নানা অব্যবস্থাপনায় টেকনাফ পৌরবাসীর নাভিশ্বাস

teknaf pic 27-5-2013

মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, টেকনাফ:
সীমান্ত ও পর্যটন শহর টেকনাফ পৌরসভা এলাকায় অপরিকল্পিত এবং যত্রতত্র হাট বাজার গড়ে উঠার কারণে ভয়াবহ যানযট ও পৌর শহরের সৌন্দর্যহানী ঘটছে। এতে পৌরবাসীর নাভীশ্বাস উঠেছে । তাছাড়া টেকনাফ ও দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে ভ্রমণে আসা দেশী-বিদেশী অসংখ্য পর্যটক, শিক্ষার্থী, ভিআইপি-ভিভিআইপি এবং টেকনাফ পৌরবাসী নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন । এব্যাপারে টেকনাফ পৌর মেয়রের উদ্যোগও কাজে আসছে না। এতে অকালেই বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে সম্ভাবনাময় একাধিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। মার্কেটের সামনে কাঁচা মাছ-তরকারীসহ লাকড়ীর স্তুপে ঢাকা পড়ছে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবন।

লাখ- লাখ টাকা পুঁজি খাটিয়ে দোকান খুলে বসা ব্যবসায়ীরা দোকান ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছেন। দিন দিন ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। লাখ লাখ টাকা পুঁজি খাটিয়ে গড়ে তোলা স্বপ্নের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে অন্য কাজে বা বেকার হয়ে পড়েছেন অনেকে। টেকনাফের প্রবেশদ্বার বাস ষ্টেশন মসজিদের সামনে লাকড়ির স্তুপ। আল জামিয়া মার্কেট ও হোটেল স্কাই-ভিউর সামনে রাস্তার উপর কাঁচা মাছ-তরকারীর বাজার। হোটেল দ্বীপ-প্লাজার সামনে পান বাজার। ভূমি অফিস সংলগ্ন রাস্তার উপর ছাগলের বাজার। মডেল থানা ও পোষ্ট অফিসের সামনে সুপারীর বাজার। শাপলা মার্কেটের সামনে মুরগীর বাজার। এভাবে প্রতিটি মার্কেটকে আবদ্ধ করে রেখেছে অপরিকল্পিত ও অসমাঞ্জস্য হাট- বাজার।

এসব মার্কেটের মালিক ও ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত নিজস্ব ব্যবসা ও আগামীর স্বপ্ন নিয়ে অস্থির হয়ে পড়েছেন। বিগত ২০০০ সালে টেকনাফ পৌরসভায় রুপান্তর হলেও দীর্ঘ ১৩ বছর পরও পরিকল্পিত উদ্যোগের অভাবে দৃষ্টি নন্দন টেকনাফ পৌরসভা হিসাবে গড়ে উঠেনি। অনেক প্রত্যাশা নিয়ে পৌরবাসীরা স্বপ্নের পরিকল্পিত টেকনাফ বিনির্মাণে নগর পিতা নির্বাচিত করলেও ভাগ্য বদলাতে পারেননি পৌরবাসীর। অবশেষে বর্তমান সাংসদ আলহাজ্ব আব্দুর রহমান বদির আপন চাচা হাজী মোঃ ইসলাম মিয়াকে সর্বশেষ স্বপ্ন পুরণের পাহাড়সম আশা নিয়ে নির্বাচিত করেছেন। তিনি পৌরসভার আমুল পরিবর্তন ও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে অনেক বার উদ্যোগ এবং পরিকল্পনা করলেও তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। তিনি হাট বাজারের বেওয়ারিশ গরু ও যত্রতত্র ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠা  ঝুপড়িমুক্ত করতে বারাংবার অভিযান করলেও কয়েক দিন পর আবার স্বরূপে গড়ে উঠে।

সচেতন মহল টেকনাফকে পরিকল্পিত নগরায়ন ও শ্রীবর্ধনে যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণের দাবী জানিয়ে আসলেও বরাবরই ব্যর্থ হয়েছেন । টেকনাফ পৌর শহরের প্রধান সড়কের উভয় পাশ দখল করে রেখেছে  ট্রাক-বাস, পিকআপ ভ্যান, চাঁদের গাড়ি জীপ, টমটম, সিএনজি। আর ফুটপাতে নিয়মিত বসছে বাজার ও আসবাবপত্রের দোকান। এতে প্রতিদিনই এ সড়ক দিয়ে চলাচলে মানুষের চরম ভোগান্তি হচ্ছে। এদিকে টেকনাফ পৌরসভার প্রধান সড়কের উভয় পাশ্বে ব্যাঙের ছাতার ন্যায় গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ভাসমান ব্যবসা। টেকনাফ সীমান্ত পর্যটন এবং পৌর শহরের প্রান কেন্দ্রের প্রধান সড়কের উভয় পাশ্বে ভাসমান ব্যবসা গড়ে উঠায় পথচারীসহ সর্বসাধারণের ভোগান্তি চরমে উঠেছে ।

নাইট্যংপাড়াস্থ বাসটার্মিনাল থেকে অলিয়াবাদ শাপলা চত্বর পর্যন্ত ২ কিলোমিটার টেকনাফ-কক্্রবাজার প্রধান সড়কের উভয় পাশ্বে ব্যাঙের ছাতার ন্যায় গড়ে উঠেছে ইট, বালি, কংকর, স্যানিটারী, গৃহ-নির্মান সামগ্রী, বাঁশ ও লাকড়ীর ভাসমান ব্যবসা। এতে করে পৌরসভার প্রধান ষ্টেশনে যনজট লেগেই থাকে। উভয়মূখী যাত্রীবাহী বাস ও পরিবহন ট্রাক, চাঁন্দের গাড়ী, সিএনজি ও মাইক্রো সহজে যাতায়াত করতে পারেনা। এছাড়াও সড়কের উভয় পাশ্বে যত্রতত্র ট্রাক দাড়িয়ে থাকার ফলে পথচারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে এবং অনেক সময় সড়ক দুর্ঘটনায় শিকার হয়। টেকনাফ ষ্টেশনে অবৈধ গাড়ী পার্কিং এবং দুরপাল্লার গাড়ীর টিকেট কাউন্টার স্থাপিত হওয়ার ফলে যনজট আরও বৃদ্ধি পেয়েছে । এসময় গুরুতর অসুস্থ রোগী সহজেই হাসপাতালে যেতে পারেনা। ট্রাফিক ব্যবস্থা থাকলেও তা নামে মাত্র। ট্রাফিক আইন থাকলেও প্রয়োগ হয়না। ট্রাফিক সিগন্যাল পুলিশ কার্যত অচল এবং দায়িত্বের প্রতি থাকেন অবহেলা এবং কিংকর্তব্যবিমূড়। টেকনাফ পৌর কর্তৃপক্ষ  বিষয়টি আমলে আনছেন না। বলতে গেলে টেকনাফ পৌর শহরটি বর্তমানে নোংরা এবং অস্বাস্থ্যকর অবস্থার মধ্যে রয়েছে। টেকনাফ পৌরবাসী এব্যাপারে উর্ধতন কতৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ দাবী করেছেন ।  

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন