টেকনাফে ধরা ছোয়ার বাইরে রয়েছে ইয়াবা ব্যবসায়ী রাঘব-বোয়ালরা

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

টেকনাফে ইয়াবা ব্যবসা সয়লাব হয়ে পড়েছে। ধরা ছোয়ার বাইরে রয়েছে ইয়াবা ব্যবসায়ী রাঘব-বোয়ালরা। আর পুলিশসহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের হাতে গ্রেফতার হচ্ছে ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা। ফলে কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না এই ব্যবসার প্রসারতা। অধীক লাভজনক এবং বহনে সহজতর হওয়ায় দিন দিন নতুন নতুন যুবক-যুবতী ঝুঁকে পড়ছে এই ইয়াবা ব্যবসায়।

বিভিন্ন দপ্তরে দেয়া অভিযোগ অনুসন্ধানে জানা যায়, স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা সাবেক মেম্বার ইয়াবা মামলায় জেল ফেরত আলোচিত হামজালালসহ একটি সংঘবদ্ধ চক্র উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় ইয়াবা ব্যবসার নেটওয়ার্ক স্থাপন করে গোপনে চালিয়ে যাচ্ছে এই ব্যবসা। ফলে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ এলাকার বেকার তরুন-যুবকরা সহজলভ্যতার কারণে ইয়াবা সেবনে আসক্ত হয়ে পড়ছে।

একাধিক সূত্রে জানা যায়, ক্ষমতাসীনদলের কতিপয় নেতা ও স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এসব ব্যবসা চালানো হয়। অথচ এই হামজালাল একজন শীর্ষ ইয়াবা মাফিয়া এবং টেকনাফ সদরের নাজিরপাড়ার আজিজুল হক মার্কিন হত্যাসহ তিনটি খুনের মামলার পলাতক আসামি হামজালাল পুলিশের জালে আটকা পড়েছিল। ২০১৬ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় দুই হাজার পিচ ইয়াবাসহ চট্টগ্রামের চুনতি থেকে লোহাগাড়া থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। এরপর লোহাগাড়া থানা পুলিশ তাকে টেকনাফ থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। টেকনাফ থানা পুলিশ ১৮ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কুখ্যাত হামজালালের রিমান্ড আবেদন করেন। আদালত আবেদন আমলে নিয়ে হামজালালের দু’দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন। টেকনাফ থানা পুলিশ ওই সময় দুদিন রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদে তার থেকে ব্যাপক তথ্য উৎঘাটন করা হয় এবং মার্কিন হত্যা সত্যতা স্বীকার করেন।

হামজালাল তৎকালিন টেকনাফ সদর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভূক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী। তার রয়েছে আলোচিত হত্যাসহ চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানা মামলা নাম্বার ১৬/জিআর ৫৪/তা: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ মাদকসহ আটক। ডিএমপি তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা মামলা নাম্বার ৩৭/জিআর ৩১৬/তা: ২৫ আগস্ট ১৭। মাদক মামলার আসামি। টেকনাফ থানা মামলা নাম্বার ৩৫/জিআর ৫৯১/তা: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ হত্যা মামলা। টেকনাফ থানা মামলা নাম্বার ৩৭/জিআর ২২৪/৩১ জুলাই ২০০৮। টেকনাফ থানা মামলা নাম্বার ১৪/জিআর ১২৮/তা: ৩১ আগস্ট ০৫ সাল এসিড মামলা। টেকনাফ থানা মামলা নাম্বার ১১/জিআর ৫৬/তা: ২৫ এপ্রিল ২০০৫ সাল।

এই হামজালাল তৎসময়ে ইউপি সদস্য ও সরকার দলীয় নেতা পরিচয়ের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা পাচার করে আসছেন। তার ভাই বাহাদুরসহ একটি বিশাল সিন্ডিকেট নিয়ে ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা ইয়াবা পাচার করে আসছেন।

ইয়াবা পাচার করে হামজালাল অঢেল টাকার মালিক হয়েছেন। কালো টাকা দিয়ে তিনি কিনেছেন অন্তত ১০টি নোহা গাড়ি। এসব নোহা দিয়ে ইয়াবা পাচার করা হয় বলে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।

শুধু ইয়াবা পাচার নয়, হত্যা, ভূমিদস্যুতা, চাঁদাবাজি, জবর-দখলসহ আরও অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগে রয়েছে বেশ কয়েকটি মামলাও। হামজালালের ভূমিদস্যুতায় বাধা দেয়ায় ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর দিন দুপুরে আজিজুল হক মার্কিনকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডে তার বোনজামাই ছিদ্দিক, ভাগিনা ফরিদ আলম, রবিউল আলমসহ আরও চিহ্নিত কয়েকজন দুর্বৃত্ত অংশ নেয়। এর আগে হামজালালের বিরুদ্ধে শুক্কুর ও আবুল হোসেন নামে আরও দু’জনকে হত্যার অভিযোগে মামলা হয়। সর্বশেষ মার্কিন হত্যার পর পলাতক জীবন কাটাচ্ছিলেন হামজালাল। পরে ইয়াবা নিয়ে আটক হয়ে প্রায় ১ বছর কারাবরণ শেষে কালোটাকায় জামিন নিয়ে বেরিয়ে এসে কয়েকমাস আত্বগোপনে ছিলেন। এরপর সুযোগ বুঝে প্রশাসন ও ক্ষমতাসীনদলের কয়েকজন নেতাকে ম্যানেজ করে আবারও প্রকাশ্য হয় এই হামজালাল। সম্প্রতি মাদকবিরোধী অভিযোনেও পার পেয়ে যায় তিনি। সাধারণ জনগণের প্রশ্ন ? এত মামলা ও শীর্ষ তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী হওয়া সত্বেও কেন পার পেয়ে যায় কুখ্যাত এই হামজালাল।

বর্তমানে আবারো জড়িয়ে পড়ে এই মরননেশা ইয়াবা ব্যবসায়। যুক্ত করে তার ভাই-ছেলে-বোন জামাইসহ আত্বীয়-স্বজনকে।

পুলিশের সাথে যখন লেনদেনে সমস্যা দেখা দেয় তখন শুরু হয় লোক দেখানো অভিযান ও ধড়পাকড়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নোহা চালক জানিয়েছে এসব তথ্য। তারা আরো জানান, হামজালাল প্রভাবশালী ও নোহা মালিক হওয়ার সুবাদে অনেক চালককে কৌশলে এই ব্যবসায় নিয়োগ দিয়েছেন। অনেক নোহা চালক ও কর্মচারীকে পুলিশ আটক করলেও রহস্যজনক কারণে হামজালাল রয়ে গেছেন ধরা ছোয়ার বাইরে। এছাড়াও এই ব্যবসায় জড়িত রয়েছেন স্থানীয় অনেক প্রভাবশালী লোক।

তবুও বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ ইয়াবা ব্যবসা। বিপথগামী হচ্ছে ভদ্র ঘরের স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলে মেয়েরা। এলাকাবাসীর অভিমত, একাধিক মামলার আসামি থাকার পরও আলোচিত হামজালাল অনেকটা প্রকাশ্যে চালিয়ে যাচ্ছে তার ইয়াবা ব্যবসা। আলোচিত এই হামজালালকে গ্রেফতার করতে বর্তমান মাদকবিরোধী অভিযানের অভিমূখিদল র‌্যাব, পুলিশ, মাদবদ্রব্য অধিপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বাহিনীর প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন ভুক্তভোগি পরিবার ও সচেতন জনসাধারণ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন