পাসপোর্ট পেতে পুলিশ প্রতিবেদনে হয়রানি

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

পাসপোর্ট তৈরিতে পুলিশ ভেরিফাই (পুলিশ প্রতিবেদন) একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে উঠে আসে আবেদনকারীর তথ্য। এতেই প্রকাশ পায় আবেদনকারী আদৌ পাসপোর্ট পাওয়ার যোগ্য কিনা। আর এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদনের দায়িত্বে থাকা অনেক পুলিশের হাতে হয়রানির স্বীকার হচ্ছে আবদেনকারীরা। নানা অযুহাতে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হচ্ছে। এতে বাড়ছে ভোগান্তি। অনেকে আবার টাকা দিয়েও ঠিক সময়ে পাসপোর্ট পাচ্ছেনা।

এমনই এক ভুক্তভোগী যুবক হলেন, সদর উপজেলা পিএমখালী’র ঘাটকুলিয়া পাড়ার মৃত আব্দুর সালামের ছেলে মোহাম্মদ ইসমাইল (২২)।

তিনি জানান, তার বাবা-মা দুইজনই মারা গেছে। এক আত্বীয়ের সহযোগিতায় তার বিদেশ যাওয়ার সুযোগ হচ্ছে। তাই পাসপোর্টের জন্য আবেদন করে। গত ২৫ অক্টোবর ওই পাসপোর্টের (৫৪৬২) এর ডেলিভারি (প্রদান) দেওয়ার সময় ছিল। আর এই পাসপোর্টের পুলিশ প্রতিবেদনের দায়িত্ব পড়ে ডিএসবি এএসআই মো. হোসেনের হাতে। প্রতিবেদন নিয়ম অনুযায়ী গত ১৮ নভেম্বর রেজাউল হাসান নামে এক এএসআই মোহাম্মদ ইসলামইলের বাড়িতে যান। যাকে এএসআই মো. হোসেন পাঠিয়েছেন।

তিনি মোহাম্মদ ইসমাইলের কাছ থেকে তথ্য নেওয়া শেষে ১৭ শত টাকা নেন। পরে গত ২৫ অক্টোবর ডেলিভারি তারিখ অনুযায়ী মোহাম্মদ ইসমাইল ও তার ভাইয়ের ছেলে ফেরদৌস আলম পাসপোর্ট অফিসে যান। কিন্তু পুলিশের রিপোর্ট না যাওয়ার কারণে পাসপোর্ট পাওয়া যায়নি। বিষয়টি জানতে তারা এএসআই মো. হোসেনের সাথে দেখা করেন।

এসময় এএসআই মো. হোসেন মোহাম্মদ ইসমাইলকে জিজ্ঞেস করেন, এএসআই রেজাউল হাসানকে কত টাকা দেওয়া হয়েছে। তিনি বললেন ১৭ শত টাকা। আর জানতে চায় তার ভাগের টাকা কোথায়। মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন ‘ যিনি গিয়েছিল (এএসআই রেজাউল হাসান) তাকে তো টাকা দেওয়া হয়েছে। এ কথায় এএসআই হোসেন ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, তার হিসাব তার সাথে আমারটা আমার। এসময় মোহাম্মদ হোসেনের পাশে থাকা একজন বলেন, এত কথা না বলে দেড় হাজার টাকা দাও। এএসআই মো. হোসেন বলেন, তোমার কাছে না থাকলে সাথে থাকা ব্যক্তির কাছ থেকে নিয়ে দাও। আর দেড় হাজার না থাকলে ১ হাজার টাকা হলেও দাও। পরে তার কাছে থাকা ৫০০ টাকা দেয়।

এরপর পাসপোর্টের খবরের জন্য ৪-৫ বার এএসআই মো. হোসেনের কাছে গিয়েছেন মোহাম্মদ ইসমাইল। আর তাকে বার বারই ফেরত পাঠিয়েছে নানা অযুহাতে।

সর্বশেষ সোমবার(২০ নভেম্বর) তিনি গেলে তাকে ধমক দিয়ে বলেন, এখানে বার বার আসো কেন। আর এই নাম্বারে ফোন কর কেন। জাননা এইটা সরকারি নাম্বার। আর এখানে আসবে না।

এরপরেও মোহাম্মদ ইসমাইল পাসপোর্টে’র ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তোমার বিরুদ্ধে মামলা আছে। মামলা তুলে নিয়ে আসো এরপর দেখা যাবে। পরে তিনি ওই এএসআই রেজাউল হাসানকে ফোন করেন। ফোনে রেজাউল হাসান বলেন, তিনি ব্যস্ত আছেন। এখন কথা বলতে পারবে না।

এ অবস্থায় আতঙ্কিত এবং হতাশায় ভুগছে বাবা-মা হারা মো. ইসমাইল। তার বিরুদ্ধে কোন মামলা না থাকার পরেও কেন মামলা আছে বলা হচ্ছে। এছাড়া সবকিছু ঠিক থাকার পরেও কেন পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছেনা। যদিও তার পরে অনেকে আবেদন করে পাসপোর্ট পেয়ে গেছে।

ডিএসবি’র এএসআই রেজাউল হাসান বিষয়টি স্বীকার করে জানান, ডিএসবি’র এএসআই মো. হোসেনের অনুরোধে পুলিশ প্রতিবেদনের জন্য পিএম খালীর মোহাম্মদ ইসমাইলের কাছে তিনি গিয়েছিলেন। আর তথ্য নিয়ে এএসআই মো. হোসেনকে জমা দেন। ইসমাইলের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি তিনি পাশ কাটিয়ে যান। পরে জানান, ওই ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি।

এ ব্যাপারে ডিএসবি’র এএসআই মো. হোসেন জানান, পুলিশ ভেরিফাই বা পুলিশ প্রতিবেদনের কার্যক্রম পক্রিয়ায় মামলা থেকে শুরু করে নানা বিষয় খতিয়ে দেখতে হয়। তাই তার বিরুদ্ধে কোন মামলা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এসব কাজের জন্য একটু সময় লাগে। টাকা নেওয়া ও টাকা চাওয়ার ব্যাপারে কোন কথা বলেননি।

এ ব্যাপারে সাইফুর রহমান নামে এক সচেতন যুবক জানান, শুধু মোহাম্মদ ইসমাইল নয়। এই ধরনের আরো অনেকে রয়েছে যারা হয়রানির স্বীকার হচ্ছে। কিন্তু তারা ভয়ে কিছু বলতে পারছেনা যদি পাসপোর্ট না পায়। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। যাতে করে আবেদনকারীরা যথাযথ সেবা পায়।

এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন জানান, এটি আইনগত অপরাধ। তাই কারো বিরুদ্ধে এই ধরনের কোন অভিযোগ থাকলে তা লিখিতভাবে জানাতে হবে। আর ওই অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন