টেকনাফ স্থলবন্দরে তিনদিন ধরে পণ্য ওঠা-নামা বন্ধ: শ্রমিক সঙ্কট
টেকনাফ প্রতিনিধি:
শ্রমিক সঙ্কটের কারণে গত তিন দিন ধরে টেকনাফ স্থল বন্দরে পণ্য ওঠা-নামা বন্ধ রয়েছে। আমদানী ও রপ্তানীকারক ব্যবসায়ীরা ক্ষতির পাশাপাশি সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। বিশেষ করে পচনশীল দ্রব্যেও প্রচুর ক্ষতিসাধন হচ্ছে। রোহিঙ্গা শ্রমিক না আসায় এ সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।
রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) টেকনাফ স্থল বন্দরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত প্রচুর কাঠ, আদা, মাছ বন্দরে স্তুপ হয়ে আছে। বিশেষ করে আদা পঁচে গিয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। তবে প্রায় ৫০জনের মতো শ্রমিক কাজ করতে দেখা গেছে।
সূত্রে জানা গেছে, টেকনাফ স্থল বন্দরে প্রায় ৪’শত মতো শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করে থাকে। এর মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ রোহিঙ্গা শ্রমিক। বন্দরটি এক কথায় রোহিঙ্গা শ্রমিক নির্ভর হয়ে চলে। শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) থেকে রোহিঙ্গা শ্রমিক কাজ করতে না আসায় বন্দরের মালামাল উঠানামার কাজ প্রায়ই স্থবির হয়ে পড়ে। মিয়ানমার থেকে আসা মালবাহী প্রায় ১৫ থেকে ২০টি ট্রলার নোঙ্গর করে আছে। তবে চারশত শ্রমিকের মধ্যে স্থানীয় প্রায় ৫০জনের মতো শ্রমিক মালামাল লোড আনলোড করছে।
স্থানীয় শ্রমিকরা জানান, দেশীয় শ্রমিকদের ন্যায্য মূল্য না দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা শ্রমিক দিয়ে স্বল্প মজুরিতে বন্দরে কাজ করানো হচ্ছে। ফলে বন্দরের শ্রমবাজার রোহিঙ্গাদের দখলে চলে গেছে। ফলে স্থানীয় শ্রমিকের বঞ্চিত হচ্ছে।
টেকনাফ স্থল বন্দরের কাস্টম সুপার জাহাঙ্গীর আলম জানান, গত জানুয়ারি মাসে টেকনাফ-মংডু সীমান্ত বাণিজ্যে ১৪ কোটি ৮৩ লাখ ৯৮ হাজার টাকার রাজস্ব আয় হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক জানুয়ারি মাসে ৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ছিল। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ কোটি ২১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা অতিরিক্ত। চলতি ফেব্রুয়ারি মাসে ৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ রয়েছে। জানুয়ারি মাসে মিয়ানমার থেকে পণ্য আমদানি বেশি হওয়ায় টার্গেটের দ্বিগুণ রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হয়েছে। চলতি মাসে স্থবিরতা না থাকলে রাজস্ব আদায় দ্বিগুন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশেষ করে টেকনাফ স্থল বন্দরে মিয়ানমার থেকে প্রতিদিন চাল, কাঠ, মাছ, বেত, আচার, বরই ও তেতুলসহ বিভিন্ন প্রকার পন্যাদী আমদানি হয়ে থাকে এবং এ বন্দর দিয়ে রড, সিমেন্ট, চুল, ষাড়ের ফেনিক্স, কচ্চপ খোলস, প্লাস্টিক, এ্যালমোনিয়া ও ইলেক্টনিক্স ইত্যাদি রপ্তানি হয়।
এ প্রসঙ্গে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সাংসদ অধ্যাপক মো. আলী বলেন, বন্দরে শ্রমবাজার রোহিঙ্গাদের দখলে চলে গেছে। ফলে স্থানীয়রা বন্দরের শ্রমিক কাজ থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়েছে। এব্যাপারে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলেও মনে করেন তিনি।
টেকনাফ স্থল বন্দরের সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর জানান, বন্দর কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে শ্রমিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা বিপুল অঙ্কের ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
টেকনাফ স্থল বন্দরের ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন জানান, অন্যান্য দিনের চেয়ে গত তিনদিন শ্রমিক কম এসেছে, কি কারণে এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রোহিঙ্গা শ্রমিক দিয়ে বন্দরে কাজ করানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।