চিকিৎসকের গলাকাটা চিকিৎসা ফি’তে কাবু কক্সবাজারের নিম্ন আয়ের লোকজন

doctor-commission

নিজস্ব প্রতিবেদক:

শারীরিকভাবে অসুস্থ্য হলে সকলে ভাল চিকিৎসার জন্য ভাল চিকিৎসকের কাছে যেতে চান। কিন্তু নিন্ম আয়ের লোকজনের কাছে তা সম্ভব হয় না। কারন ওসব চিকিৎসকের কাছে যেতে হলে লাগবে ৫শ টাকা পরার্মশ ফি। এই ফি ছাড়াও রয়েছে রোগীর বিভিন্ন শারীরিক পরিক্ষা ঔষধের খরচ।

তাই অনেকে ঝুঁকছে হাতুড়ি ফার্মেসির দিকে। যেখানে গিয়ে তারা রোগের ধরন বলে। আর অনভিজ্ঞ ঔষধ বিক্রেতা ব্যবসার জন্য গতানুগতিক কিছু ওষধ ধরিয়ে দেয়। এতে বেশিরভাগ সময় রোগের সঠিক চিকিৎসা না হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে রোগীরা। পরে রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে গেলে বাধ্য হয়ে ওই ৫শ টাকা ফি দিয়ে চিকিৎসক দেখাতে হয়। এর বাহিরে রয়েছে রোগের বিভিন্ন পরিক্ষা-নিরিক্ষা খরচ। এতে আর্থিকভাবে আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় নিম্ন আয়ের লোকজন।

অনেকে আবার অর্থের অভাবে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা নিতে যায়। কিন্তু ওখানেও শান্তি নেই। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও পাওয়া যায়না চিকিৎসককে। পেলেও কোনভাবে দেখে দায় সারেন চিকিৎসক। এর ফলে ওই রোগীকে বাধ্য হয়ে প্রাইভেটে ডাক্তার দেখাতে হয়। এ অবস্থায় ঘুরে-ফিরে রোগীকে বরাবরেই ৫শ টাকা পরার্মশ ফি দিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়। এতে মারাত্মকভাবে ভোগান্তিতে পড়ছে নিম্ন আয়ের জনগণ।

এই দূরাবস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করছেন সচেতন মহল। তারা বলছেন মহান পেশার অধিকারী চিকিৎসকরা যদি এত টাকা পরার্মশ ফি নেয় তাহলে সাধারণ লোকজন কোথায় যাবে? যেসব চিকিৎসক এ ধরনের অপচর্চা করছে তা কি বন্ধ হওয়ার নয়? এমনটাই প্রশ্ন সচেতনমহলের।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, মেডিকেল কলেজ নির্মানাধীন থাকায় মেডেকেল কলেজের কার্যক্রমের চাপ পড়ছে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের উপর। রোগীর অতিরিক্ত চাপ থাকায় অনেকসময় বেশিক্ষন রোগী দেখতে পারেনা চিকিৎসরা। কিছু চিকিৎসকের দায়িত্বে অবহেলা ও ৫’শ টাকা ফি নেওয়া ব্যাপারে জানান, বিষয়টি কক্সবাজার সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে সমাধান করা উচিত।

এদিকে ৫শ টাকা ফি নেওয়ার ব্যবাপারে সিভিল সার্জন জানান, এই ফি নেওয়ার ব্যাপারে সরকারীভাবে কোন নিদৃষ্ট আইন বা নিয়মাবলি নেই। তবে সব চিকিৎসক যে এমন করছে তা সঠিক নয়। আর এ ব্যাপারে কোন সু-নির্দিষ্ট আইন নেই। তবে হওয়া প্রয়োজন। আর তা দ্রুত হতে যাচ্ছে।

শহরের বাহারছড়ার টমটম চালক লিয়াকত মিয়া জানান, তার ৯ বছরের মেয়ে রুমাইসা গত ২ মাস ধরে জ¦রে ভূগছে। টাকার অভাবে ভাল চিকিৎসক না দেখিয়ে স্থানীয় ফার্মেসী থেকে ঔষধ নিয়ে খাইয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় সদর হাসপালে যায়। ওখানেও ২ বার চিকিৎসক না পেয়ে ফিরে আসেন। পরে বাধ্য হয়ে প্রাইভেটে এক চিকিৎসককে দেখান। ওই চিকিৎসক বিভিন্ন পরীক্ষা দেন তার নির্ধারিদ প্যাথলজিতে। পরে তার সন্তান সুস্থ্য হয়। কিন্তু এই চিকিৎসার জন্য ঋণ হয় ৫ হাজার টাকারও বেশি। তার মেয়ে সুস্থ্য হলেও ক্ষোভ হল, ওই চিকিৎসকের ফি যদি কম হত তাহলে ফার্মেসীতেও যেতে হত না আর বার বার সদর হাসপাতালেও যেতে হতনা।

একইভাবে টেকনাফে শামলাপুরের রাজিয়া সুলতানা জানান, কক্সবাজার সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগে ৯ টা থেকে ১২ পর্যন্ত দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরে চিকিৎসকের দেখা মিললেও রোগের কথা ঠিকমত বুঝাতে পারেনা চিকিৎসকের রোগী দেখার চাপের কারনে। আর চিকিৎসকও তাকে খুব অল্প সময়ের জন্য দেখে ঔষধ লিখে দেন।

সাইফুল ইসলাম নামে এক কলেজ ছাত্র জানান, শহরে কিছু চিকিৎসক রয়েছে যাদের ব্যবহারে রোগী অর্ধেক ভাল হয়ে যায়। তবে কিছু চিকিৎসক আছে টাকা ছাড়া কিছুই বুঝেননা। যারা ৫শ টাকা করে দৈনিক রোগী দেখেন ৫০ থেকে ৬০ জন। এছাড়াও বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানী ও বিভিন্ন প্যাথলজি থেকেও পাচ্ছে টাকা। যার কর দেওয়া হয় কিনা সন্দেহ।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার সোলতান আহম্মদ সিরাজী জানান, কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ৪৬ জন চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করছেন। তার মধ্যে কিছু চিকিৎসক যে দায়িত্ব অবহেলা করছে তা একেবারে মিথ্যা নয়। তবে কক্সবাজার নির্মানাধীন মেডিকেল কলেজের কাজও সদর হাসপতালে হওয়ায় বাড়তি চাপ থেকে সদর হাসপাতালে। বহির্বিভাগ ও অভ্যন্তরীন বিভাগে রোগী দেখতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ৫’শ টাকা ভিজিট নেওয়ার ব্যাপারে বলেন, চিকিৎসা হচ্ছে মহৎ পেশা। তাই চিকিৎসকদের নিজেদের বিবেক দিয়ে বিচার করতে হবে কাজটি ভাল হচ্ছে কিনা।

কক্সবাজার সিভিল সার্জেন (ভারপ্রাপ্ত) ডাক্তার মহিউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর জানান, কক্সবাজার সদর হাসপাতাল ছাড়া পুরো জেলায় ১৯২ টি পোষ্টে ১১২ জন চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করছেন। চিকিৎসকের কাজ জনস্বস্থ্যের সেবা প্রদান করা। আর তাই হচ্ছে। তবে অতিরিক্ত পরার্মশ ফি নেওয়া কোনভাবে কাম্য নয়। আসলে এ এটি সম্পূর্ণ বিবেকের ব্যাপার। এছাড়া এই ফি’র ব্যাপারে কোন নিদৃষ্ট নিয়ম-কানুন নেই। তবে নিদৃষ্ট একটি নিয়ম শিগ্রই আসছে। ফলে এই অপচর্চার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন