পেকুয়ায় ইউপি সদস্যের পিতাকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় আটক ২, নিহত ব্যক্তি নামাজে জানাযা সম্পন্ন

নিজস্ব প্রতিনিধি, পেকুয়া:
পেকুয়া উপজেলার টইটং ইউনিয়নের ইউপি সদস্যেও পিতাকে কুপিয়ে হত্যা করছে বহু আলোচিত দা বাহিনীর ক্যাডাররা। গত শুক্রবার দুপুরে ইউনিয়নের বটতলী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এছাড়া পৃথক হামলার ঘটনায় আহত হয়েছে আরো ৩ জন। এসময় ভাংচুর ও লুটপাট করা হয় বেশকয়েকটি দোকানপাট। এ ঘটনায় রাতেই অভিযান চালিয়ে ২ ব্যক্তিকে আটক করেছে পেকুয়া থানা পুলিশ।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, গত শুক্রবার জুমার নামাজের পরপরই দা বাহিনীর ১০-১৫ জনের একটি স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীসদস্যরা বটতলী ও কাচারি পাহাড় এলাকায় বেশকয়েকজন ব্যক্তিকে টার্গেট করে হামলা চালায়। এসময় দা বাহিনীর ক্যাড়াররা ওই এলাকার বেশ কয়েকটি দোকানে ভাংচুর ও লুটপাট চালিয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। স্থানীয়রা জানান, দুপুরের নামাজের পরপর দা বাহিনীর ক্যাডাররা টার্গেট করে বটতলী এলাকায় স্থানীয় ইউপি সদস্য ও যুবলীগ নেতা আবদুল জলিলের বাড়ীতে হামলা চালায়।

আবদুল জলিল এমইউপি জানান, দা বাহিনীর লোকজন তাকে না পেয়ে তার বৃদ্ধ পিতা উকিল আহমদ (৬৫) কে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করে। পরে তাকে পেকুয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসকরা তার অবস্থার অবনতি দেখে চমেক হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। ঘটনার রাতে ৮ টার দিকে চমেক হাসপাতালে নেয়া হলে তার মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করেছেন তার পুত্র আবদুল জলিল এমইউপি। এ ঘটনায় আরো ৩ ব্যক্তি গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানাগেছে। এদিকে ঘটনার রাতে পুলিশ টইটং ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে কিলিং মিশনে অংশ নেয়া ২ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। আটককৃতরা হলেন, কালুর পুত্র পারভেজ (২১) ও ইদ্রিসের পুত্র তারেক (২১)।

স্থানীয়রা ধারণা করছেন, সম্প্রতি বোরকা বাহিনীর এলোপাতাড়ি গুলিতে দা বাহিনীর কয়েক সদস্য গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকে প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে উঠে দা বাহিনীর সদস্যরা। আর এ ফাঁকে পেকুয়ার ওসি হাবিবুর রহমান বদলী হলে নতুন ওসি যোগ দেয়ার মাঝামাঝি সময়ে তান্ডব চালিয়ে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটাল দা বাহিনীর ক্যাডাররা। এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ঘটনার পর থেকে টইটং ইউনিয়নে ভীতিকর এক পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। আহত উকিল আহমদ নিহত হবার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে রাস্তায় গাড়ী চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।

এদিকে দা বাহিনীর ক্যাডাররা একই সময়ে তান্ডব চালিয়ে স্থানীয় কালু সওদাগরের দোকান ভাংচুর করে তার ফাতেয়ার গরুর মাংস বিক্রির লক্ষাধিক টাকা ও মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়। একইভাবে দা বাহিনীর ক্যাডাররা একই ইউনিয়নের কাচারী পাহাড় এলাকায় হামলা চালিয়ে জুমার নামাজ থেকে বের হবার সময় আবু তালেবের পুত্র নুরুল হক নামের এক ব্যক্তিকে ধরে মারধর করে প্রথমে আওয়ামীলীগ নেতা জাহেদ চৌধুরীর বাংলোতে নিয়ে যায় এবং সেখানে তার উপর অবানবিক নির্যাতন চালায় বলে জানান পুলিশ হেফাজতে থাকা নুরুল হক। তবে পুলিশ জানিয়েছে গ্রেপ্তাকৃত নুরুল হককে আওয়ামীলীগ নেতা জাহেদ চৌধুরীর বাংলো থেকে আটক করা হলেও এর আগের গুলাগুলির ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা রয়েছে।

নিহতের পুত্র যুবলীগ নেতা আবদুল জলিল এমইউপি এই প্রতিবেদককে গতকাল জানান, দা বাহিনীর ক্যাডাররা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহেদ চৌধুরীর নির্দেশে আমাকে হত্যা করতে এসে আমাকে না পেয়ে আমার বৃদ্ধ পিতাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। যুবলীগ নেতা হয়েও আওয়ামীলীগ নেতার সাথে বিরোধ কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ নেতা জাহেদ চৌধুরী দা বাহিনীর গড়ফাদার। সে আমার এলাকায় দা বাহিনীর ক্যাড়ারদের দিয়ে দখল বেদখল এবং বেপরওয়া চাঁদাবাজী শুরু করলে আমার সাথে বিরোধ হয়। এসব কাজে আমি বাঁধা দেয়ায় আমাকে হত্যা করতে চাইছে তারা।

এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান, ঘটনার সংবাদ পেয়ে সাথে সাথেই আমি এবং পেকুয়া থানার আরেক এসআই আবদুল মতিন সহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে যাই এবং ভিকটিমকে উদ্ধার করে পেকুয়া হাসপাতালে ভর্তি করি। পরে চমেক হাসপাতালে তার মৃত্যু হয় বলে জানান তিনি। হামলাকারী কারা জানতে চাইলে তিনি জানান, স্থানীয়দের সাথে কথা বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পারলাম দা বাহিনীর কমান্ডার নাছিরের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ইউপি সদস্যের পিতাকে আহত করলে পরে তার মৃত্যু হয়। হামলার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, সম্প্রতি দা বাহিনীর সদস্যের উপর গুলির ঘটনায় জড়িত থাকার অজুহাতে তাদের উপর হামলা করা হয় বলে প্রাথমিকভাবে আমাদের ধারণা।

এদিকে ২৬ জুলাই আছরের নামাজের পর পরই ইউপি সদস্য জলিলের পিতা ওকিল আহমদের নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত। উক্ত নামাজে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ রিপোট লেখা পর্যন্ত টইটং বটতলী এলাকায় চরম উত্তোজন দেখা দিয়েছে। মামলা করবেন কিনা জানতে চাইলে ইউপি সদস্য জলিল জানান হত্যা মামলা প্রস্তুতি চলছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন