পার্বত্য চট্টগ্রামে আশঙ্কাজনকহারে বন্যহাতির সংখ্যা দিনদিন কমছে
নিজস্ব প্রতিবেদক:
তিন পার্বত্য জেলায় বাসস্থান ও খাদ্যের অভাবেেআশঙ্কাজনক হারে বন্যহাতির সংখ্য কমেছে। অন্যদিকে বনভূমি উজাড় করে বাসস্থান গড়ে তোলায় ধ্বংস হচ্ছে হাতির অভয়ারণ্য। এছাড়া অর্থ লিপসু চোরা শিকারিদের কারণে বন্যহাতির সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে।
সবুজ শ্যামল পাহাড়ে ঘেরা বান্দরবান ও রাঙামাটিতে এক সময় শত শত হাতির অবাধ বিচরণ থাকলেও জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে হাতির আবাসস্থল দিন দিন সংকুচিত হয়ে আসছে। পাহাড়ে বসতবাড়ি নির্মাণ, বৃক্ষ নিধন ও খাদ্যর অভাবে হাতির আবাসস্থল ছেড়ে নেমে আসছে লোকালয়ে। লোকলয়ে নেমে আসা হাতির তাণ্ডবে বান্দরবান সদর, লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি, রাঙামাটির লংগদু ও রাজস্থলীতে প্রতিবছর নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে থাকে। অনেকে হয়ে পড়ে গৃহহীন।
লামার ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা ইব্রাহীম বলেন, প্রতিনিয়ত ঘরবাড়ি ও ফসলি জমিতে হাতির আক্রমণে বিনষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আমরা অসহায়।
২০০৪ সালে বন বিভাগ ও আইইউসিএন পরিচালিত এক শুমারি মতে, দেশের ১১টি বন বিভাগে ২৫০ থেকে ৩৫০টি বন্য হাতি ছিল। এ ছাড়া মায়ানমার ও ভারত থেকে আরো ১০০ থেকে ১২০ হাতি বাংলাদেশে আসা যাওয়া করে।
’৮০-র দশকে বান্দরবান ও রাঙামাটি দুই পার্বত্য জেলায় ৫ শতাধিক হাতি থাকলেও বর্তমানে দেড় থেকে দুই শতাধিকে নেমে এসেছে। দ্রুত হাতির অভায়রণ্য গড়ে তোলা না হলে অবশিষ্ট হাতিও একসময় বিলুপ্ত হয়ে যাবে এমন ধারণা স্থানীয়দের।
বন বিভাগ জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রামে মোট বনাঞ্চল ২৬ লাখ ৮৬ হাজার একর। এর মধ্যে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ৭ লাখ ৯৯ হাজার ৫৫ একর। মোট বনভূমি ৩২ হাজার ২৫০ একর এবং সরকারী বনাঞ্চল (ইউসিএফ) ১৮ লাখ ৫৪ হাজার ২০০ একর। পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এসব বনাঞ্চলের গাছ কাটা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। সরকারী বনঞ্চলে বসতবাড়ী নির্মাণ,চাষাবাদের কারণে বন্যহাতি হারাচ্ছে আবাসস্থল।
আবাসস্থলের পাশাপশি পড়তে হচ্ছে খাদ্য সংকটে। এসব কারণে বন্যহাতি দিন দিন পড়ছে হুমকির মুখে।
বান্দরবান বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, হাতির চলাচলের পথে ক্ষেত-খামার, বসত বাড়ি গড়ে উঠেছে, আর এ কারণেই হাতির সংখ্যা অনেক কমে গেছে। পূর্বের সংখ্যার অর্ধেক হাতিও এখন আর নেই পাহাড়ে। প্রতিবছর খাদ্যর সন্ধানে লোকালয়ে নেমে আসা হাতির তান্ডবে নির্ঘূম রাত পার করতে হয় জেলার কয়েক উপজেলার বাসিন্দাদের। ইকোসিস্টেম নষ্ট হওয়ার কারণেই হাতিরা এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। স্থানীয়রা জানান, পাহাড় থেকে হাতি এসে বাড়ি-ঘরে আক্রমণ করে, হাতি লোকালয়ে এসে ফসলী জমি, ধান, কাঠল, আম খেয়ে খাওয়ার পাশাপাশি গাছগুলোকে নষ্ট করে দেয়।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক কেএম তারিকুল ইসলাম বলেন, বাজেটের অভাবে বন্যহাতির অভয়ারণ্য তৈরী করা সম্ভব হচ্ছেনা। বাজেট পেলে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেবে। যদি বাজেট পাওয়া যায় তাহলে একটি এলাকাকে নির্দিষ্ট করে সেখানে হাতির অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র হিসেবে সংরক্ষণ করা হবে।