নানা সমস্যায় জর্জরিত রাজস্থলী তাইতং পাড়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়

রাজস্থলী প্রতিনিধি:

রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার সুবিধা বঞ্চিত দুর্গম রাজস্থলী উপজেলার তাইতং পাড়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়টি নানা সমস্যায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। অনিয়ম আর শিক্ষকের অভাবে ভেঙ্গে পড়েছে বিদ্যালয়টির শিক্ষা ব্যবস্থা। দুর্গম অঞ্চলে এটিই একমাত্র মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়ায় শিক্ষার্থীরা অনেকটা বাধ্য হয়েই বিদ্যালয়টিতে পড়াশুনা করছে।

প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ ১১ জন শিক্ষকের মধ্যে মাত্র ৩ জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন প্রতিষ্ঠানটিতে। তাদের মধ্যে একজন প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে অফিসিয়াল কাজে ব্যস্ত থাকেন। বিদ্যালয়ে কম্পিউটার শিক্ষক না থাকায় সরকারি বরাদ্দকৃত কম্পিউটারগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। শিক্ষক সংকটের কারনে শিক্ষার্থীরা কম্পিউটারের মত আধুনিক প্রযুক্তি শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষকের অভাবে বন্ধ রয়েছে বিদ্যালয়টির মানবিক বিভাগের কার্যক্রম।

অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা যায়, বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক যোগদান করার পর থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ ক্ষমতার অপব্যবহার ও চরমভাবে দুর্নীতি করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন। অপরদিকে তিনি সরকারি বাসায় না থেকে বিদ্যালয়ের ছাত্রী হোস্টেলে বেশি সময় কাটান বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এছাড়া, বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগ খোলাকে কেন্দ্র করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী দুর্গম এলাকায় শিক্ষা প্রসারের লক্ষে বন্ধ থাকা মানবিক বিভাগটি খোলার জন্য প্রধান শিক্ষককে বার বার তাগিদ দিলেও তিনি এ বিষয়ে কোন কর্ণপাত করেননি। বরং বিদ্যালয়ে সরকারিভাবে ৩জন শিক্ষক থাকাকালীন ২ জন শিক্ষককে এমএড ট্রেনিং করতে পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে।

সম্প্রতি গত কিছুদিন আগে আকস্মিকভাবে রাঙ্গামাটি জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এডিসি মোস্তফা জামান বিদ্যালয়টি পরিদর্শনকালে অনিয়মের চিত্র দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি ১ সপ্তাহের মধ্যে মানবিক বিভাগটি খুলে শিক্ষার্থীদের পড়ার সুযোগ প্রদানের জন্য প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ প্রদান করেন।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী জানান, এই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক চরম দুর্নীতি ও অনিয়মকে আশ্রয় দিয়েও তিনি পার পেয়ে যাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে মাধ্যমিক পরিচালক শিক্ষা বিভাগ এর নিকট অভিযোগ করে বিস্তারিত জানানো হয়েছে।

মাধ্যমিক পরিচালক জানান, চলতি এসএসসি পরীক্ষার পর প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তথ্য অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অন্যদিকে, রাজস্থলী তাইতং পাড়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে সমস্যার অন্ত নেই। পাঠদান অনুমোদিত ৫টি শ্রেণির ক্লাস একসাথে ২ জন শিক্ষক পরিচালনা করছেন। সরকারি বিধি মোতাবেক নতুন যোগদানকৃত একজন শিক্ষক কমপক্ষে একটি বিদ্যালয়ে ৩ বছর কর্মরত থাকার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু প্রতিবছর বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ দিলেও ২-৩ মাস যেতে না যেতে সরকারি উপর মহলের সহযোগিতায় বদলি হয়ে যাচ্ছে এমন তথ্য বিদ্যালয় সূত্রে পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ছাত্রের অভিভাবক জানান, বিদ্যালয়টি বেসরকারি থাকা অবস্থায় ভাল ছিল, কিন্তু সরকারি হয়ে প্রতিনিয়ত শিক্ষক সংকট লেগে থাকে, এবার আমরা সরকারের আশায় না থেকে উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় কিছু খন্ডকালিন শিক্ষক নিয়োগ করে শিক্ষার মান কোনরকম এগিয়ে নিয়ে এসেছি। বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকারের প্রতি ভরসা করা যাচ্ছে না। এলাকার হতদরিদ্র অভিভাবকদের আর্থিক সহযোগিতায় কিছু সংখ্যক খন্ডকালিন শিক্ষক নিয়োগ করে বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন রেখেছি।

এ ব্যাপারে ছাত্রের অভিভাবক রেঅংগ্যা মারমা জানান, সরকারিভাবে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার কারনে নিয়োগকৃত শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠানটিতে যোগদান করতে না করতেই বদলির প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন। যার কারনে প্রতি বছর শিক্ষক সংকট লেগেই থাকে। এ ভাবে বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা চলতে পারেনা। তাই আমরা বাধ্য হয়ে স্বল্প শিক্ষিত খন্ডকালিন শিক্ষক নিয়োগ করছি।

এব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান উথিনসিন মারমা জানান, কর্তৃপক্ষের নিয়ম মোতাবেক বিদ্যালয়ে নতুন যোগদানের ৩ বছরে পূর্বে শিক্ষকদের বদলির আদেশ বন্ধ করা উচিৎ। তাছাড়া বিদ্যালয়টি সুন্দর পরিচালনার জন্য বেসরকারি ভাবে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। যার দায়িত্ব উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অংনুচিং মারমা ও অভিভাবক মন্ডলীর সদস্যের ধারায় বেসরকারি শিক্ষকদের সম্মানী ভাতা প্রদান করা হবে।

দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, আমি কোন অনিয়ম ও দুর্নীতি করিনি, বরং আমি সরকারি নিয়ম মেনে চলছি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন