দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল আলমকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে- পরিবারের সদস্য ও বিএনপি নেতাদের অভিযোগ

ramu bnp coference pic 2

রামু প্রতিনিধি:
রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা সাইফুল আলমকে পরিকল্পিতভাবে পতিতা দিয়ে মিথ্যা নারী নির্যাতন মামলায় জড়ানো হয়েছে। গতকাল শনিবার (১৯ জুলাই) রামু প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেছেন, দক্ষিন মিঠাছড়ি ইউনিয়ন বিএনপি নেতৃবৃন্দ, ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের পরিবারের সদস্যরা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান, রামু উপজেলা বিএনপির সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ আবদুশ শুক্কুর ও দক্ষিন মিঠাছড়ি ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক মো. আবদুল্লাহ কোম্পানী ও দক্ষিন মিঠাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যবৃন্দ।

লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল রামু উপজেলা শাখার সদস্য, দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমকে স্থানীয় নির্বাচনী ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ চক্রান্তের করে পতিতা দিয়ে অন্যায়ভাবে মিথ্যা, বানোয়াট এবং নারী নির্যাতন মামলায় ফাঁসিয়েছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে বন্দি অবস্থায় আছে।

একজন জনপ্রতিনিধির প্রধান হাতিয়ার তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট সততা, নিষ্ঠা এলাকার প্রতি মমত্তবোধ, এই গুণাবলিগুলো সাইফুল আলমের কাছে আছে বলেই দীর্ঘ পাঁচ যুগ পর একটি নির্দিষ্ট একটি গোষ্টির স্বৈরাচারি শাসনের অবসান ঘটিয়ে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। একজন চরিত্রহীনা ও পেশাগত চরিত্রহরণকারী মেয়েকে ব্যবহার করে নির্বাচনী ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরাই সাজানো নাটকের মাধ্যমে চেয়ারম্যান সাইফুল আলমকে গোয়েন্দা পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করিয়েছেন।

একজন ধর্ম ভীরু, ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে নিজ এলাকা ও পুরো দেশের কাছে হেয় করার জন্য চক্রান্তকারী চক্র ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এ রমজান মাসে নারী গঠিত পরিকল্পিত নাটক সাজিয়েছে। অথচ যে মেয়েটিকে ব্যবহার করে এই নাটক সাজানো হয়েছে সে দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের প্রতিটি মানুষের কাছে একজন চরিত্রহীন মেয়ে হিসেবে অধিক পরিচিত। মেয়েটি ইতিপূর্বে প্রেম ও প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ এবং ৬-৮ মাস সন্তানসম্ভবা হওয়া মিথ্যা গল্প সাজিয়ে একই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মনিরুল আলম চৌধুরীসহ তিন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে হেনেস্তা করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা পুলিশের গ্রেপ্তার ঘটনাকে সাজানো নাটক ও সংবাদপত্রে প্রকাশিত নানা রসাত্মক কাহিনীকে সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যে প্রণোদিত এবং মানহানিকর বলে দাবী করেছেন রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের বড় ভাই দিদারুল আলম সহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

তাদের দাবী গোয়েন্দা পুলিশ ইসমত আরা নামের মহিলাকে ব্যবহার করে চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে এজাহার তৈরী করেছে তাতেও সম্পূর্ণ মিথ্যার আশ্রয় নেয়া হয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশ সাইফুল আলমকে পর্যটন মোটেল প্রবালের রেষ্টুরেন্ট থেকে গ্রেপ্তার করলেও এজাহারে বলা হয়েছে, তাকে মোটেল প্রবালের ১১০ নং কক্ষ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বড় ভাই দিদারুল আলম উর্ধ্বতন প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করে বলেছেন গোয়েন্দা পুলিশ ও চক্রান্তকারীদের গ্রেপ্তার নাটকে আটকের পর চেয়ারম্যান সাইফুল আলম তার আইনজীবী ও নিকটজনদের জানিয়েছেন তিনি ইফতার এর আগে একটি ইফতার পার্টিতে যোগ দেওয়ার জন্য মোটেল প্রবালে গিয়েছিলেন।

ইফতারের আগ মুহুর্তে অজ্ঞাত নামা মোবাইল নাম্বার থেকে অপরিচিত এক মহিলা নিজেকে দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা দাবী করে মোবাইলে ফোন করেন। ঐ মহিলা একটি কাগজে দস্তখত নেওয়ার কথা বলে চেয়ারম্যান কোথায় আছে জানতে চান। চেয়ারম্যান সাইফুল আলম সরল বিশ্বাসে তিনি কোথায় আছে জানালে ঐ মহিলা মোটেল প্রবালের রেষ্টুরেন্টে চলে আসেন। ওখানে আসার পরই এলাকার খারাপ মহিলা ইসমত আরাকে চিনতে পারেন। ঐ সময় সেই মহিলা চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের মাথা থেকে টুপি খুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। টুপি খুলে নিতে না পেরে সেই মহিলা চেয়ারম্যান এর শার্ট ধরে টানাটানি করতে থাকে।

চেয়ারম্যানকে চরিত্রহীন ও সেই মহিলার উপর হামলাকারী সাজানোর জন্য নানা অপচেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে আগে থেকেই সাজানো নাটকের গোয়েন্দা পুলিশকে ফোন করে চরিত্রহীন ইসমত আরা। ওই মহিলার কথা মতই দ্রুত গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল এসে চেয়ারম্যানকে মোটেল প্রবালের রেষ্টুরেন্ট থেকে আটক করেন। তার দাবি, ওই মহিলা আগে থেকেই মোহাম্মদ করিম নামে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির নামে বুকিং করে রাখা হোটেলের ১১০ নং কক্ষে নিয়ে যাওয়ার জন্য সাইফুল আলমকে টানাটানি করে। কিন্তু সাইফুল আলমের বাধার মুখে সেই কক্ষে নিতে না পারলেও মামলার এজাহারে কথিত সেই কক্ষ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যা থেকে ষ্পষ্ট বুঝা যায় পুলিশ সেই মহিলা ও চক্রান্তকারীরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারেই এই গ্রেপ্তার নাটক সাজিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উল্লেখ করা হয়, পরিচিত দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের চাইন্দা ছড়ারকুল এলাকার মোহাম্মদ উল্লাহর মেয়ে ইসমত আরা ২০০৭ সালের ২০ জুন নিজের জেঠাত ভাই ইমাম শরীফের বিরুদ্ধেও তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলে। এক পর্যায়ে গর্ভধারনের অভিযোগ তুলে নারী নির্যাতন- ২৯৬/২০০৭ ইং নং মামলা দায়ের করেন। সেই বাচ্চা পৃথিবীর আলো দেখলেও আদালতে দীর্ঘদিন মামলা চলার পরও সেই সন্তানের পিতার পরিচয় নির্ধারন হয়নি। সেই বাচ্চা এখনও পৃথিবীতে সেই মহিলার সন্তান হিসেবে বড় হচ্ছে। এই ঘটনার পর বছর না ঘুরতেই তৎকালীন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মনিরুল আলম চৌধুরীর বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করে। যার নং- জি.আর- ১৮০/২০০৯ ইং।

সেই অভিযোগে ঐ মহিলা উল্লেখ করেছিলেন, চেয়ারম্যান মনিরুল আলম চৌধুরীর সাথে ২০০৮ সালের ৫ মে রাত অনুমান ১০টার দিকে তার প্রথম শারীরিক সম্পর্ক হয়। তার পর থেকে একাধিকবার বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক বজায় রাখেন চেয়ারম্যান মনিরুল আলম চৌধুরী। এক পর্যায়ে সে গর্ভবতী হয়ে পড়লে তৎকালীন চেয়ারম্যান মনিরুল আলম চৌধুরী ২০০৮ সালের ৭ নভেম্বর সেই ভ্রুণের গর্ভপাত ঘটাতে বাধ্য করেন। পরে ২০০৯ সালের ১৫ মার্চ এসে মনিরুল আলম চৌধুরী সেই গর্ভধারণ ও গর্ভপাতের ঘটনা অস্বীকার করেন বলে এজাহারে উলে্লখ করা হয়।

একইভাবে গত ১৬ জুলাই চেয়ারম্যান সাইফুল আলমকে ফাঁসানোর জন্য আবারও পূর্ববর্তী ঘটনা পুনরাবৃত্তি ঘটায় ইসমত আরা। এবারও সে চেয়ারম্যান সাইফুল আলম তাকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার অভিযোগ তুলেছে। একই ভাবে পূর্বের ঘটনার মতই এক পর্যায়ে গর্ভধারণের অভিযোগ তুলে এবং সে বর্তমানে ৬ মাসের গর্ভবর্তী বলেও এজাহারে দাবী করে।

চেয়ারম্যান সাইফুল আলম ষড়যন্ত্রের শিকার। সুষ্টু তদন্ত করলেই আসল ঘটনা এবং চক্রান্তকারীদের মুখোশ বেরিয়ে আসবে। একজন ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী মানুষ রমজান মাসে তাও আবার ইফতারের সময়ে নারী গঠিত অপকর্ম করতে পারে না। তার উপর একজন জনপ্রতিনিধি তো নয়ই। সংবাদ সম্মেলনে চক্রান্তকারীদের মুখোশ উন্মোচনের দাবী জানানো হয়।

আরো উল্লেখ করা হয, বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে যারা চক্রান্ত শুরু করেছেন, তারা এবারও একজন চরিত্রহীন মেয়েকে ব্যবহার করে একজন জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধির চরিত্রহননের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এলাকাবাসী মনে করেন যারা ৬০ বছরে এলাকার কোন উন্নয়ন করতে পারেন নি। তারা পরাজিত হয়ে সাইফুল আলম চেয়ারম্যান হওয়ার পর এলাকার উন্নয়ন দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে নানা ধরনের চক্রান্ত শুরু করেছেন। এই ঘটনা তারই সর্বশেষ সংস্করন।

প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে ভূক্তভোগী পরিবারসহ উপস্থিত বিএনপি নেতৃবৃন্দ ও ইউপি সদস্যবৃন্দ প্রশাসন এবং সাংবাদিকদের সহায়তা কামনা করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, রামু উপজেলা বিএনপি নেতা আবুল বশর মেম্বার, সৈয়দ মোঃ আবদু শুক্কুর, ফোরকান আহমদ, ফয়েজ উদ্দিন রাশেদ, এইচ এম আহসান উল্লাহ, দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক আবদুল্লাহ কোম্পানী, যুগ্ম আহবায়ক শেখ আবদুল্লাহ, দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য যথাক্রমে নুরুল কবির মুজিব, মোক্তার আহমদ, মোজাফ্ফর আহমদ, আবছার কামাল, ফরিদুল আলম, মোঃ ইউসুফ এবং সাইফুল আলম চেয়ারম্যানের বড়ভাই দিদারুল আলম, সরওয়ার আলম, এডভোকেট মনিরুজ্জামান প্রমূখ। সংবাদ সম্মেলনে কক্সবাজার ও রামু উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন