রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

তালিকাভূক্তদের প্রত্যাবাসন বিরোধী বিক্ষোভ : আশাবাদী কমিশন

প্রত্যাবাসনের আগে বিক্ষোভ করেছে তালিকায় আসা রোহিঙ্গারা। ফলে প্রত্যাবাসন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে আশাবাদী রয়েছেন শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার।

নাগরিকত্ব প্রদান, ভিটে-বাড়ি ও জমি-জমা ফেরত, আকিয়াব জেলায় আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের নিজ বাড়ীতে ফেরত, কারাগারে বন্ধি রোহিঙ্গাদের মুক্তি, হত্যা, ধর্ষনের বিচার, অবাধ চলাফেরা, নিরাপত্তা প্রদানসহ একাধিক শর্ত পূরণ না হলে স্বদেশ ফিরবে না রোহিঙ্গারা, দাবী তাদের।

অনেকটা শংকার বেড়াজালের মধ্যেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। রোহিঙ্গাদের ঘরে ঘরে ইউএনএইচসিআর’র লোকজন গিয়ে জানিয়ে দিচ্ছে ২২ আগস্ট স্বদেশে ফিরে যাওয়ার বার্তা। এসময় কয়েকটি শর্ত জুড়ে দিচ্ছে রোহিঙ্গারা। শর্ত পূরণ না হলে ফিরবে না। এসব শর্ত মেনে নিলেই স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরবে তারা। নয়তো এদেশে প্রাণ দেবে, তবু ফিরবে না- এমন বক্তব্য তাদের।

শর্তের মধ্যে নাগরিকত্ব প্রদান, ভিটে-বাড়ি ও জমি-জমা ফেরত, আকিয়াব জেলায় আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের নিজ বাড়ীতে ফেরত, কারাগারে বন্দী রোহিঙ্গাদের মুক্তি, হত্যা, ধর্ষণের বিচার, অবাধ চলাফেরা, নিরাপত্তা প্রদানসহ প্রভৃতি শর্ত রয়েছে।

এদিকে প্রত্যাবাসনের তালিকায় থাকা কয়েকজনসহ ৫০ থেকে ৬০ জন রোহিঙ্গা মঙ্গলবার বিকাল ৩ টারদিকে ২৬ নং ক্যাম্পের সিআইসি (ক্যাম্প ইনচার্জ) অফিসের সামনে বিক্ষোভ করেছে। এসময় নিজেদের দাবী তুলে ধরে বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ বিক্ষোভ করেন রোহিঙ্গারা।

২০ আগস্ট মঙ্গলবার সকাল থেকে টেকনাফের নয়াপাড়া শালবন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে (নং-২৬) প্রত্যাবাসনের জন্য তালিকাভূক্ত রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে প্রশাসনের ধারণা, ক্যাম্পে সক্রিয় কতিপয় এনজিও প্রত্যাবাসন বিরোধী উস্কানী দিচ্ছে।

এসময় রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতংক বিরাজ করতে দেখা যায়। অনেক পরিবারের প্রধান সরে গিয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছে। ঘরের দরজা বন্ধ করে রেখেছে মহিলারা। আইনশৃংখলা বাহিনী ও মিডিয়াকর্মীদের আনাগোনা লক্ষনীয়।

প্রত্যাবাসনের জন্য তালিকায় আসা মিয়ানমারের বুচিডং চাংচিপ্রাং এলাকার ও বর্তমানে শালবন ক্যাম্পের এ-ব্লকে বসবাসকারি মোঃ জুবাইরের সাথে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। এসময় তিনি জানান, ইউএনএইচসিআর’র একটি প্রতিনিধি দল সকালে এসে পারিবারিক ডাটা কার্ড খুঁজে। প্রত্যাবাসনের বিষয়ে কিছু জানায়নি। পরে জানতে পারি প্রত্যাবাসনের তালিকায় আমার নাম রয়েছে।

স্বদেশ ফিরবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি কয়েকটি শর্ত জুড়ে দিয়ে বলেন, নিজের দেশে ফিরতে ব্যাকুল হয়ে আছি। নাগরিকত্ব, ভিটে-বাড়ি ও জমি-জমা ফেরত, অবাধ চলাফেরা ও নিরাপত্তা দিলেই ফিরব। এভাবে গেলে মরণ নিশ্চিত। এরচেয়ে এদেশে মৃত্যুই ভাল হবে।

তালিকায় আসা হাসিনা বেগম বলেন, স্বামী-সন্তানদের নিরাপত্তা কে দিবে? ওখানে গিয়ে আশ্রয় শিবিরে রাখবে। অবাধ চলাফেরা করা যাবেনা। রোহিঙ্গা স্বীকৃতি দেবেনা। তবে কি নিয়ে আমরা স্বদেশে ফিরব।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে এগিয়ে নিতে ইউএনএইচসিআর ও সরকারের পক্ষ থেকে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে রোহিঙ্গাদের কাছে লিফলেট বিতরণ করেছে। লিফলেটে স্বদেশ ফিরে গিয়ে কোথায়, কিভাবে রাখা হবে এবং পরবর্তীতে কি কি করণীয় সে সম্পর্কে ধারণা রয়েছে।

টেকনাফ নয়াপাড়া শালবাগান ক্যাম্পের (নং- ২৬) ইনচার্জ মোঃ খালিদ হোসেন জানান, প্রত্যাবাসনের তালিকায় আসা ২১ পরিবারের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকিদেরও নেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার প্রত্যাবাসনের জন্য সবকিছু প্রস্তুত রয়েছে। তিনি রোহিঙ্গাদের বিক্ষোভের কথা অস্বীকার করেন।

কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম জানান, প্রত্যাবাসন কার্যক্রমের জন্য সকল প্রস্তুতি রয়েছে। আমরা আশাবাদী ২২ আগস্ট প্রত্যাবাসন হবে। পাশাপাশি সকাল থেকে ইউএনএইচসিআর’র লোকজন তালিকাভূক্ত রোহিঙ্গাদের সাক্ষাতকার নিচ্ছে এবং এসব লোকজনকে সংশ্লিষ্টরা নানাভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা ক্যাম্প, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন