দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারকে রাজি করাতে চেষ্টা চালাবে চীন

fec-image

বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানামারের সরকারকে রাজি করাতে চীন চেষ্টা করবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং। বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বেইজিংয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রধানমন্ত্রী কেকিয়াংয়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে তিনি এই আশ্বাস দেন।

বৈঠকে চীনের প্রধানমন্ত্রী এই দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা দ্রুত সমাধানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, এতে কোনও সন্দেহ নেই যে, এটা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা। এ সমস্যা দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে সমাধানেও গুরুত্বারোপ করে বলেন, চীন এই সমস্যা সমাধানে সহায়তা করবে।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ের সময় পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক জানান, চীনের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয়ে চীনের বন্ধু। আমরা এর আগে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে দু’দেশকে সহায়তা করেছি এবং আমরা আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রাখবো।

চীনের প্রধানমন্ত্রী বলেন, দু’দেশকে আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান বের করতে হবে। তিনি আরও বলেন, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দু’বার মিয়ানমারে পাঠানো হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধানে প্রয়োজনে আমরা আবারও আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে মিয়ানমারে পাঠাবো।

শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান হবে। কেন রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে চায় না? এমন প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমারকে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের করার কিছুই নেই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে দ্বিপক্ষীয় ব্যবস্থা করেছে। আমরা এ ব্যাপারে সব ধরনের প্রয়াস চালিয়েছি। কিন্তু, রোহিঙ্গারা ফেরত যেতে চায় না। কারণ, তারা শঙ্কিত যে, তাদের ওপর আবারও নৃশংসতা চালানো হবে।

এই শঙ্কা দূর করতে এবং রোহিঙ্গারা যেন নিরাপদে, মর্যাদা ও নিজস্ব পরিচয়ে নিজ দেশে ফেরত যেতে পারে, সেজন্য অনুকূল পরিবেশ গড়ে তুলতে চীনের ভূমিকা পালনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তাদের জমি-সম্পত্তির ওপর অবশ্যই তাদের অধিকার থাকতে হবে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে চীনের প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীন এটা বুঝতে পেরেছে যে, রোহিঙ্গা সমস্যা হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। চীনের প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকটে মানবিক সাড়া দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

পররাষ্ট্র সচিব জানান, দ্বিপাক্ষিক আলোচনা সাধারণভাবে পাঁচটি বিষয়ের ওপর অনুষ্ঠিত হয়। এগুলো হলো অর্থনৈতিক বিকাশ, বাণিজ্য, প্রকল্প বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিষয়, বিসিআইএম বা যোগাযোগ ব্যবস্থা, ভিসা সংক্রান্ত ও রোহিঙ্গা ইস্যু। তিনি জানান, চীনা প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের অংশীদার হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

লি কেকিয়াং বলেন, বাংলাদেশর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক মূল্যবান বলে মনে করি। এটি আরও উচ্চ স্তরে নিতে চাই। আমাদের মাঝে একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব রয়েছে, আমরা আশা করি, এই সম্পর্ক আগামীতে আরও গভীর ও জোরদার হবে। এ সময় চীনা প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্র অব্যাহত থাকার এবং এই ব্যাপারে চীনের সমর্থন অব্যাহত থাকার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এই সময় আরও উপস্থিত ছিলেন চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. ফজলুল করিম ও প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ লেখক মো. নজরুল ইসলাম।

এর আগে, দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বাংলাদেশের পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন অটিজম অ্যান্ড নিউরো-ডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডারস-এর জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. ফারুক খান।

সূত্র : সাউথএশিয়ানমনিটরডটকম

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: চীন, রাখাইন, রোহিঙ্গা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন