পুরুষ শূন্য তাইন্দং বাঙালী পাড়া
বেলায়েত হোসেন, খাগড়াছড়ি থেকে ফিরে :
(তিন)
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার তাইন্দংয়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। গ্রেফতার আতংকে বাঙালী গ্রামগুলো এখনও পুরুষ শূণ্য। গত ৩ আগষ্ট জুম পাহাড় বেষ্টিত চার গ্রামে পাহাড়ী বাঙালীদের ৩৯ বাড়িতে ব্যাপক অগ্নিসংযোগ,ভাংচুর লুটপাটসহ সহিংসতার জের ধরে আতংক বিরাজ করছে। পুন:রায় হামলার আশংকায় উদ্বিগ্ন এলাকাবাসী।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি বিজিবি’র পলাশপুর জোনের কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জীবন-যাপনে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তবে পুলিশী আটক বাণিজ্য এখন এলাকায় মুখরোচক আলোচনার মূখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘটনাকে পুঁজি করে পুলিশ নিরীহ বাঙালীদের বাড়িতে প্রায় প্রতি রাতে পুলিশ হানা দিচ্ছে। সহিংস ঘটনায় দায়েরকৃত পৃথক মামলায় দেড় শতাধিক অজ্ঞাত আসামী থাকার সুযোগে পুলিশী হয়রানী বেড়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। দালালদের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্ট গ্রামের বাঙালী পরিবারের সদস্যরা।
বটতলী পাড়ার মনামিয়া, ভাঘ্যপাড়ার কামরুল হাসান আমান, তানাক্কা পাড়ার আমির হোসেন জানান, গ্রেফতার আতংকে তারা এলাকা ছেড়েছেন। সন্ধ্যার আগেই বাঙালীপাড়া পুরুষশূন্য হয়ে পড়ে বলে স্বীকার করেছেন এ গ্রামের গৃহবধু মরিয়ম বেগম। এদিকে পুলিশ এবং পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের ভয়ে অনেকেই নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি এমএ হক বলেন, এমন অভিযোগ তারা পেয়েছেন। অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত হবার পর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জানান হয়েছে। তারা বলেন, পুলিশ আশ্বাস দিয়েছে যে, নিরিহ কোন বাঙালীকে আটক করা হবেনা। স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ করে অনুরুপ তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা কীর্তি চাকমা জানান, দেশ স্বাধীন হবার পর থেকে মাটিরাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ী পরিবার এযাবত ৫ বার ভিটেমাটি ফেলে জঙ্গলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। নিজদেশে তারা প্রায় ফেরারী জীবনযাপন করছেন। তিনি স্বীকার করেছেন যে, বাঙালী এবং পাহাড়ীরা আতংকে আছেন। তারা সীমাহীন উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় ভুগছেন। খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মিল্লাত বলেন, ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের স্থানীয় নেতাদের নির্দেশনা অনুযায়ী বিরোধী দলের নেতাকর্মী, সমর্থকদের গ্রেফতার ও হয়রানী করা হচ্ছে আলোচ্য সহিংস ঘটনার সূত্রে। তিনি বলেন, স্থানীয় আওয়ামীলীগ এবং উপজাতীয় নেতারা মামলায় আসামী করার ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে তারা অভিযোগ পেয়েছেন। হয়রানী এড়াতে বাঙালী গ্রামগুলো এখন অনেকটা পুরুষ শূণ্য। তিনি তাইনদংয়ের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং নেপথ্য কুশিলবদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।
মাটিরাঙ্গা ইউএনও ড. মাহে আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, যে কোন ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনারোধে প্রশাসন সজাগ রয়েছে। জেলা প্রশাসনকে দৈনন্দিন তথ্য দেয়া হচ্ছে। মাটিরাঙা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাঈদ উদ্দিন খান বলেন, এ ধরনের অভিযোগ পাবার পর পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এজাহারভূক্ত আসামী ছাড়া কারো বাসায় অভিযান পরিচালনা না করতে। অভিযোগ প্রমানিত হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উর্দ্ধতন কর্তপক্ষের কাছে সুপারিশ জানান হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষন করলে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মোঃ মাসুদ করিম এবং পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, আইনশৃঙ্খনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর পাঁয়তারা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এব্যাপারে প্রশাসনের আগাম প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন তারা।
বেলায়েত হোসেন: সিটি এডিটর, স্বাধীনমত