পার্বত্যাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কঠোর নজরদারিতার নির্দেশ

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

পার্বত্যাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কঠোর নজরদারির জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

পাহাড়ের বিতর্কিত রাজনৈতিক দল ‘ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) কোমলমতি শিক্ষার্থীদের  রাজনৈতিক কার্যকলাপে ব্যবহার করছে, এমন প্রতিবেদন একটি গোয়েন্দা সংস্থা প্রকাশের পর কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যেন রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে না পরে তাই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) সূত্রে জানা গেছে, এই বছরের ৩০ জুন খাগড়াছড়ি শহরে স্বনির্ভর বাজার এলাকায় ইউপিডিএফ এবং এর অঙ্গ-সংগঠনগুলোর উদ্যোগে মিছিল ও সভার আয়োজন করে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে চাপ দিয়ে স্কুল ড্রেস পরিহিত অবস্থায় ছাত্র-ছাত্রীদের ইউপিডিএফের সাংগঠনিক সম্পাদক অংগ্য চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক অবনিকা চাকমা ও পিপিসির সভাপতি তপন চাকমার নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত সভায় স্কুলের শিক্ষার্থীদের অংশ নিতে বাধ্য করা হয়। কর্মসূচিতে ২ নম্বর প্রকল্পপাড়া জুনিয়র হাইস্কুল, মুনিগ্রাম উচ্চবিদ্যালয়, পেরছড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও ভাইবোনছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের বেশ কিছু ছাত্রছাত্রী পোশাক পরিহিত অবস্থায় অংশ নেয়। এই ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মাউশির মহাপরিচালককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গত ১৯ সেপ্টেম্বরের নির্দেশনায় বলা হয়, ইউপিডিএফ (মূল) ও এর অঙ্গ-সংগঠনের সমাবেশে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ দণ্ডনীয় অপরাধ। বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী এমন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করে তাদের নেতিবাচক কাজে উৎসাহিত করে তোলার সঙ্গে সঙ্গে তাদের মধ্যে রাষ্ট্রবিরোধী মনোভাব গড়ে তুলতে সচেষ্ট রয়েছে তারা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘বিতর্কিত সংগঠন’ ইউপিডিএফের সহায়তায় রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর নজরদারির প্রয়োজন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের পর সম্প্রতি মাউশি থেকে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসনকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কঠোর নজদারির নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি ২ নম্বর খাগড়াছড়ির প্রকল্পপাড়া জুনিয়র হাইস্কুল, মুনিগ্রাম উচ্চবিদ্যালয়, পেরছড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও ভাইবোনছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য খাগড়াছড়ি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের কারণ দর্শানোর নোটিশও দিয়েছে মাউশি।

মাউশির কর্মকর্তারা জানান, ইউপিডিএফ ও এর অঙ্গ-সংগঠনের লোকজন তাদের কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থীদের জড়িত করতে চাপ প্রয়োগে বাধ্য করা হয়েছে। বিষয়টিকে রাষ্ট্ররিরোধী কর্মকাণ্ড হিসেবে উল্লেখ করেছে মাউশি।

এ বিষয়ে মাউশির সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-২) দূর্গা রানী সিকদার বলেন, ‘আমরা গত সপ্তাহে স্থানীয় প্রশাসকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কঠোর নজরদারির নির্দেশ দিয়েছি। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হয়েছে। সেখানে ফোনে ঠিকমতো যোগাযোগ করা যায় না। আমরা জানার চেষ্টা করছি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও প্রধানদের ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন ও জেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় কী ব্যবস্থা নিয়েছে।’

এর আগে, গত বছর ১৭ আগস্ট নানিয়ারচর কলেজ হলরুমে কলেজ শাখার পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) সভাপতি তুষণ চাকমার সভাপতিত্বে ইউপিডিএফ-সমর্থিত সিপিসি কলেজ শাখার নবীনবরণ-২০১৭ এবং পঞ্চম কলেজ শাখা কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই অনুষ্ঠানের ব্যানারে ‘পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন পার্বত্য চট্টগ্রামে একমাত্র রাষ্ট্রীয় সমাধান’ স্লোগান ব্যবহার করা হয়। এই ঘটনার উল্লেখ করে গত বছর ১৯ নভেম্বর  মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে স্থানীয় প্রশাসনকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নজদারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন