জেএসএস-আ’লীগের সর্ম্পকের অবনতি: ৬ দিন ধরে দুই উপজেলায় নৌযান চলাচল বন্ধ

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি:

আওয়ামী লীগ ও জনসংহতি সমিতির সর্ম্পক অবনতিতে অশান্ত হয়ে উঠেছে পাহাড়। গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছে সাধারণ মানুষ। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন থেকে পদত্যাগ করেছেন প্রায় ৩ শতাধিক নেতাকর্মী। সব সদস্য পদত্যাগ করায় বিলুপ্ত হয়েছে জুরাছড়ি কৃষকলীগ কমিটি। এমন পরিস্থিতিতে গত ১১ ডিসেম্বর থেকে অ-ঘোষিত অবরোধ চলছে জেলার জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি উপজেলায়।

রাঙ্গামাটি নৌ যান মালিক সমিতির সভাপতি মঈন উদ্দিন সেলিম বলেন, গত ৬দিন ধরে আমরা বিলাইছড়ি ও জুরাছড়ি উপজেলার সাথে নৌ যান চলাচল বন্ধ রেখেছি। নিরাপত্তার অভাবে আমরা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি। সাধারণ মানুষজনও আসা যাওয়া করতে চাচ্ছেন না। যার কারণে আমাদের নৌ যান বন্ধ রাখা ছাড়া কোন উপায় ছিল না। এটির কবে সমাধান হবে তারও ঠিক নেই।

দুই উপজেলায় খবর নিয়ে জানা গেছে, আতঙ্কে আছে সাধারণ মানুষ। বেড়ে গেছে দ্রব্যমূল্যর দাম। টাকা দিয়েও মিলছে না নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী। এমন অবস্থায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন দুর্গম এলাকার মানুষ। হাটের দিনেও বাজারে আসতে পারছেন না তারা। একের পর এক জনপ্রতিনিধি গ্রেফতারের কারণে সাধারণ মানুষ ঘর থেকেও বের হওয়ার সাহস পাচ্ছেন না।

এ বিরোধ ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ছে অন্য উপজেলায়ও।  সৃষ্টি হচ্ছে আস্থার সংকট। প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষতা। দু’দলই রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। সমাধানের পথ নেই কারোর কাছে। বড় হচ্ছে সমস্যা। বাড়ছে জন দুর্ভোগ।

ঘটনার সূত্রপাত গত ৫ ডিসেম্বর জুরাছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অরবিন্দু চাকমাকে গুলি করে হত্যা এবং একই দিন একই সময়ে বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রাসেল মারমার উপর হামলার মধ্যে দিয়ে।

এ ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কাউকে দায়ী করা না হলেও জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেএ ঘটনার জন্য কখনও জনসংহতি সমিতি কখনও অবৈধ অস্ত্রধারীদের দায়ী করা হয়। আওয়ামী লীগ রাঙামাটি শহরে বিক্ষোভ- সমাবেশ করে। হরতাল পালিত হয়। বাঘাইছড়িতে জনসংহতি সমিতির  (জেএসএস) প্রধান সন্তু লারমার কুশপুত্তলিকা দাহ করে পৌর আওয়ামী লীগ। উপজেলায় সন্তু লারমাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে পৌর আওয়ামী লীগ।

বাঘাইছড়ির স্থানীয় সূত্র জানায় জুরাছড়ি ঘটনা নিয়ে পৌর আওয়ামী লীগের বাড়তি কর্মসূচির কারণে বাঘাইছড়িতে পাহাড়ি আওয়ামী লীগ করা নেতাদের কাল হয়েছে। এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়। এ কারণে আ’লীগ করা পাহাড়ি নেতাদের পদত্যাগ করতে হচ্ছে।

এর মাঝে ৭ ডিসেম্বর রাতে রাঙ্গামাটি শহরের বিজয় নগরের নিজ বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয় জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ঝর্ণা খীসা। এ ঘটনার জন্য জেএসএসকে দায়ী করে আওয়ামী লীগ। দোষীদের গ্রেফতারের দাবি উঠে। এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় পৃথক তিনটি মামলা হয়।

মামলার সূত্রমতে আসামিরা অধিকাংশ জনসংহতি সমিতির রাজনীতির সাথে জড়িত। মামলা সূত্র ধরে গ্রেফতার অভিযান শুরু করে নিরাপত্তা বাহিনী। গতকাল পর্যন্ত আটক হয় বিলাইছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান শুভ মঙ্গল চাকমাসহ ১৯ জন। এখনও অভিযান চলছে।  গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছে সাধারণ মানুষ।

রাঙামাটি শহরের গ্রেফতার আতঙ্কে আছেন ভেদভেদি, রাঙাপানি, বিজয় নগরের মানুষ।

ঝর্ণা খীসা মামলায় ইতিমধ্যে ৭জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদিকে বিলাইছড়ি ও জুরাছড়ি উপজেলায় গ্রেফতার আতঙ্কে সাধারণ মানুষ।

এ অবস্থায় পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে আ’লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর। জুরাছড়ি উপজেলা থেকে ইতিমধ্যে ৩০৯জন পদত্যাগ করেছেন। বাঘাইছড়ি থেকে পদত্যাগ করেছে ৫৩জন। বিলাইছড়ি থেকে পদত্যাগের খবর পাওয়া যায়নি।

পদত্যাগকৃতরা সবাই পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কারণ বলেছেন।  তবে জেলা আ’লীগ বলেছে তাদের পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে।

জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মুছা মাতব্বর বলেন বিভিন্ন উপজেলায় আ’লীগ এর উপজাতি নেতা-কর্মীদের মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে দল থেকে পদত্যাগের জন্য চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এ ধরণের চাপের মুখে যদি কোনো নেতা-কর্মীকে পদত্যাগের জন্য বাধ্য করে, তাহলে রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগ এর কাছে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।

এদিকে গ্রেফতার বিষয়ে জেএসএস এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে জেএসএস নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিথ্যা ও হয়রানী মূলক মামলা করা হয়েছে। সেনা ও পুলিশ গভীর রাতে তিনটি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে তল্লাশী অভিযান নামে নিরীহ গ্রামবাসীদের ঘুম থেকে জাগিয়ে মারধর ও গ্রেফতার করছে। আওয়ামী লীগ-সেনা পুলিশ যোগসাজশে সংঘটিত ঘটনায় জেএসএসকে জড়িতকরার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। জেএসএসের চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনের নেতৃত্ব কোনঠাসা করতে এ ষড়যন্ত্র বলেছে জেএসএস।

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া হত্যা ও হামলার ধরণ দেখে রাঙ্গামাটির পুলিশ বলেছে, এসব হত্যা ও হামলার একটির সাথে অন্যটির যোগসূত্র নেই।  ঘটনা সবগুলো এক একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। প্রত্যকটি ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে।

রাঙ্গামাটি পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান বলেন, প্রত্যকটি ঘটনা পুলিশ গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছে। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশের পক্ষ থেকে যা যা করণীয় পুলিশ তা করবে। সে হিসেবে পুলিশ তার তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আসামিদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা তাদের জিজ্ঞিাসাবাদ করছে। নিরীহ কাউকে হয়রানী করা হবে না। কিন্তু সাধারণ মানুষ এ আশ্বাসে ভরসা পাচ্ছে না।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন