পৃথিবীর আলো দেখা হলো না অনাগত শিশুটির!

নিজস্ব প্রতিনিধি:

নতুন অতিথি আসবে পৃথিবীতে; আর তাইতো কত স্বপ্ন মা-বাবার। আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যেও আনন্দের সীমা নেই। নবাগত শিশুকে বরণে প্রস্তুত সকলে। দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসতে থাকে; মা-বাবার স্বপ্নগুলোও ডানা মেলতে থাকে। কাপড় ব্যবসায়ী সেলিম তার সন্তান সম্ভ্যবা সহধর্মিনী জেনির যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, সেদিকেই সবসময় সতর্ক। অনাগত শিশুটি যেনো নিরাপদেই মায়ের কোলে আসতে পারে, সেজন্য রোজই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতেন। স্ত্রীকে রাখতেন নজরে নজরে।

বিগত পাঁচ বছর আগে রাঙামাটির বনরূপাস্থ কাটাপাহাড় লেইনের ব্যবসায়ী মো. সেলিম বিয়ে করেন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার মোঘলহাটের প্রবাসী নুর আলমের কন্যা জেনি আকতারকে। বিয়ের পরের বছরেই এই দম্পতির ঘর আলো করে জন্ম নেয় এক কন্যা সন্তান। আনন্দের বন্যা বয়ে যায় পুরো পরিবারে। মা-বাবা আদর করে নাম রাখেন তাসপিয়া মাওয়া তোহা। সেই ছোট্ট তোহা এখন প্লে গ্রুপে পড়ছে। সেও অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছিল তার অনাগত অনুজের। সকাল থেকেই মা জেনি আকতারের ব্যথা অনুভুত হচ্ছিল।

ফলে ভর্তি করা হয় মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রে। এখানেইতো প্রথম শিশু তোহার জন্ম হয়েছিল। তাই এবারও ভরসা করেই পরিবারের লোকজন নির্ভর করেছিল এখানকার চিকিৎসকদের উপর। ঘর থেকে আনার আগে শেষ বারের মত ছোট্ট তোহাকে আদর করেই বের হয়েছিল মা জেনি। কিন্তু এই আদরই যে শেষ আদর সেটি কি জানা ছিল ছোট্ট তোহার কিংবা মা জেনির! সবার মত তোহাও অপেক্ষায় ছিল নতুন অতিথিকে বরণে।

সোমবার সকাল এগোরটায় অনেকটা হেঁটেই হাসপাতালে ঢুকে জেনি আকতার। দুপুরের আগে তাকে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকানো হয়। অপারেশন শুরু করার আগেই রোগিকে চেক-আপ করানো হয়। সব কিছু ঠিকঠাক। কিন্তু অপারেশন শুরু হওয়ার সাথে সাথেই জেনির প্রেসার কমতে থাকে।

ডাক্তাররা এবার অপারেশন বন্ধ রেখে জেনিকে বাঁচাতে এই ডোজ সেই ডোজ দিতে থাকে। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে একেবারেই নির্জীব হয়ে পড়ে জেনি। না ফেরার দেশে পাড়ি জমায় অনাগত সন্তানকে পেটে নিয়েই। যে শিশুটি মায়ের পেটে সযতনে ছিল দশ মাস দশ দিন। পৃথিবীর আলোর মুখ দেখবে অচিরেই। কিন্তু নিয়তির কি নির্মম পরিহাস; মায়ের সাথেই তাকেও চলে যেতে হলো কবরে। বড় যত্নেই যেখানে দশ মাস দশদিন ছিলো, সেখানেই থাকবে অনন্তকাল। দেখা হলো না তার আর পৃথিবীর আলো।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন