নির্বাচনী বৈতরণী পারে পাহাড়ে দাঙ্গার আশংকা

pahar 1

বেলায়েত হোসেন, খাগড়াছড়ি থেকে ফিরে:
(ছয়)
আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে র্পাবত্য অঞ্চলে পাহাড়ী ও বাঙালীদরে মধ্যে দাঙ্গা সৃষ্টির আশংকা দেখা দিয়েছে। সশস্ত্র আঞ্চলিক দলের সাথে আতাঁত করে মহল বিশেষের এই অশুভ তৎপরতায় খাগড়াছড়ি জুড়ে আতংক বিরাজ করছে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাটিরাঙ্গা উপজলোর তাইন্দংয়ে ৩ আগষ্ট মোটর সাইকেল চালক কামাল হোসেনকে অপহরণের সূত্রে সংঘটিত সহিংস ঘটনার রহস্য উন্মোচনে প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় উপজাতি এবং বাঙালীদের মধ্যে অসন্তোষ ধুমায়িত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট চার গ্রামের পাহাড়ী বাঙালী বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর এবং লুটপাটের সূত্রে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সৃষ্ট অবিশ্বাস এবং দ্বন্দ্ব কাজে লাগিয়ে দাঙ্গা বাঁধানোর আশংকা করছেন সংশ্লিষ্ট মহল। জানা গেছে, তাইন্দংয়ে সৃষ্ট ঘটনাকে পুঁজি করে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই পাহাড়ী বাঙ্গালীর মধ্যে দাঙ্গা সৃষ্টির চক্রান্ত চলছে। এসূত্রে পাহাড়ীদের সংঘবদ্ধ করার কৌশল ষোলকলায় পুরণ হবার ব্যাপারী আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা। পার্বত্য চুক্তি পূর্ণবাস্তবায়িত না হওয়ায় সৃষ্ট ক্ষোভের  সুযোগ সৃষ্টিতে মহল বিশেষ কাজে লাগতে পারে বলে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে।

সূত্র মতে, চুক্তির পক্ষ বিপক্ষ পাহাড়ী সংগঠন গুলোর সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের  অবিশ্বাস বেড়েছে। এ দলটি চাচ্ছে পাহাড়ীদের সঙ্ঘবদ্ধ করে আগামী নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীকে এ আসন থেকে বিজয়ী করতে। খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মিল্লাত এই আশাংকার কথা জানিয়ে বলেন, ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় তাইন্দংয়ের সহিংস ঘটনার সূত্রে বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যাপকহারে আটক করা হচ্ছে। পরিকল্পিত আতংক ছড়ানো হচ্ছে পাহাড়জুড়ে। বিএনপির একজন নেতা বলেন, দাঙ্গা বাঁধাতে পারলে পাহাড়ীরা একাট্রা হয়ে বাঙ্গালীদরে বরিুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ এবং সশস্ত্র উপজাতীয় সংগঠনের পক্ষ নেবে বলে তারা আশা করছে। বিকল্প হিসেবে বিএনপি’র বাঙালী প্রার্থীকে র্বজন করবে বলে আওয়ামী শিবিরে গুঞ্জন চলছে।

পাহাড়ী বাঙালীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বিভিন্ন কারণে ক্ষমতাসীনদের ওপর ক্ষুব্ধ হাজার হাজার উপজাতী গত দু’বছরে বিএনপিতে যোগদান করেছেন এবং এখনো করছেন। বিভিন্ন মিশনারীর তৎপরতায় পার্বত্য অঞ্চলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্টি খ্রিষ্টীয়করণের ফাঁদে আটকে পড়ায় উপজাতির মধ্যে ধর্মান্তরিতের হার আশংকাজনকভাবে বেড়ে চলেছে। এব্যাপারে রাষ্ট্রীয় প্রটেকশন না থাকায় ধর্মপ্রাণ উপজাতীয়রা ক্ষুব্ধ ।

খাগড়াছড়ি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূইয়ার নেতৃত্বে বিএনপির পাঁচ বছরের শাসনামলে বাঙালী পাহাড়ীরা সংঘবদ্ধভাবে উন্নয়ণমূলক কর্মকান্ডে যুক্ত হবার সুযোগে দূরত্ব আরো কমেছে। অনেক পাহাড়ী জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন। নীরস্ত্র পাহাড়ীরা ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত ওয়াদুদ ভূইয়ার কর্মকান্ডে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন ও সম্প্রীতি স্থাপনে তার বিশেষ অবদান স্থানীয়  ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের আকৃষ্ট করেছে।

সূত্র জানায়, ২০০১ সালরে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একজন চাকমা নেতার ইন্ধনে দলীয় অনুগত ক’জন বাঙ্গালীকে রামগড়ে পাহাড়ীদের বাড়ী ঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। সে দুরভিসন্ধির ফাঁদে পা দেননি পাহাড়ীরা। সে নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ওয়াদুদ ভূইয়া বিপুল ভোটের ব্যবধানে দ্বিতীয় বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন৷ আসন্ন নির্বাচনে এ ধরনের আশংকার কথা উড়িয়ে দিচ্ছেন না নেতৃবৃন্দ।

আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, নির্বাচনের আগে পাহাড়ী ও বাঙালী সংর্ঘষ বাধিয়ে মহলবিশেষ রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে না পারে সে ব্যাপারে প্রশাসন সতর্ক আছে। এমন আগাম আশংকা তারা উড়িয়ে দিচ্ছেননা। এব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষন করলে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো: মাসুদ করিম এবং পুলিশ সুপার শেখ মো. মিজানুর রহমান বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায়  এবং যে কোন পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন সতর্ক আছে। কোন হটকারি পদক্ষেপ নিলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর  ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন