‘পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ মুসলমানই দিনমজুর, নিশ্চিত কর্মসংস্থান নেই’
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ মুসলমানের পেশা দিনমজুরি। তাদের নিশ্চিত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। প্রায় অর্ধেকের বেশি পরিবারে শিক্ষাগত মান প্রাথমিক স্তর পেরোয়নি।
রাজ্যে মুসলমানদের জীবন ও জীবিকা নিয়ে দুটি সংগঠনের প্রকাশিত জরিপ রিপোর্টে এ চিত্র উঠে এসেছে। রাজ্যের ১৯টি জেলার মুসলিম-অধ্যুষিত ৩২৫টি গ্রাম এবং ৭৫টি শহরের ৯৭ হাজার মুসলিম পরিবারের মধ্যে জরিপ চালিয়ে প্রাথমিক এই রিপোর্টটি তৈরি করেছে ‘প্র্যাপ’ এবং ‘গাইডেন্স গিল্ড’ নামে দু’টি সংগঠন।
শনিবার ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেস অ্যাসোসিয়েশন প্রেক্ষাগৃহে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ‘পশ্চিমবঙ্গে মুসলমানদের অবস্থা’ শীর্ষক রিপোর্ট প্রকাশ করেন কবি শঙ্ঘ ঘোষ ও সাহিত্যিক নবনীতা দেব সেন। শঙ্খ ঘোষ জানান, অজ্ঞানতা কোনো জাতির পক্ষেই ভাল নয়। এই রিপোর্টের দরকার ছিল। এর ফলে সংখ্যালঘুরা নিজেদের অবস্থার কথা আরও বেশি করে জানতে পারবেন।
নবনীতা দেব সেনের মতে, কোনো দেশে এক অংশের মানুষের মধ্যে বৈষম্য থাকতে পারে না। এটা বদলাতে হবে। রিপোর্টে বলা হয়, মুসলমানদের মধ্যে নিরক্ষতার হার ১৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ। আর ১২ শতাংশের শিক্ষা প্রাথমিক স্তরের নিচে। স্নাতক পর্যন্ত পড়েছেন ৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ আর স্নাতকোত্তর ১ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
সাক্ষরতার হারে সব থেকে পিছিয়ে উত্তর দিনাজপুর জেলা। এরপর রয়েছে নদীয়া, পুরুলিয়া ও কোচবিহার। আর কলকাতায় ৪ শতাংশের বেশি মুসলিম সাক্ষরতার আলো দেখেনি। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারদের মতো পেশাদার মাত্র ২ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মুসলিম-অধ্যুষিত গ্রামগুলোর ২৭ দশমিক ১৩ শতাংশ রাস্তায় পানি জমে থাকে। গ্রামের ১৮ শতাংশ কাঁচা রাস্তা। ৯ শতাংশ গ্রামের রাস্তা পাকা। ৪ শতাংশ কংক্রিটের। জরিপ চালানো গ্রামের ৮ শতাংশে এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছেনি। তবে ৯৪ শতাংশ গ্রামে সাধারণের ব্যবহারের জন্য নলকূপ রয়েছে। আবার এর মধ্যে ৬৯ শতাংশ নলকূপ নিজেরাই বসিয়েছে। সরকারি নলকূপ পাওয়া যায় ৩৬ শতাংশ গ্রামে।
৩৫ শতাংশ গ্রামবাসীর চিকিৎসার জন্য যেতে হয় অন্তত চার কিলোমিটার দূরের সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে। ১২ শতাংশের আবার সরকারি চিকিত্সাকেন্দ্র আট কিলোমিটার দূরে। ৪৬ শতাংশ সরকারি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনো শয্যা নেই। ৪৫ শতাংশ গ্রামবাসীকে নির্ভর করতে হয় হাতুড়ে চিকিৎসকদের ওপর।
জরিপ প্রকাশ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ছিলেন শিক্ষাবিদ মীরাতুন নাহার, অচিন চক্রবর্তী, কুমার রানা প্রমুখ। ওই দুই সংগঠনের পক্ষে জানানো হয়েছে, চলতি বছরের শেষে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে।
সূত্র: আইআরআইবি