Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

পার্বত্য চট্টগ্রামে আমার অভিজ্ঞতা

আ ল ম ফজলুর রহমান

এক.

আমার অনেক ফেসবুক ফ্রেন্ড আমাকে বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আমার বিশেষ অভিজ্ঞতা তাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। বিশেষ অভিজ্ঞতা বলতে আমি এমন কিছু ব্যাতিক্রমী অভিজ্ঞতা বুঝি যা মানুষের জীবনে কালেভদ্রে ঘটে। অতএব অভিজ্ঞতার ঝুড়িতে ব্যাতিক্রমী অভিজ্ঞতার সংখ্যা যে কম হবে তাতো বলাই যায়।

আমি উনিশ শত বিরাশি সালে লে. কর্ণেল পদে পদোন্নতি পেয়ে একটি পদাতিক ব্যাটালিয়নের আধিনায়ক ( কমান্ডিং অফিসার বা সংক্ষেপে সিও ) হিসাবে প্রথম পার্বত্য চট্টগ্রামের ফারুয়াতে যাই। আমি এর পুর্বে সামরিক কর্তব্যের অংশ হিসাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে আসি নাই। ফারুয়া কাপ্তাই লেক থেকে উৎসারিত রেংখিয়াং খাল/ ছড়া/ নদীর পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত ফরেস্ট ডাকবাংলা সম্বলিত একটি নীচু খোলামেলা এলাকা যেখানে পাহাড়ের উচ্চতার কারণে বাতাসশুণ্য বললে বেশী বলা হবেনা। অর্থাৎ ফারুয়াতে থাকলে গায়ে বাতাস লাগেনা। এলাকাটা ডিপ্রেস্ট হবার ফলে এখানে টিভি দেখা যায় না। রেংখিয়াং কে খাল, ছড়া এবং নদী এই তিন নামে অভিহিত করা যায়। রেংখিয়াং খালে স্রোত নাই। তবে উপরে বা আপস্ট্রিমে বৃষ্টি হলে রেংখিয়াং খাল নদীতে পরিণত হয়ে এর স্রোত কি পরিমাণ ভয়াবহ ও ধ্বংসাওক হতে পারে সে অভিজ্ঞতায় পরে আসছি। এবারে বলবো ছড়া সম্বন্ধে।

ছড়া এক কথায় পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝর্ণা বলা যায় যা পরে একটু ছড়িয়ে নীচের দিকে প্রবাহিত হয়। কোনো কোনো ছড়া শুকিয়ে যায় আবার বর্ষার সময় জীবন্ত হয়ে স্রোতের সৃষ্টি করে। তবে যেহেতু রেংখিয়াং কাপ্তাই লেক থেকে উৎসারিত কোনো পাহাড় থেকে নয় তাই একে খাল বলাই অধিক সমীচীন ছড়া নয় । এবং রেংখিয়াংকে পহাড়ী স্হানীয়রা খাল বলে অভিহিত করে। আমিও রেংখিয়াংকে খাল বলে আপনাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি।

তো ফারুয়াতে আমার ব্যটালিয়ান সদর দপ্তর তবে রিয়ার সদর কাপ্তাইতে। এলাম কাপ্তাই। ফর্মালিটিস সম্পন্ন করে ফারুয়া যাবার দিন ঠিক হলো। তিনটা স্পিডবোট । সামনে এবং পিছনে সশস্ত্র স্কট এবং মাঝে আমার স্পিডবোট। সবাই সশস্ত্র এবং ব্যাটেল ড্রেসে আমরা। রেংখিয়াং খাল ধরে যেতে হবে দক্ষিণ পুর্বে প্রায় তিন ঘন্টা বিরতিহীন ।

যাত্রা শুরু হল। সবাই সজাগ এবং ঈগলের দৃষ্টি দিয়ে চারপাশ অবলোকন করতে করতে অগ্রসর হচ্ছি। এলাম বিলাই ছড়ি। আকাশচুম্বী পাহাড়ের পাদদেশে কাপ্তাই লেকের কাকচক্ষু পানির সাথে এযেন পাহাড় আর লেকের বিশাল জলরাশির জলের সাথে পাহাড়ের জলকেলি। বিলাইছড়ি যাবার পথে দেখলাম ছোট ছোট টিলার যেঅংশ আগবাড়িয়ে লেকের পানিতে মিশেছে তারি সবুজ সোনালী আভায় ঢাকা ঘাসে বনমরোগ এবং মথুরা চরে বেড়াচ্ছে। হাঁটু পানিতে দলবেঁধে মাছ শিকার করছে কালেম পাখির ঝাঁক । তারই মাঝে ঘন বনে ঢাকা টিলার উপরে পাহাড়ীদের বাড়ী এবং নীচে কাপ্তাই লেকের স্তব্ধ কালো জল। আমি এই মহোময় দৃশ্য দেখে ভাবছিলাম এমন শান্ত ও প্রাকৃতিক পরিবেশে যাদের নিত্য দিনাতিপাত তারা রক্তপিপাশু শান্তিবাহিনী কি করে হয় ?

বিলাইছড়ি পেরিয়ে বামে পড়লো এংলিয়ানার পাংখু পাড়া। পাংখুরা এখন সবাই খৃষ্টান ধর্মে দীক্ষিত হয়েছে। এংলিয়ানা এই পাড়ার হেডম্যান। এলাম তক্তানালা গ্রামে। এখানে ফারুয়া ইউনিয়নের ইউনিয়ন কাউন্সিল। যখন তক্তানালা গ্রাম অতিক্রম করছিলাম তখন মনে হলো আমি কোন আফ্রিকার জঙ্গলে প্রবেশ করেছি টারজানের মতো। রেংখিয়াং খালের উভয় পাশে খাড়া উচু পাহাড়। শত বছরের পুরোন পাহাড়ী গাছের কান্ড বেয়ে নেমে এসেছে বটগাছের মতো লতানো ঝুরি। পাহাড়ের চূড়ায় তাকালে মাথার টুপি পড়ে যায়। গভীর জঙ্গলে ভরা পাহাড়। বিশাল বিশাল চাপালিশ গাছ । গাছে গাছে নানা জাতের পাখি এবং বানরসহ অনেক জাতের ছোট ছোট প্রাণীতে ভরা দেখলাম প্রাণভরে। চাপালিশ গাছের মগডালে বসে হুম হুম করে ডাকছে রয়েল পিজিয়ন। আমি ইতিপূর্বে রয়েল পিজিয়ন দেখি নাই। রয়েল পিজিয়ন ধুসর বর্ণের প্রায় কেজি ওজনের হরিয়াল পাখি। রয়েল পিজিয়নের হুম ডাক প্রায় এক কিলোমিটার দূর থেকে ভেসে আসে।

আপনাদের শুনতে খারাপ লাগলেও বলছি। আমি তক্তানালার অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেমন উপভোগ করেছি সাথে চিন্তা করছিলাম কোনো সময় এখানে এসে এই সব পশুপাখি শিকার করবো। তখন ইউনিফর্মে ছিলাম, বয়স কম, মনোভঙ্গি অন্যরকম ছিলো তাই এইসব চিন্তা করতে পেরেছিলাম। এখন পাখি শিকার আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তো ফারুয়াতে যখন এলাম তখন বেলা দুটা হবে। দেখলাম রেংখিয়াং খালের পুর্ব পাড়ে তজেন্দ্রলাল তনচ্যঙ্গা হেডম্যান পাড়া এবং পাড়ার দক্ষিণে খালের পাড় ঘেষে ফারুয়া বাজার।

-চলবে

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: পার্বত্য চট্টগ্রাম, মেজর জেনারেল আ. ল. ম. ফজলুর রহমান, সাহিত্য
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন