পাহাড়ে ‘মৎস্য চাষ প্রকল্প’ বাস্তবায়নে দুর্নীতির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি:

খাগড়াছড়িসহ পার্বত্য তিন জেলায় পাঁচ বছর আগে শুরু হওয়া মৎস্য বিভাগের এক প্রকল্পের শেষ মুহূর্তে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

‘পার্বত্য চট্রগ্রাম অঞ্চলে মৎস্য চাষ উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ’ নামের এই প্রকল্পের আওতায় রোববার (০৩ জুন) জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক অবহিতকরণ কর্মশালায় জনপ্রতিনিধি ও সুবিধাভোগীরা প্রকল্প বাস্তবায়নে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

জেলা পর্যায়ে মৎস্য বিভাগের সবচেয়ে প্রভাবশালী কর্তৃপক্ষ পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী কর্মশালাটিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তির আলোকে মৎস্য বিভাগ জেলা পরিষদে ন্যস্ত। কিন্তু মৎস্য প্রকল্প গ্রহন, বাস্তবায়নে কোন কিছুতেই অবহিত করা হয় না। পরিষদকে অন্ধকারে রেখে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অনিয়মের কারণে প্রকল্পের কাজ চলাকালে দেওয়াল ধসে পড়েছে। কর্তৃপক্ষের কারণে সেফটি ট্যাংকে পড়ে দুই শ্রমিক মারা গেছে।

তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, শান্তিচুক্তি অনুয়ায়ী ও প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে পাহাড়ের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করতে না পারলে চলে যান। এ প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রী পাহাড়ের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য কাজ করছেন। কিন্তু মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাদের দায়সরা মনোভাবে যদি কোনভাবে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি হয় কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

কর্মশালায় দীঘিনালা উপজেলা চেয়ারম্যান নব কমল চাকমা, মানিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান ম্রাগ্য মারমা, গুইমারা উপজেলা চেয়ারম্যান উশ্যেপ্রু মারমা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এ প্রকল্পর উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

মানিকছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় মানিকছড়ি উপজেলায় যে ক’টি ক্রিক ও মৎস্য বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে, তাতে সঠিক ও যথাযথ তদারকি ছিল না। কাজ অসমাপ্ত রেখেই ঠিকাদার চুড়ান্ত বিল নিয়ে গেছেন। ফলে এসব প্রকল্প থেকে জনগণ কোন সুফল পাচ্ছেন না।

কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এটিএম কাউসার হোসেন, মৎস্য অধিদপ্তরর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ,এস,এম রাশেদুল হক, চট্রগ্রামের মৎস্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বজলুর রশিদ, পার্বত্য প্রকল্প পরিচালক আব্দুর রহমান, জেলা মৎস্য আবুল খায়ের মো. মোখলেছুর রহমান প্রমুখ।

পার্বত্য তিন জেলায় ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে মৎস্যচাষ উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প’ (৩য় পর্যায়) চালু হয়েছিল কয়েক বছর আগে। পুকুর আর জলাশয়ের স্বল্পতার কারণে পিছিয়ে থাকা এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নই ছিল এ প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য।

গত ২০১৬ সালের ৩০ মার্চ রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর, খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ও রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা উপস্থিত ছিলেন। সে সভাতেও এ প্রকল্প উন্নয়ন বাস্তবায়নে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল।

এদিকে ৩য় পর্যায়ের প্রকল্পের অধিকাংশ কাজই বর্তমানে শেষ পর্যায়ে আছে। এর আগের দুই পর্যায়ে তেমন বড় কোনো কাজ না হলেও এবার তৃতীয় পর্যায়েই সবচেয়ে বেশি ক্রিক নির্মাণ করা হয়েছে।

ক্রিক নির্মাণের কাজ করেছেন এমন একজন ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘কাজ পেতে জনৈক কর্মকর্তাকে ঘুষসহ চার আঞ্চলিক দলের সশস্ত্র কর্মীদের নির্ধারিত হারে চাঁদা দেওয়ার পর কাজের মান আর কী থাকে, সেটা তো আপনারাই বুঝতে পারছেন!’’

এ ব্যাপারে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম রাশেদুল হক বলেন, গত প্রকল্প বাস্তবায়নে কোন ধরনের অবহিতকরণ কর্মশালার বরাদ্দ ছিল না, তাছাড়া গত প্রকল্প বাস্তবায়নের যে অভিযোগগুলো উঠে আসছে তা খতিয়ে দেখা হবে এবং আগামী প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে জনপ্রতিনিধিসহ পার্বত্য জেলার আইনানুযায়ী করার ব্যবস্থা করা হবে।

মো. হান্নান মিয়া বলেন, ‘সংসদীয় কমিটি ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১২ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া এই প্রকল্পটি শেষ হচ্ছে চলতি জুন মাসেই। প্রায় ৪৮ কোটি সরকারি টাকা ব্যয়ে তৈরি ৮২৮টি ক্রীক বা বাঁধের মাধ্যমে সৃষ্ট ৮৬৩ হেক্টর জলাশয়ে প্রতিবছর প্রায় ১৭০৬ মেট্টিক টন মাছ উৎপাদনের কথা ছিল। সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ তো দূরে থাক, এর ৭৫ শতাংশ জলাশয়ই এখন অপ্রয়োজনীয়, পরিত্যক্ত।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন