১৮ জুলাই পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মাননীয় মন্ত্রী দীপংকর তালুকদার শিক্ষক পোষ্টিং দেওয়ার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু এর পর দুইজন শিক্ষককে পোষ্ঠিং দেয়া হলেও তারা কর্মস্থলে যোগ না দিয়ে আবার বদলী হয়ে যায়। অপরদিকে রামগড়ে ৭১’র স্মৃতি ভাস্কর্য্য বিজয় উদ্বোধনকালে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক আনিস-উল-হক ভূইয়া রামগড়বাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর জন প্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বরাবরে রামগড় সরকারী ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক শূণ্যতা পূরণের জোর দাবী জানানো হয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমিনুল ইসলাম বলেন, শিক্ষক শূণ্যতা পূরনের দাবিতে ইতিমধ্যে আমার অফিসে প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে রামগড় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড এর মাধ্যমে ষ্মারক লিপি গ্রহন করা হয়েছে। তিনি আরো জানান,যথাযথ কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় শিক্ষক শূণ্যতা বিযয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবে বলে জানান। এদিকে ১৯৯৫-৯৬ শিক্ষাবর্ষে বিএসসি কোর্স চালুর অনুমতি পাওয়া গেলেও শিক্ষক নিয়োগ না দেয়ায় প্রায় এক যুগের বেশি পার হলেও স্নাতক পর্যায়ে বিজ্ঞান বিভাগ চালু করা যায়নি। ফলে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা নির্মিত তিনতলা বিশিষ্ট বিএসসি ভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এছাড়া কলেজে তৃতীয় শ্রেনীর দুইজন ও ৪র্থ শ্রেনীর তিনজন কর্মচারীর পদ দীর্ঘদিন ধরে শূণ্য রয়েছে। এ দিকে শিক্ষক পোষ্টিং ও বিএসসি কোর্স চালুর দাবিতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডসহ অভিবাবক, কলেজের ছাত্র-ছাত্রী বৃন্দ মানববন্ধন এর মাধ্যমে জোর দাবি জানিয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

One Reply to “চরম শিক্ষক সংকটে রামগড় সরকারী কলেজে, শিক্ষা কার্যক্রম প্রায় অচল”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন