ডাক্তারদের সরকারীভাবে চিকিৎসা সেবা দিতে চরম অবহেলা ॥ পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ্যাম্বুলেন্স ১ বছর ধরে গ্যারেজবন্দী

pic pekua hospilal ambolans

এ.এম.জুবাইদ চৌধুরী, পেকুয়া:
পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ্যাম্বুলেন্স দীর্ঘ ১ বছর ধরে অচল অবস্থায় গ্যারেজবন্দি করা হয়েছে। ফলে মুমুষূ রোগীদের কে চট্টগ্রাম কিংবা কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোন গাড়ী না পেয়ে পথিমধ্যে লোকজন মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার গাড়ী অচল হাওয়ার কারণে বসে বসে বেতন খাচ্ছে। জানা যায়, বিগত ২০০৮ সালে পেকুয়া ২০ শয্যা হাসপাতাল কে রাজস্বখাতে উন্নীত করে ৩১ শয্যা হাসপাতাল করা হলেও এখনও পর্যন্ত চিকিৎসা সেবার মান বেড়েনি। টি এইচ ও হাসপাতালে থাকেন না তিনি আসেন সপ্তাহে ২ দিন তাও ১২ টা আসেন ১ টায় চলে যান। অনেক সময় হাসপাতালে ডাক্তার না থাকায় দুর দুরান্ত থেকে আসা রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে বাড়িতে ফিরে যাচ্ছে।

বর্তমানে হাসপাতালে ১১ জন ডাক্তার থাকলেও ছুটির দিনে ডাক্তার শূন্য থাকে অনেক সময়। প্রতিদিন অনেক মুমুষূ রোগীরা চমেক হাসপাতাল কিংবা চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়ার জন্য হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্সটি ছাড়া আর বাহির কোন এ্যাম্বুলেন্স না থাকায় হয়রানির শিকার হচ্ছে।  হাসপাতালটি প্রতিষ্টার পর থেকে প্রকল্পের অধিনে ৩ জন ডাক্তার, একজন অফিস সহকারী, একজন টাইপিষ্ট, নাস, আয়া, পিয়ন, কুকু, ষ্টোর কিপার সহ মোট ১২ জন কর্মচারী নিয়োগ দেয় প্রকল্প পরিচালক। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পেকুয়া হাসপাতাল কে রাজস্ব খাতে নিয়ে যায়। ফলে ১ একজন টি এইচ ও, ৩ জন মেডিকেল অফিসার ৩ জন মেডিকেল সহকারী, একজন পিয়ন দেয়। ফলে প্রকল্প ও রাজস্ব দুইটি মিলে পেকুয়া হাসপাতালের চিকিৎসার মান এতই নিম্নে চলে গেছে বলার মত নয়। রোষ্টার অনুযারী জরুরুী বিভাগে ২৪ ঘন্টা এম বি বি এস ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও তা রোষ্টারে থেকে যায়। কিন্তু কাজে কেউ থাকে না। সব সময় জরুরী বিভাগে মেডিকেল সহকারীরা রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ কোন মারত্মক রোগী আসলে ডাক্তারদের নিজস্ব প্রাইভেট চেম্বার থেকে ফোন করে অথবা মটরসাইকেল করে আনতে যেতে হয়। সবসময় ডাক্তাররা প্রাইভেট চেম্বার নিয়ে ব্যস্ত থাকে।

ডাক্তার নুরুল আলম হাসপাতালের ডক্টর কোয়াটার কে মিনি ক্লিনিকে পরিণত করছে। প্রতিনিয়ত রোগী ভর্তি করে একরাত এক হাজার থেকে হাতিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি প্রাইভেট রোগী দেখার জন্য অফিস সময় অফিসে আসে না। অনেক সময় অফিসও করেনা।  এদিকে আবাসিক মেডিকেল অফিসার মজিবুর রহমান অফিস আসে ১২ টায় চলে যায় ১ টায়। তিনি তার বাসভবন কে মিনি হাসপাতালে পরিণত করেছে। অপর সদ্যযোগদানকারী মেডিকেল অফিসার পেকুয়ার সন্তান তাওছীফ শরিফ জরুরী বিভাগে ডিউটি থাকলেও সে ডিউটি করে না। হাসপাতালে রোগী আসলে তাহাকে ফোন করতে হয় এবং মটর সাইকেল করে আনতে যেতে হয়।

তিনি পেকুয়া বাজারের পূর্ব পাশ্বে ডা: মুজিবুর রহমানের বাসভবনের পার্শ্বে প্রাইভেট চেম্বার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেছে। ফলে পেকুয়া হাসপাতালে চিকিৎসা ভেস্তে যাচ্ছে। এদিকে টি এইচওর বিরুদ্ধে রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে। টি এইচ ও কে ম্যানেজ করে হাসপাতালে জায়গায় হাসপাতালে কর্মরত কুক নেজাম ধানক্ষেত ও শাক-সবজি চাষ করে অনেক টাকা আয় করে যাচ্ছে। ফলে এসব ক্ষেতে হাসপাতালে মটর দিয়ে পানি সেচ দেয়। এসব ক্ষেত করতে সরকারী মটর ও বিদ্যুৎ ব্যবহার করে হাসপাতালের খরচে এসব অবৈধ খরচ লিপিবদ্ধ করে। ধানক্ষেত ও শাক সবজিক্ষেতে পানি সেচ দিতে দিতে মটরও নষ্ট করে ফেলে এই কর্মচারী। তারপরও ওই কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। কুক নেজাম দীর্ঘ দিন ধরে হাসপাতালের রোর্গীদের কে নিম্ন মানের খাবার পরি্েবশন করে অনেক টাকার মালিক হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে হাসপাতালের কর্মরত ষ্টাফদের ছেলেমেয়েদের খেলাধুলার জায়গাটি দখল করে এ ধরণের ধানক্ষেত করে যাচ্ছে। ফলে সরকারের হাজার হাজার টাকা রাজস্ব ফাকি দিয়ে যাচ্ছে এ কর্মকর্তা। কুক নেজাম থেকে এ জায়গা ব্যবহারের বিনিময়ে দুপুরে খাবার খাওয়াতে হয়। খাবারের বিনিময়ে হাসপাতালের গাছ কেটে সে বিক্রয় করেও হাজার হাজার টাকা আয় করছে। তারপর ও টি এইচও পূণ্য বর্ধন বড়ুয়া চোখে দেখলেও না দেখার ভান করে যাচ্ছে।

দীর্ঘ দিন ধরে জেনারেটর চালু নেই। ফলে বিদুৎ না থাকলে হাসপাতাল পুরো অন্ধকার হয় যায়।  টি এইচও বিরুদ্ধে আরো দুণীতির অভিযোগ রয়েছে গাভী প্রকল্পের টাকা অফিস সহকারী নেজাম ও টি এইচও কর্মচারীদের জাল স্বাক্ষর করে টাকা উত্তোলন করে এবং তা তিন ভাগে ভাগ করে নিয়ে নেন। এ ব্যাপারে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প:প:কর্মকর্তা ডাঃ পূর্ণবর্ধন বড়ূয়া জানান, বর্তমানে এ্যাম্বলেন্সটি ডিজেল চালিত হওয়ায় চট্টগ্রামে আসা ও যাওয়ায় যাতায়াত খরচ দুই থেকে তিন হাজার টাকা দরকার। এতটাকা রোগীরা দিতে চায়না। তাছাড়া সরকারীভাবে তেল খরচের কোন বাজেট নেই।

দীর্ঘদিন গাড়ীটি অচল থাকায় গাড়ীর যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যায়। তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য হাসিনা আহমদের পক্ষ থেকে গাড়ীটি গ্যাসচালিত করার জন্য অনুদান দেয়া হয়েছে বলে জানা যায়। তিনি নিয়মিত অফিস করেন না জানতে চাওয়া হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। হাসপাতালের জায়গায় ধানক্ষেতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এটা জানেন না বলে জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন