দৃক গ্যালারী সেজেছিলো পাহাড়ী রঙ, তুলি ও বৈচিত্রে আঁকা ছবিতে
স্টাফ রিপোর্টার:
গত ১৫ ডিসেম্বর বিকাল ৪ টায় ধানমণ্ডির দৃক গ্যালারিতে ‘হিল আর্টিস্ট গ্রুপ’র চিত্র প্রদর্শনীর ছবিগুলো কথা বলেছে পাহাড়িদের জীবন ও বৈচিত্র্যের কথা। পাহাড়ী শিল্পীদের আঁকা ছবির এ প্রদর্শনী শেষ হযেছে ১৯ ডিসেম্বর।
প্রদর্শনীটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসাবে পার্বত্য মন্ত্রনালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ও আর্টস ডিপার্টমেন্টর প্রফেসর শিল্পী চিত্রকর ও কাটুনিস্ট শিশির ভট্টাচার্য উপস্থিত ছিলেন। ১৫ ডিসেম্বর শুরু হয়ে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন বিকাল তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল প্রদর্শনটি।
এবারের প্রদর্শনীর মূল উদ্দেশ্য ছিল পাহাড়ি আর সমতলদের মধ্যে মিলবন্ধন খোঁজা। পাহাড়িদের জীবন বৈচিত্র্যকে তুলে ধরার লক্ষে ১৯৯২ সালের ১৫ মার্চ প্রতিষ্ঠিত হয় ‘হিল আর্টস গ্রুপ’ নামের সংগঠনটি। প্রতিষ্ঠার পর চতুর্থ চিত্র প্রদর্শনী করে দীর্ঘ বিরতি কাটিয়ে অবশেষে আয়োজন করা হলো পঞ্চম চিত্র প্রদর্শনীর। তবে পঞ্চম প্রদর্শনী সফলের পেছনে যে মূখ্য ভূমিকা রেখেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয় তা অকপটে স্বীকার করেন ‘হিল আর্টিস্ট গ্রুপ’র সভাপতি ধনমনি চাকমা।
যে ছবি কথা বলে জীব ও জীবনের সে ছবিই শিল্পী তুলেছেন রঙ তুলিতে। কিভাবে বেঁচে থাকতে হয় বৈরি পরিবেশে সংগ্রাম করে? কিভাবে লড়তে হয় অস্তিত্বের বিপরীতে নিজেকে আবিস্কার করে? কিংবা মাটির সাথে জীবনকে মিলিয়ে কিভাবে চলছে মানব আত্মায় বন্ধি সংগ্রামি জীবনগুলো? হাসি, কান্না, সুখ, দু:খ, বিরহ, বেদনা, আনন্দ, উল্লাস, পোশাক, আশাক, দারিদ্র্যতা, সীমাবদ্ধতা, মান, অভিমান, স্বর্গ, নরক কি নেই এখানে?
কোথাও বড় বড় পাথরের মাঝে ঝর্ণা ধারা প্রবাহিত হচ্ছে। পাহাড়ি ললনা বিমোহিত হয়ে এলোমেলো কেশ ছড়িয়ে পাথরের উপর বসে আলতা রাঙ্গা চরণ দুটিতে জলের ঝলকানি দিচ্ছেন নিশ্চিন্তে। উঁচু নিচু পাহাড়ের কোল ঘেষে কুয়াশার অবছায় দাঁড়িয়ে থাকা ঘরগুলোতে একটু পরেই ফিরে যাবে জল আনতে যাওয়া পাহাড়ি তরুণি। মোটা বাঁশের বাঁশির সুরে অষ্পরি তরুণিকে পুলকিত করার চেষ্টা করছেন চর্তুশপদের পিছে ছুটা রাখাল। দুর্গম পথ বেয়ে ঝুড়ি মাথায় এগিয়ে আসছে ঝুম চাষি। আবার মাথায় লাকড়ি ভর্তি নারীটির মুখের হাসি ই বলছে রাখালের মিষ্টি বাঁশির সুরে সত্যি সে পুলকিত। দূরপানে বাঁশির সুরে মন ছুটতে চাইলেও আপন আঙিনার ওপারে অনিরাপদ সমাজটা বুঝতে নারাজ গারো তরুণি। যেন ক্যানভাস নয়, পাহাড়িদের জীবন আর বৈচিত্র্যতার ফুটে উঠেছে প্রদর্শনীতে।
ক্যানভাসের দৃশ্যে পুরো জগত ফুটিয়ে তোলা সম্বব না হলেও শিল্পীর তুলি বাদ যায়নি পাহাড়ি জীবনের ইতিবৃত্তে। এ আয়োজনের মূল আকর্ষণ ছিল বিভিন্ন রঙের ১২৫ টি ব্যতিক্রমি শিল্পকর্ম। পঞ্চম চিত্র প্রদর্শনীতে তিন পার্বত্য জেলার মোট ২৭ জন শিল্পীর ১২৫ টি শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে ‘বৈচিত্র্যে ও বৈচিত্র্যতায় পাহাড়ের রঙ’ প্রদর্শনীতে। তবে চতুর্থ বারের চেয়ে এবার ৬ জন শিল্পীর চিত্রকর্ম বেশি স্থান পেয়েছে পঞ্চম চিত্র প্রদর্শনীতে।
ব্যতিক্রমী এই প্রদর্শনী নিয়ে ‘হিল আর্টিস্ট গ্রুপ’র নয়ন ত্রিপুরা বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের প্রাকৃতিক দৃশ্যকে তুলে ধরা এবং প্রকৃতির সাথে জীবনের যে সম্পর্ক তা প্রকৃতি বিমুখ মানুষের উপলব্দিতে অনার চেষ্টা করা হয়েছে। সীমাবদ্ধতা ও ছিল সামাজিক চলমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী পাহাড়িদের জীবন ধারার পরিবর্তনে।
ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে বাদ যায়নি পাহাড়িদের পোশাক বদলের ক্রমদৃশ্য। প্রকৃতির সাথে যে দৃশ্য মানানসই তা যেন কংক্রিটে বন্ধিদের চোখে একে বারেই আড়াল। তাই বিভিন্ন প্রশ্নো জাগতে পারে সমতলীদের চোখে। জীবনের বৈচিত্র্য ও বৈচিত্র্যের রঙ অনেকেই হয়তো উপলব্ধি করেছেন এ প্রদর্শনীতে এসে কিন্তু এ যেন নিত্য রঙ সবুজ চাদর মোড়ানো পার্বত্য চট্টগামের পাহাড়িদের।