ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে ভেসে গেছে ২০ লক্ষাধিক টাকার লবণ

chakaria pic, 13-2-17,,

চকরিয়া প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের চকরিয়ায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের চরম গাফিলতির কারনে বেড়িবাঁধের স্লু ইচ গেইট ভেঙ্গে জোয়ারের পানি ঢুকে ভেসে গেছে স্থানীয় বদলাখালী ও দরবেশকাটা এলাকার লম্বাখালী ঘোনাসহ আশপাশ এলাকার বিপুল পরিমাণ লবণ মাঠ। এতে ওই এলাকার শতাধিক চাষীর প্রায় ২০ লাখ টাকার বেশি ক্ষতিসাধন হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মৌসুমের মাঝপথে এসে মাঠে উৎপাদিত লবণ ও চাষের ক্ষেত্র নষ্ট হওয়ায় বর্তমানে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভুক্তভোগী চাষীরা। উপজেলার পশ্চিম বড়ভেওলা ইউনিয়নের দরবেশকাটা এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটেছে।

পশ্চিম বড়ভেওলা ইউপি চেয়ারম্যান ও মাতামুহুরী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নির্মাণ কাজের স্থলে উপস্থিত না থাকার কারনে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন শুরু থেকে নির্মাণ কাজে নানা ধরনের অনিয়ম করছেন। বিশেষ করে স্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটার সময় স্লুইচ গেইটটি ভেঙ্গে গেলেও স্থানীয় চাষী কিংবা এলাকার জনপ্রতিনিধি অথবা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের না জানিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। এ অবস্থার ফলে তাদের ভুলের মাশুল দিতে হচ্ছে এখন এলাকার পান্তিক লবণ চাষীদের। তিনি বলেন, বিষয়টি লিখিতভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো জন্য পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্থ চাষীরা এ ঘটনার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের ইউনুছ এন্ড ব্রার্দাসকে অভিযুক্ত করেছেন। ক্ষতিগ্রস্থ চাষীরা সহসা স্লুইচ গেইটটি মেরামত পুর্বক লবণের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে প্রশাসনের কাছে জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

অভিযোগে স্থানীয় লবণ চাষী মোহাম্মদ এখলাছ, মোহাম্মদ কায়কোবাদ, মনছুর আলম, নাজেম উদ্দিন, গিয়াস উদ্দিন, সাহাব উদ্দিন, আবদুল করিম, জকরিয়া, মোহাম্মদ ছাদেক, বাদশা মিয়া, নাজু মাঝি, আবদুর রহমান, ছলিমউদ্দিন, নুরুল আমিন, ছলিম বাদশা, আবছার মেস্ত্রী, গিয়াস উদ্দিন বদ, নাছির উদ্দিন, কবির আহমদ, মনির উল্লাহ ও মোক্তার আহমদসহ উপস্থিত শতাধিক চাষী দাবি করেছেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন বেড়িবাঁধের নির্মাণ কাজের সময় এস্কেভেটর গাড়ি দিয়ে মাটি কাটতে গেলে একটি স্লুইচ ভেঙ্গে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এরপর রাতের বেলায় বেড়িবাঁধের ওপারে নদীতে জোয়ার আসলে পানির প্রবল চাপে স্লুইচ গেইটের ক্ষতিগ্রস্থ অংশটি বড় আকারে ফাটলের সৃষ্টি হয়ে অনায়শে পানি ঢুকে পড়ে এপারের লবণ মাঠ তলিয়ে যায়।

এদিকে ক্ষতিগ্রস্থ লবণ মাঠ লম্বাখালী ঘোনার পরিচালক ও ফোয়াব কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মো.শহিদুল ইসলাম বলেন, উপজেলার পশ্চিমবড় ভেওলা ইউনিয়নের দরবেশকাটা গ্রামের অদুরে ৩৫৩ একর আয়তনের লম্বাখালী ঘোনায় চলতি মৌসুমে প্রায় ৩৬০জন চাষী লবণ চাষ করছেন। এছাড়াও পাশের বিপুল পরিমাণ জমিতে এলাকার আরো ৬শতাধিক চাষী জমি বর্গা নিয়ে লবণ চাষে রয়েছেন। তিনি বলেন, মৌসুমের মাঝপথে এসে উৎপাদনের এ সময়ে বেড়িবাঁধের স্লুইচ গেইটটি ভেঙ্গে নদীর পানি ঢুকে পড়ার কারনে বেশির ভাগ লবণ মাঠ তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে চাষীদের প্রায় সাত হাজার মণ উৎপাদিত লবণ। বর্তমানে বাজারে প্রতিমণ লবণ ২৮০ টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছে। সেই হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে চাষীদের প্রায় ২০ লাখ টাকার বেশি ক্ষতিসাধন হয়েছে।

জানতে চাইলে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন, চকরিয়া উপকুলীয় অঞ্চলের চিংড়িজোন ও লবণ চাষ নিশ্চিত করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের নির্দেশে পানি উন্নয়ন বোর্ড তিনটি প্যাকেজের আওতায় সেখানে প্রায় ১১ কিলোমিটার আয়তনের বেড়িবাঁধ সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজ শেষ হলে সুফল পাবে ওই এলাকার মৎস্য ও লবণ চাষীরা। তিনি বলেন, নির্মাণ কাজে হয়তো ভুলের কারনে ছোট-খাটো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। স্লুইট গেইট ভেঙ্গে যাওয়ার ঘটনাটি তেমন একটি দুর্ঘটনা। তারপরও ক্ষতিগ্রস্থ স্লুইচ গেইটটি মেরামত করে দেয়ার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন