পাবনায় ফসলি জমির মাটি বিক্রি করছেন কৃষক

krisiপাবনার বিভিন্ন উপজেলায় ফসলি জমির উপরের অংশ থেকে মাটি বিক্রি করছেন কৃষকরা। আর্থিক টানাপড়েন থেকে রেহাই পেতে তারা এ মাটি বিক্রি করছেন। এতে জমির উর্বরাশক্তি কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে আবাদি জমি ভরাট করে দ্রুত আবাসিক ও বাণিজ্যিক অবকাঠামো গড়ে ওঠায় ফসলি জমির পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে।
কৃষিবিদদের মতে, জমির মূল উর্বরাশক্তি থাকে মাটির ওপরের অংশের এক থেকে দেড় ফুটের মধ্যে। জমি থেকে মাটি বিক্রি হলে এ অংশটিই কেটে নেয়া হয়। একবার ফসলি জমির মাটি বিক্রি করা হলে ওই জমির উর্বরাশক্তি ফিরে আসতে পাঁচ-সাত বছর সময় লাগে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, শীত মৌসুম শুরুতে ফসলি জমির মাটি বিক্রি শুরু হয়। চলে বৈশাখ পর্যন্ত। নিচু জায়গা ভরাট, ভাটায় ইট তৈরি, নতুন রাস্তা ও বাড়িঘর তৈরিসহ বিভিন্ন নির্মাণকাজের জন্য মাটি বিক্রি হয়। মাটি বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় প্রতিদিন কয়েক শতাধিক ট্রাকে করে জমি থেকে মাটি বহন করে সংশ্লিষ্ট এলাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আগে কেবল পতিত বা অনাবাদী জমির মাটি দিয়ে নিচু জায়গা ভরাট করা হতো। অনেকে আবার পুকুর কাটার মাটি দিয়েও এসব কাজ করতেন। কিন্তু চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখন ফসলি জমির মাটি বেচাকেনা হচ্ছে।
বেড়া পৌর এলাকায় প্রায় ৩০ বছর ধরে মাটি বেচাকেনার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আবুল কালাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘মাটির চাহিদা দিনকে দিন বেড়েই চলছে। আমরা বিভিন্ন এলাকার জমি থেকে মাটি কিনে ট্রাকে তা সরবরাহ করি। প্রতি বিঘা ৫৫ হাজার টাকা হিসেবে এ বছর আমি পাঁচ বিঘা জমির মাটি কিনেছি। ফসল উত্পাদনের চেয়ে মাটি বিক্রিতেই লাভ বেশি বলে কৃষকেরা বেশি আগ্রহী।’
বেড়া পৌর এলাকার পায়না মহল্লার কৃষক মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘স্থানীয় মাটি ব্যবসায়ীর কাছে বছর দুয়েক আগে আমার দুই বিঘা জমির মাটি বিক্রি করেছি। আমার মতো এ এলাকার অনেক কৃষকই এভাবে মাটি বিক্রি করছে। মাটি বিক্রি করার ফলে যে গর্ত হয় তা পূরণ হতে সাধারণত চার-পাঁচ বছর সময় লাগে। কয়েক বছর আবাদে সমস্যা হবে জেনেও আর্থিক সমস্যার কারণে সবাই মাটি বিক্রি করছে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর দশমিক ১৫ শতাংশেরও বেশি জমি এভাবে অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। জেলায় আবাদি ও অনাবাদি মিলিয়ে মোট কৃষিজমির পরিমাণ ২ লাখ ৪ হাজার ৯৩১ হেক্টর। প্রতি বছর এ থেকে কমপক্ষে ৭ হাজার হেক্টর জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জানান, জমির ওপরের এক থেকে দেড় ফুট অংশের মধ্যেই মাটির মূল উর্বরাশক্তি থাকে। একবার এ অংশটি কেটে নেয়া হলে উর্বরাশক্তি ফিরে আসতে চার-ছয় বছর সময় লাগে। আর প্রতি বছর অবকাঠামো তৈরির কারণে যেভাবে কৃষিজমি কমছে তা উদ্বেগজনক। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে কৃষকদের সচেতন করার যেমন প্রয়োজন রয়েছে, তেমনি কঠোর আইন প্রণয়নেরও দরকার।
উল্লেখ্য, সারা দেশে ক্রমবর্ধমান হারে কৃষিজমির পরিমাণ যেভাবে কমছে, তা নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারক মহলেও উদ্বেগ রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তাবিত শিল্পনীতিতে কৃষিজমিতে শিল্প স্থাপন নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে।
Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন