নিরীহ গ্রামবাসীর ব্যানারে খাগড়াছড়িতে নিরাপত্তা বাহিনীর সামনে ইউপিডিএফ’র সশস্ত্র মিছিল

পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট:
এরা কারা? নিরীহ গ্রামবাসী? অপহৃত চার গ্রামবাসীর মুক্তির দাবীতে তারা রাস্তায় আন্দোলন করছে। তবে অধিকাংশই মুখোশপড়া, হাতে দা, রড, গুলতি, লোহার পাইপ, কাঠের চ্যালা ও দেশীয় অস্ত্র। তাও আবার প্রকাশ্য দিবালোকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে।

সোমবার দুপুরে খাগড়াছড়ি শহরের মহাজন পাড়া এলাকা থেকে চারজনকে অপহরণ করা হয়েছে এমন অভিযোগ ইউপিডিএফ(প্রসীত) গ্রুপের।

ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের প্রধান সংগঠক উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমার দাবী, জেলার ভাইবোনছড়া ইউনিয়েনের দেওয়ানপাড়ায় অবস্থানরত সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে সোমবার স্মারকলিপি দেয়ার পর ফেরার পথে জনসংহতি সমিতির (এমএন) গ্রুপের সন্ত্রাসীরা সিন্ধুরায় ত্রিপুরা (৩৫), তকায় ত্রিপুরা (৩০), মশা ত্রিপুরা (৩২) ও সুকেন্দ্র ত্রিপুরাকে (৩৮) অপহরণ করে নিয়ে যায়।

এ নিয়ে ঐদিন বিকাল থেকে খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে রাস্তায় গাছের গুড়ি ফেলে, ব্রিজের পাতাটন উপড়ে ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে সড়কটি অবরোধ করে সাধারণ গ্রামবাসীর অন্তরালে ইউপিডিএফ’র সশস্ত্র কর্মীরা। তারা নারী ও শিশুদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে।

মঙ্গলবার সকালে প্রথমে নারী ও শিশুরা পেরাছড়া এলাকা থেকে লাঠি সোটা, রড ও দেশীয় অস্ত্রসহ মিছিল নিয়ে জেলা সদরের দিকে অগ্রসর হয়। বেলা ১১টার দিকে মিছিলটি স্বনির্ভর বাজারে আসার পর সাথে যোগ দেয় মুখোশধারী কিছু যুবক। সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশ ও বিজিবি সদস্যের সামনে এসব দেশীয় অস্ত্রের মহড়া দেয় তারা। এ সময় স্বনির্ভর বাজারের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।

পরে দা, রড, লোহার পাইপ কাঠের টুকরো ও দেশীয় অস্ত্র হাতে মিছিলটি শহরের চেঙ্গী স্কোয়ার ঘুরে আবার স্বনির্ভর বাজারে অবস্থান নেয়। মিছিলে অংশ নেয়া লোকজন নিজেদের অপহৃতদের স্বজন ও নিরীহ গ্রামবাসী দাবী করলেও তাদের হাতে দেশীয় অস্ত্র কেন এমন প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন।

প্রকাশ্য দিবালোকে এমন সশস্ত্র মিছিল দেখে সাধারণ পথচারীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। তারা নিরাপদ অবস্থানে চলে গেলেও নিরাপত্তা বাহিনী কর্মকর্তারা শুধু নির্বিকার থাকেনি, উল্টো মিছিল কোন পর্যন্ত যাবে আন্দোলনকারীদের সাথে এমন পরামর্শ করতে দেখা গেছে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, এদের পিছনে কোন স্বার্থাণ্বেষী মহলের ইন্ধন রয়েছে কিনা।

এদিকে দুপুর ১২টার দিকে খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাহাদত হোসেন টিটু উদ্ধার হওয়া ৪ জনকে নিয়ে স্বনির্ভর বাজারে গিয়ে আন্দোলনকারীদের কাছে হস্তান্তর করলে তারা উল্লাস প্রকাশ করে। মুক্তির খবর পেয়ে চেঙ্গী স্কোয়ার ছেড়ে যায় বিক্ষোভকারীরা।

খাগড়াছড়ি জেলা সদরের স্বনির্ভর থেকে পানছড়ি পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার সড়কের দু’পাশ আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) প্রসীত গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে। অপহৃত চারজনের মুক্তির আন্দোলনে নামে নিরীহ গ্রামবাসীর ছদ্মাবরণে সশস্ত্র আন্দোলনে ইউপিডিএফ(প্রসীত) গ্রুপের ইন্ধন রয়েছে বলে দাবী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর। এ নিয়ে কথা বলার জন্য ইউপিডিএফ(প্রসীত) গ্রুপের মুখপাত্র নিরন চাকমার মুঠোফোনে কল করে সংযোগ পাওয়া যায়নি।

গ্রামবাসীর অন্তরালে সশস্ত্র মিছিল সম্পর্কে জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাহাদত হোসেন টিটু বলেন, সিসি ক্যামেরায় দেখেছি, মিছিলকারীদের মধ্যে কিছু যুবক মখোশপরা ও হতে দেশীয় অস্ত্র ছিল।

কিন্তু শত শত বিক্ষুদ্ধ জনতার ভিড়ে তাদের আটক করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেত পারত। তাই পুলিশ এ্যাকশনে যায়নি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন