টানা বর্ষণে কাপ্তাই হ্রদের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে ধানক্ষেত

18.05.13

আলমগীর মানিক, রাঙামাটি

কয়েকদিনের টানা বর্ষণে তলিয়ে যাচ্ছে কাপ্তাই হ্রদের জলে ভাসা জমিতে রোপিত বিপুল পরিমাণ ধানক্ষেত। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার লংগদু, বরকল, বাঘাইছড়ি উপজেলার কয়েক হাজার কৃষক।

এবছর সময়মত কাপ্তাই হ্রদের পানি না কমায় অনেক জমিই এমনিতে ফেলে রাখতে হয়েছে। আবার ফাল্গুন ও চৈত্র মাসের তীব্র খরার কারণে লাগানো ধান ক্ষেত তাপদাহে পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। ধানের চারা বেড়ে উঠতেই পারেনি। এর মধ্যে বৈশাখ মাস এসে অসময়ে প্রবল বর্ষণ ও প্রচণ্ড বাতাসে ধানের ফুল ঝড়ে যায়। তাছাড়াও সম্প্রতি বয়ে যাওয়া প্রবল ঝড় ও বর্ষণে অনেক জমির ধান ক্ষেতে ভেঙ্গে বিছিয়ে পড়ে যায়।

পাহাড়ি ঢলে অনেক চাষীর লাগানো ধানক্ষেত মাটির সাথে মিশে যায়। এরই মধ্যে হঠাৎ কাপ্তাই হ্রদের পানি বাড়তে শুরু করায় চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছে জলেভাসা জমির কয়েক হাজার চাষী। যেকোন মুহর্তে নদীর পানিতে বিলীন হয়ে যেতে পারে তাদের সোনালী ধান ক্ষেত।

বরকল ও লংগদু’র কয়েকজন চাষী বলেন, কাপ্তাই হ্রদের পানি না কমাতে সব জমিতে ধান লাগাতে পারিনি তার পরেও অল্প কিছু  জমিতে এ বছর ধান লাগিয়েছি। গত বছর এই পরিমাণ ধানক্ষেত থেকে ছয় মাসের ধান-চাল তুলেছি। এবছর আমার ধানক্ষেতের তিন ভাগের ২ ভাগ ইতোমধ্যে হ্রদের পানিতে ডুবে গেছে।

কপালে হাত দিয়ে কৃষকরা তাদের ভাগ্যকে দোষারোপ করলেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্ষেতে ধান প্রায় পাক ধরেছে। পাক ধরা ধানক্ষেতের বেশির ভাগই ইতোমধ্যে হ্রদের পানিতে বিলীন হয়ে গেছে। পানির নীচে সোনালী রঙের ধানের শীষ একটু একটু দেখা যায়। বাকি ধানক্ষেত ও যেকোনো সময় পানির নীচে তলিয়ে যেতে পারে।
 
লংগদু উপজেলার ঘনমোড় গ্রামের মিগকান্ত চাকমা, পাকধরা ধানক্ষেত পাহাড়ি ঢলে শেষ হয়ে গেছে। প্রবল বর্ষণে পাহাড়ি ঢল নামায় তার ধানক্ষেত মাটির সাথে মিশে গেছে। মিগকান্ত চাকমা জানান বাজার থেকে হাইব্রিড হীরাধান ৫ কেজি কিনে এবছর লাগিয়েছেন। গত বছর এ ধানক্ষেতের উৎপাদিত খাদ্য শস্য থেকে পুরো বছরই চলে যায়, ধানচালের চিন্তা করতে হয়নি। এবছর ধানক্ষেত পুরো মাটির সাথে মিশে গেছে। ধানক্ষেত থেকে একশীষ ধান তুলবো এ অবস্থাও নাই।

সুবলং বাজারের কাছাকাছি জায়গায় ধান লাগিয়েছেন প্রজাপতি চাকমা ও সুদর্শন চাকমা। আশা ছিল এ বছর কম করে হলেও ছয় মাসের খোরাকী জোগাড় করতে পারবে জমি থেকে। কিন্তু ফাল্গুন- চৈত্র মাসের তীব্র খরায় ধান ক্ষেতে অর্ধেকই প্রায় মরে যাবার উপক্রম হয়। বৈশাখ মাস এসে কিছু বৃষ্টিপাত হলে ক্ষেতের ফসলে পরিবর্তন আসে। কিন্তু হঠাৎ প্রবল ঝড়ে ধানের চারায় যে, রেনু এসেছিল সেগুলো ঝরে গেছে। ধানের চারায় শীষ আসতে পারেনি বলে জানান তারা।

ধানক্ষেত পুরোপুরি চিটা হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। এছাড়া কাপ্তাই হ্রদের পানির হাত থেকে তাদের ক্ষেতও রক্ষা পাইনি  বলে জানান কৃষকরা। কয়েকদিন যদি এভাবে পানি বাড়তে থাকে তাহলে জলেভাসা জমির সব ধানক্ষেত পানির নীচে তলিয়ে যাবে বলে জানান এসব কৃষক।

তারা আরো জানান কোন সরকারি কর্মকর্তা বা এলাকার জনপ্রতিনিধি তাদের সুখ-দুঃখের খবর নেননি। কৃষি বিভাগের কোন কর্মকর্তা কর্মচারী তাদের দুরাবস্থার খবর নিতে তাদের এলাকায় যাননি বলে জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। তাছাড়া জনপ্রতিনিধিরাও এ ব্যাপারে উদাসীন বলে অভিযোগ করেন তারা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন