‘জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক’র লড়াইয়ে খাগড়াছড়িতে শ্রেষ্ঠ মাটিরাঙ্গা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
নিজস্ব প্রতিবেদক :
পার্বত্য খাগড়াছড়ির জেলার সব সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে পেছনে ফেলে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদকের লড়াইয়ে খাগড়াছড়ির শ্রেষ্ঠ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্বাচিত হয়েছে ‘মাটিরাঙ্গা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’। সরকারি নিয়ম-কানুনের মধ্যে থেকেও নিজস্ব পরিকল্পনা এবং ঐকান্তিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে বিদ্যালয়টি আজ স্ব-মহিমায় উদ্ভাসিত। আধুনিক এবং আকর্ষণীয় শিক্ষাদান পদ্ধতি এবং ব্যবস্থাপনার কৌশল প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বিদ্যালয়টি জেলার মধ্যে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে।
খাগড়াছড়ি জেলা শহর থেকে ২১ কিলোমিটার পশ্চিমে মাটিরাঙ্গা উপজেলার প্রাণ কেন্দ্রে অল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে ১৯৬৩ সালে মাটিরাঙ্গা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পথচলা শুরু। পার্বত্য চট্টগ্রামের তৎকালীন বিরাজমান পরিস্থিতিসহ নানা প্রতিকূলতাকে মোকাবেলা করে সে সময়ে কর্মরত শিক্ষক/শিক্ষিকা ও স্থানীয় শিক্ষানুরাগীদের অনুপ্রেরণায় মাটিরাঙ্গার পিছিয়ে পড়া অনগ্রসর জাতি-সত্ত্বার মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াতে নিরলস ভাবে কাজ করে বতর্মানে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি খাগড়াছড়িতে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের উজ্বল এক নক্ষত্রের নাম।
বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল মালেক দায়িত্ব গ্রহনের পর বিদ্যালয়টি স্থানীয় প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে চমক সৃষ্টি করে। জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদকের লড়াইয়ে খাগড়াছড়ির শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি লাভ করে। এর আগে ২০০৫ সালে প্রাথমিক বৃত্তি পরিক্ষায় চট্টগ্রাম বিভাগের ৫টি সেরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩য় স্থান অর্জন করে আলোচনায় আসে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। ২০০৩ সাল থেকে প্রাথমিক বৃত্তি পরিক্ষায় সাফল্যসহ ও সমাপনী পরিক্ষায় শতভাগ পাশের রেকর্ড রয়েছে বিদ্যালয়টির।
সরকারী নিয়মে শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালনার বাইরেও এসএমসিসহ স্থানীয় শিক্ষানুরাগীদের সহায়তায় গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য সকাল ও রাতে আলাদাভাবে পাঠদানের ব্যবস্থা করেও ইতিমধ্যে আলোচিত হয়েছে বিদ্যালয়টি। এলাকার সকল শিশুকে বিদ্যালয়মূখী ও শিক্ষার গুনগত মান বাড়াতে বিদ্যালয়টির প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র মো. শামসুল হক।
বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ভৌত অবকাঠামোগত সমস্যার মধ্য দিয়েই ৫০০ ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষালাভ করছে। শিক্ষার্থীদের বিপরীতে রয়েছে চৌদ্দ জন প্রশিক্ষিত শিক্ষক/শিক্ষিকা কর্মরত আছেন। তিন একর ভুমি উপর প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টির মুল ভবন এখনো টিনের বেড়া ও ছাউনিতে গড়া। অনেকটা ব্যবহার অনুপযোগী এই ভবনটিতেই চলছে শ্রেণী কার্যক্রম। প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণী কার্যক্রমে সাধ্য থাকলেও ভবনের অভাবে সু-সজ্জিত রুম ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছেনা।
২০০৪ সালে খাগড়াছড়ি ফাউন্ডেশন কর্তৃক শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করা ছাড়াও এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্থানীয় ও বিভাগীয় পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পুরস্কার লাভ বিদ্যালয়টিকে আলোকিত করে তুলেছে।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন বলেন, বিদ্যালয়টির শিক্ষাদান পদ্ধতি এবং শিক্ষার উন্নয়নে প্রধান শিক্ষকের চিন্তা ও তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে শিক্ষকসহ স্থানীয় জনগণের অংশ গ্রহন বিদ্যালয়টির সাফল্যের মূল কারণ। মাটিরাঙ্গা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো জেলার প্রতিটি স্কুলে শিক্ষকরা আন্তরিকভাবে কাজ করলে পাহাড়ের প্রাথমিক শিক্ষার যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে।