Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

নিরাপত্তায় অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন: গুলি বর্ষণ অস্বীকার মিয়ানমারের

ঘুমধুম প্রতিনিধি:

বাংলাদেশের ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু কোনার পাড়া সীমান্ত বরাবর মিয়ানমারের সেনাদের অবস্থান ও গলি বর্ষণের বিষয়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

২ মার্চ ( শুক্রবার) বিকেল সাড়ে ৩টায় ঘুমধুম সীমান্ত ও ঢেকিবনিয়ার মাঝামাঝি লাল ব্রিজ সংলগ্ন জিরো পয়েন্টে এই পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের পক্ষে পতাকা বৈঠকে নেতৃত্ব দেন ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মনজুরুল হাসান। মিয়ানমারের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ঢেকিবনিয়া বর্ডার গার্ড পুলিশের ঊর্ধ্বতন অফিসার স্যুইজালিং।

বৈঠক শেষে সাড়ে ৪টার দিকে ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মনজুরুল হাসান বলেন, বৃহস্পতিবার তুমব্রু শুন্যরেখায় মিয়ানমারের সৈন্য সেনা বৃদ্ধি ও গুলি বর্ষণের ঘটনায় কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। গুলি বর্ষণের ঘটনা মিয়ানমার অস্বীকার করে, এগুলো তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে জানিয়েছে মিয়ানমার। মিয়ানমারের ওপাড়ের সৈন্য সমাবেশ ও গুলি বর্ষণের কারণে স্থানীয় জনসাধারণ কে বিচলিত না হওয়ার কিংবা আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই বলে জানিয়ে অভয় দেন ৩৪ বিজিবির এ কর্মকর্তা।

এটিও জানান যে, অচীরেই শুন্যরেখায় আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে জাতীয় পর্যায়ে বৈঠক মতে প্রত্যাবাসন কার্যকর হবে বলেও পতাকা বৈঠকে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল আশ্বস্থ করেছেন। মিয়ানমারের যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিজিবি প্রস্তুত এবং সর্তক রয়েছে বলেও জানান মনজুরুল হাসান।

গতকালের চেয়ে আজ ( শুক্রবার) পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।পতাকা বৈঠকের আগে সকাল ১২টার দিকে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম সরওয়ার কামাল সহ বিজিবির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শুন্যরেখার পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখেন।আজ ( শুক্রবার সীমান্তের শুন্য রেখায় কোন প্রকার অস্থিতিকর পরিবেশ দৃশ্যমান হয়নি।

প্রসঙ্গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর তুমব্রু সীমান্তের কোণারপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিয়ানমার বাহিনীর সদস্যদের অনুপ্রবেশের চেষ্টা রোহিঙ্গাদের বাঁধায় ভেস্তে যায়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার সময় মিয়ানমার বাহিনী ফাঁকা গুলিবর্ষণ করেছে। মিয়ানমার-বাংলাদেশের তুমব্রু সীমান্তের ৩৪ ও ৩৫ নম্বর সীমান্ত পিলারে আকস্মিকভাবে বিপুলসংখ্যক সেনা মোতায়েন করা হয়। মিয়ানমার বাহিনী সীমান্তে উস্কানিমূলক আচরণ করছে।

সীমান্তে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সেনা ও সীমান্তরক্ষী বিজিপি মোতায়েনের পর পরই উত্তেজনা বিরাজ করতে থাকে। সন্ধ্যার পর মিয়ানমারের একদল সেনা ও সীমান্তরক্ষী সদস্য সশস্ত্র অবস্থায় মই দিয়ে কাটাতার ডিঙ্গিয়ে শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রবেশের চেষ্টা চালায়। এ সময় ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা দা-খন্তা ও লাঠি নিয়ে নারায়ে তাকবীর-আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিয়ে ধাওয়া দেয় মিয়ানমার বাহিনীকে। ধাওয়ার মুখে মিয়ানমার বাহিনী দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে পেছনে সরে গিয়ে বাঙ্কারে আশ্রয় নেয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সীমান্তে ভারি অস্ত্র নিয়ে সেনা মোতায়েন শুরু করা হয়। ট্রাকে করে সকাল থেকে ভারি অস্ত্র নিয়ে সশস্ত্র সেনা ও সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) মোতায়েনের ঘটনায় তুমব্রু সীমান্তের গ্রামবাসী এবং কোণারপাড়া শূন্যরেখায় অবস্থানকারী সাড়ে ৬ হাজার রোহিঙ্গার মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে এবং সন্ধ্যায় দেখা গেছে তুমব্রু খালের ওপারে মিয়ানমারের কাটাতারের বেড়া সংলগ্ন মোতায়েন রয়েছে সশস্ত্র সেনা সদস্যরা। সেনাদের সঙ্গে রয়েছে মিয়ানমারের বিজিপি সদস্যরাও। বৃহস্পতিবার বিকালের দিকে দেখা গেছে রাখাইনের মংডু থানার ঢেকিবুনিয়া এলাকা থেকে এক সঙ্গে সেনা বোঝাই ৩টি ট্রাক তুমব্রু কোণারপাড়ার শূন্যরেখার সন্নিকটে এসে থামে। এর আগে সকাল বেলায়ও এক সাথে ৮-১০ টি ট্রাকে সেনা সদস্যরা সীমান্তের ওই এলাকায় মোতায়েন হয়।

সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করে জানা গেছে, তুমবুরু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার বাহিনী অগনিত সংখ্যক বাঙ্কার খনন করেছে। এসব বাঙ্কারে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র রাখা হয়েছে। তদুপরি মিয়ানমারের সীমান্ত সড়কের পূর্ব দিকে প্রচুর সেনা মোতায়েন রয়েছে।

কোণারপাড়ার শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পূর্ব পাশে উত্তর-দক্ষিণ বিস্তৃত রয়েছে মিয়ানমারের সীমান্ত সড়ক। গত বছরের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা নির্যাতন পরবর্তী সময়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সীমান্ত সড়কটির ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করে। ২৫ আগস্টের আগেও সীমান্ত সড়কটি ছিল যান চলাচলের অযোগ্য। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এ সড়কটি দিয়ে মিয়ানমারের শত শত সামরিক যান চলাচল করছে।বৃহস্পতিবার বিকালে তুমব্রু খালের এপারে একদল সংবাদকর্মী কমপক্ষে ১৫/২০টি যানবাহন দেখতে পেয়েছেন।

এমনকি ট্রাকে ট্রাকে শ্রমিকদের পরিবহনের দৃশ্যও চোখে পড়েছে। এসব শ্রমিক দিয়ে সীমান্তরক্ষী বিজিপি ও মিয়ানমারের সেনাদের অস্ত্রশস্ত্র বহন এবং কাটাতারের ঘেরা দেয়ার কাজ করা হচ্ছে। কাটাতারের ঘেরার কাজ চলছে ১০/১২ ফুট উঁচু করে। তুমব্রু খালের ওপারে এবং শুন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন দেড়শ ফুট উঁচু পাহাড়ের ওপর গতকাল বিকাল সাড়ে ৫টায় দেখা গেছে বেশ কয়েকজন সেনা সদস্য ভারি অস্ত্র তাক করে রয়েছেন। খালের এপাড়ে কর্তব্যরত বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর এক জোয়ান দেখিয়ে বলেন-ওই যে দেখুন পাহাড়ে মিয়ানমারের সেনারা বসে রয়েছেন।

বিজিবি’র সদস্যরা এপাড়ে কর্তব্য পালনরত অবস্থায় ওপারের সেনাদের আনাগোনা প্রত্যক্ষ করছেন। সীমান্ত সড়কে এবং সীমান্তের কাঁটাতারের ঘেরা সংলগ্ন ১০/১৫ ফুট অন্তর দুরে মিয়ানমারের সেনা ও বিজিপি সদস্যরা সশস্ত্র অবস্থায় মোতায়েন রয়েছে। অপর দিকে শূন্যরেখার পূর্ব পার্শ্বে পাহাড়ের ওপর সেনা ও বিজিপি অস্থায়ী ছাউনি স্থাপন করে মাইক লাগিয়েছে। সেই মাইকে কিছুক্ষণ পর পরই রোহিঙ্গা ও রাখাইন ভাষায় বলা হচ্ছে ‘তোমরা রোহিঙ্গারা শূন্যরেখা থেকে সরে যাও। শূন্যরেখায় বসবাস করা যায় না। তোমরা সরে না গেলে তোমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ‘এদিকে মিয়ানমার বাহিনী বৃহস্পতিবার  সকাল থেকে সীমান্তে রণ প্রস্তুতির ভাব নিয়ে অবস্থান করায় একদিকে শূন্যরেখার রোহিঙ্গা এবং অপরদিকে এপাড়ের বাংলাদেশি গ্রামবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

শুন্যরেখায় অবস্থানকারী রোহিঙ্গা আব্দুর শরীফ (৫০) বলেন, গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মিয়ানমারের সেনারা সীমান্তে টহল দিচ্ছে ভারি অস্ত্র নিয়ে। তারা এমনিতেই কিছুদিন ধরে আমাদের শূন্যরেখা থেকে সরে যেতে বলছে। ভারি অস্ত্র নিয়ে সেনা টহলের কারণে আমরা ভয়ে রযেছি। ‘

শুন্যরেখার বাসিন্দা রোহিঙ্গা মৌলবী আরেফ আহমদ, মাস্টার দিল মোহাম্মদ জানান, গত ২০ ফেব্রুয়ারির বাংলাদেশ-মিয়ানমারের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের পর থেকেই মিয়ানমার বাহিনী আমাদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে এখান থেকে সরে যাবার জন্য। অথচ যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সরেজমিন পরিদর্শনের সময় মিয়ানমারের প্রতিনিধিরাই রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরে যাবার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে বলেছিলেন। বাস্তবে পরিদর্শনের মাত্র এক সপ্তাহের মাথায় মিয়ানমার বাহিনী এসব রোহিঙ্গাদের হুমকি দিতে শুরু করে।

রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, তারা শূন্যরেখা থেকে কিছুতেই সরে যাবে না। তারা এখান থেকেই মিয়ানমারে ফিরতে চায়। মিয়ানমার বাহিনীর গতকালের মহড়ার পর থেকে বাংলাদেশের তুমব্রু সীমান্তেও আতঙ্ক ছড়িযে পড়েছে। তুমব্রু গ্রামের বাসিন্দা, নুরুল বশর, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আবু সিদ্দিক জানান, মিয়ানমারের ওপারে ফাকা গুলি বর্ষণ করাতে আমরা আতঙ্কে আছি।

স্থানীয় ঘুমধুম ইউপির চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে জানান, সন্ধ্যায় মিয়ানমারে ফাকা গুলি বর্ষণ হয়েছে। রোহিঙ্গাদের শুন্যরেখা থেকে ঠেলে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।

আমরা (স্থানীয়রা) মিয়ানমার সীমান্তে সেনা ও বিজিপির সশস্ত্র উস্কানিমূলক অবস্থান দেখে ভয় পাচ্ছি। কখন কি ধরনের ঘটনা ঘটে যায়। গতকাল সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার পর পরই সীমান্ত জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে লোকজন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন