নো-ম্যানস ল্যান্ডে আটকে থাকা রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে আনা হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দবান:
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের আঞ্জুমানপাড়া সীমান্ত পয়েন্টের নো-ম্যানস ল্যান্ডে থাকা রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে নেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সাড়ে ১১টা থেকে এসব রোহিঙ্গাদের উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালীর ক্যাম্পে নেওয়া শুরু হয়।
নতুন করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী নির্যাতন শুরু করলে গত রবিবার থেকে এসব রোহিঙ্গা রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আঞ্জুমানপাড়া সীমান্ত পয়েন্টের নো-ম্যানস ল্যান্ডে এসে আশ্রয় নেয়। নো-ম্যানস ল্যান্ডে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা পালংখালী ইউনিয়নের আনজুমান পাড়া জিরো পয়েন্ট নাফনদী অতিক্রম করার চেষ্টা করলে বিজিবি সদস্যরা তাদের বাঁধা দেয়।
তবুও রোহিঙ্গাদের অনেকেই ঢুকে পড়ে উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে। আর যারা এখনও নো-ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থান করছে তারা পড়ে খাদ্য সংকটে। অবশ্য, বেসরকারি এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে তাদের মাঝে কিছু খাবার ও ত্রাণ বিতরণ করা হয়।
গত তিন থেকে পাঁচদিন ধরে অভুক্ত এসব রোহিঙ্গারা প্যারার কাড়ি, জমির আইল, চিংড়ি ঘেরের হাঁটু পানি ও ধানি জমিতে অবস্থান করায় অধিকাংশ রোহিঙ্গা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। সেখানে একটি মসজিদে অস্থায়ী ভাবে বসানো মেডিকেল ক্যাম্পে অসুস্থ্যদর চিকিৎসা সেবা দেওয়া হলেও তা ছিল অপ্রতুল বলে দাবি করছে ভুক্তভোগী রোহিঙ্গারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দায়িত্বরত বিজিবি সদস্যরা জানান, ওপরের নির্দেশে এসব রোহিঙ্গাদের তল্লাশি ও কলেরা টিকা খাওয়ানোর পর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠানো হয়।
বুচিডং শহরের খিয়াংধং গ্রামের রওশন আলী (৩৮) ৫ ছেলে মেয়ে নিয়ে রাস্তার ধারে গাছ তলায় বিশ্রাম নিচ্ছিল। সে জানায়, বুচিডং শহরে ৮৫টি গ্রাম আছে। তৎমধ্যে ১৪টি গ্রাম ছাড়া সবকটি গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এই ১৪টি গ্রামের অধিকাংশ পরিবার ইতিপূর্বে বালুখালী ও কুতুপালংয়ে আশ্রয় নিয়েছে।
রওশন আলী আরো বলেন, তাদের গ্রামগুলো বিচ্ছিন্ন এলাকা হওয়ায় জীবন বাজি রেখে সেখানে থাকার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু মিয়ানমার সামরিক জান্তা ও রাখাইন বৌদ্ধ সন্ত্রাসীরা থাকতে দিল না। সাদা কার্ড ধরিয়ে দেওয়ার নামে তাদের অত্যাচার, জুলুম মারধর, ধান-চাল, সহায় সম্পদ লুটপাট শুরু করলে গত এক সপ্তাহ আগে ওই ১৪টি গ্রামের ৩০ হাজার পরিবার সীমান্তে পাড়ি জমানোর উদ্দেশ্যে পাহাড়ি পথ ধরে রওনা হয়। গত সোমবার ভোর রাতে আনজুমান পাড়া সীমান্তে এসে তারা বিজিবি’র বাঁধার মুখে আটকা পড়ে যায়। সেখানে তাদের তিনদিন থাকতে হয়েছে না খেয়ে।
বৃহস্পতিবার এসব রোহিঙ্গারা বালুখালী ও কুতুপালং এলাকায় আসতে পারলেও তাদের এখনো ছন্ন ছাড়া জীবন যাপন করতে হচ্ছে।
আইওএম এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার সৈকত বিশ্বাস বলেন, আটকে পড়া ৩০ হাজার রোহিঙ্গাদের কুতুপালং ও বালুখালী ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের বিভিন্ন মেডিকেল সেন্টারে স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার পাশাপাশি শুকনো খাবার ও ত্রাণ সামগ্রীর কার্ড বিতরণ করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান সীমান্তে আটকে পড়া রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে ফিরে আসার সত্যতা নিশ্চিত করেছে।