পাহাড় পথে হাঁটার প্রথম অভিজ্ঞতা হলো
(পাঁচ)
প্রত্যেক সেনানিবাসে খুব ভোরে বিউগলে রিভেলি সুর বাজে । সূর্য ডোবার সাথে রিট্রিট সুর বিউগলে ধ্বনিত হয় । কথিত আছে, পৌরাণিক যুগে সকালে ডঙ্কা বাজলে যুদ্ধ শুরু হতো এবং সূর্য ডোবার সাথে সাথে রিট্রিট ডঙ্কা ধ্বনিত হলে যুদ্ধ থেমে যেতো । এই সুদুর অতিত ঐতিহ্যবাহী প্রথাকে সেনাবাহিনী তার বিউগলের সুরে রিভেলি ও রিট্রিটের মাঝে এখনও ধরে রেখেছে ।
পার্বত্য চট্টগ্রামের অপারেশন এলাকায় বিউগলে রিভেলি, রিট্রিট বাজানো হতো বলে মনে পড়ে না । তবে রিভেলি রিট্রিটের সুর বিউগশে শোনার জন্য আজও আমার মন কাঁদে । সিও সাহেবের সালাম এসেছে তাই তাঁর অফিসে গিয়ে ঠিক হলো পরদিন সকালে প্রথমে আমরা শক্কুরছড়ি ক্যাম্প ভিজিট করবো । এই শক্কুরছড়ি ক্যাম্প সম্বন্ধে পরে লিখবো । শুক্করছড়িতে ব্যাটালিয়ান দরবারের মতো দরবার অনুষ্ঠিত হলো। বিদায়ী সিও সাহেব তাঁর বক্তব্য পেশ করলেন। সৈনিকরা সিওকে মাল্যভূষিত করে বিদায় জানালো ।
এই সিরিজের আগের লেখাগুলো পড়ুন
♦ পার্বত্য চট্টগ্রামে আমার অভিজ্ঞতা
♦ জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় বসেই মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম অঞ্চলে পোস্টিং করেন
♦ বঙ্গবন্ধু আর্মি অফিসার মেস থেকে মদের বার তুলে দেন
♦ ফারুয়া ব্যাটালিয়ান সদরে প্রথম দিন
পরে যাত্রা করলাম কুসুমছড়ির পথে । পাহাড়ী পথ বেয়ে হেঁটে যেতে কি অসুবিধা হয় জীবনে এই প্রথম অভিজ্ঞতা হলো । হাঁটছি হাঁটছি, হঠাৎ পথে দেখলাম অনেক হাতি পাহাড়ের ঢালুতে চারণরত । আমি সিওকে জিজ্ঞেস করলাম, এইসব জঙলি হাতি কিনা? জবাবে তিনি বললেন, এসব পোষা হাতি। গাছ টানার জন্য ব্যাবহার হয় । মজার ব্যপার হলো, এই বড় বড় হাতিগুলোকে পাহাড়ের ঢালুতে খুব ছোট মনে হচ্ছিল। মনে হয় চোখে পড়ার মতো নয়।
আপ হিলে হাঁটার সময় মনে হচ্ছিল আর চলতে পারবো না। এর কারণ, পাহাড়ে হাঁটার পারদর্শিতা অর্জন করতে হলে অন্তত তিন থেকে ছয়মাস পাহাড়ী পথে চলাচলের অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। এতে পায়ের কাফ মাসল ডেভলপ করে । পায়ের কাফ মাসেল ডেভলপ না হওয়া পর্যন্ত পাহাড়ে চলাচল ভিষণ অসুবিধার বিষয় হয়ে থাকে । এই জন্যই পাহাড়ীদের পায়ের কাফ মাসেল অনেক ডেভেলপড।
পাহাড়ে দিনের বেলা হাঁটার আর এক অসুবিধা হচ্ছে সূর্যের খরতাপ। তদুপরি ইউনিফর্মে ব্যাটেল গিয়ারে হাতিয়ারসহ চলা। গা এবং ইউনিফর্ম ঘেমে একাকার হয়ে যায়, ফলে ডিহাইড্রসনের অবস্থা হয়। এই অবস্থায় পাহাড়ী পথে সিও’র সাথে হাঁটছি কেবল মনের জোরে। শরীর ভেঙ্গে পড়েছে। তারপরেও টুশব্দ উচ্চারণ করিনি। সামনে দেখি পাহাড় এতো খাঁড়া যে খাঁজওয়ালা বাঁশ বেয়ে উপরে উঠতে হলো। আনেক হাঁটার পরে কুসুমছড়ির নজরে এলো।
কিন্তু কুসুমছড়ির দেখা নাই। কেবল মেঘ আর মেঘ পুরো ক্যাম্প ঢেকে আছে। সিও বললেন ঐ মেঘের ভিতরে কুসুমছড়ির ক্যাম্প ঢেকে আছে। আরো ঘন্টাখানেক হাঁটার পরে কুসুমছড়ির সামনে পৌঁছলাম। পথে যেমন বাঁশ বেয়ে পাহাড়ে উঠে ছিলাম, এখানে একইভাবে বাঁশ বেয়ে পাহাড় থেকে নিচে নেমেই তবে ক্যাম্পে যেতে হবে । আশ্চর্য লাগলো কুসুমছড়ির সামনে এসেও আমরা মেঘের ঘনত্বের জন্য ক্যাম্প দেখতে পাচ্ছিলাম না। সৈনিকদের সাহায্যে বাঁশ বেয়ে নীচে নামলাম। ক্যাম্পে প্রবেশ করে হাত দিয়ে মেঘ ধরতে লাগলাম। ঘন ধোঁয়ার মতো মেঘ। আনন্দে মন ভরে গেল । মনে হলো আমি মেঘলোকে অবস্থান করছি। শুয়ে বিশ্রাম নিলাম। দুরে কিছুই দেখা যায় না।
দুপুর হয়ে এসেছে। লাঞ্চ করে আবার কিছু সময় রেষ্ট নিয়ে সিও’র দরবারে অংশ নিলাম। তিনি আমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন এবং তাঁর মতো আমাকেও সব প্রকার সহায়তা করার জন্য বললেন। আমরা বিকালের চা পান শেষে ফিরতি যাত্রা শুরুর সময় সৈনিকরা সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে সিওকে মাল্যভূষিত করে বিদায় জানালো। আমারও ফারুয়ার পথে যাত্রা শুরু করে গভীর রাতে ক্লান্ত দেহে ফারুয়াতে ব্যটালিয়ান সদরে পৌছলাম। কুসুমছড়ির সম্পর্কে পরে লিখবো ইনশাহআল্লাহ।
চলবে…
Please give me the link the eleven part to last part.