প্রত্যাবাসনে তালিকাভূক্ত রোহিঙ্গাদের সাক্ষাতকার শুরু; চলছে মোটিভেশন

fec-image

২২ আগষ্ট শুরু হচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। এ লক্ষে প্রত্যাবাসনের তালিকায় নাম থাকা রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার নেয়া শুরু হয়েছে টেকনাফের শালবাগান রোহিঙ্গা শিবিরে। মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে সাক্ষাৎকার নেয়া শুরু হয়। এ জন্য সোমবার ক্যাম্প ইনচার্জের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা শিবিরে বসবাসকারীদের বার্তা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে মিয়ানমারে ফিরে যেতে তালিভূক্ত রোহিঙ্গাদের মাঝে মোটিভেশন চলছে নানাভাবে। এমনকি রাখাইন ভাষায় প্রচারপত্র বিলি করে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সম্মত করানোর চেষ্টা চলছে। এই মোটিভেশনে সম্পৃক্ত করা হয়েছে আলেম ওলামা, ইমাম ও ক্যাম্পের মাঝিদের। তারা দেশে ফিরে গিয়ে কি কি সুবিধা পাবে তা নিয়ে ক্যাম্পের সাধারণ রোহিঙ্গাদের সাথে মতবিনিময় করছেন।

২০১৭ সালে ২৫ আগষ্টে মিয়ানমারের আরাকানে (রাখাইনের) ৩০টি নিরাপত্তা চৌকিতে একযোগে হামলার ঘটনা ঘটে। তার প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন শুরু করে। তখন প্রাণ বাঁচাতে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। এর আগে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাসহ উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি শিবিরে এখন ১১ লাখ ৮৫ হাজার ৫৫৭ জন রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। তাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি।

মিয়ানমারের আরাকানে (রাখাইনে) জাতিগত নিধন ও গণহত্যার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হয়।

বাংলাদেশের অব্যাহত যোগাযোগ ও বিশ্বসম্প্রদায়ের চাপের মুখে মিয়ানমার সেই বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ৩ হাজার ৩১০ জন রোহিঙ্গার নাম যাচাই-বাছাই করে প্রত্যাবাসন তালিকায় চুড়ান্ত করা হয়।

টেকনাফের জাদিমোরা শালবন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জ মোহাম্মদ খালেদ হোসেন বলেন, ‘প্রত্যাবাসনের তালিকায় নাম থাকা রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার নেয়া শুরু হয়েছে মঙ্গলবার সকাল থেকে। এজন্য ক্যাম্প ইনচার্জের অফিসের পাশে বেশ কয়েকটি প্লাস্টিকের ঘর তৈরি করা হয়েছে।

সেখানে ৩ হাজার ৩১০ জনের সাক্ষাৎকার নেয়া হবে। সাক্ষাৎকারের সময় ইউএনএইচসিআর এবং শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের প্রতিনিধি উপস্থিত রয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শিবিরের সামনের দোকানে রোহিঙ্গারা জড়ো হয়ে রাখাইন ভাষার লিফলেট পড়ছেন। প্রত্যাবাসনকারী রোহিঙ্গাদের কী করা হবে সেই বিষয়ে লেখা আছে ওই লিফলেটে। এছাড়াও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে রাজি করাতে আলাদাভাবে নারী ও পুরুষদের সঙ্গে বৈঠক করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ওই ক্যাম্পের বাসিন্দা নুর বশর বলেন, ‘লিফলেটে লেখা আছে, প্রত্যাবাসনকারী রোহিঙ্গাদের প্রথমে এনভিসি কার্ড নিতে হবে। তারপর নাকফুরা শিবিরে রাখা হবে। সেখান থেকে ছয় মাসের আইডিবি ক্যাম্পে নেওয়া হবে। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এরকম হলেও রোহিঙ্গাদের মাঝে রয়েছে সংশয়।

তাদের অনেকেই বলছেন, কোনও রোহিঙ্গা নাগরিকত্ব ও সমঅধিকার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার ফেরত যাবে না। কারণ মিয়ানমার সরকার মিথ্যাবাদী। তাদের কোনোভাবে বিশ্বাস করা যাচ্ছে না।

রাখাইন ভাষার লিফলেট প্রসঙ্গে টেকনাফের শালবন রোহিঙ্গা শিবিরের নেতা বদরুল ইসলাম বলেন, ‘মূলত ন্যাশনাল ভ্যারিফিকেশন কার্ড (এনভিসি)-কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সেখানে। যেসব রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে, তাদের প্রথমে এনভিসি কার্ড দেওয়ার উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই বিষয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ভীতি কাজ করছে। কারণ আগেও রোহিঙ্গাদের এনভিসি কার্ড দেওয়ার নামে প্রতারিত করা হয়েছিল।’

জানা যায়, ২২ আগস্ট প্রত্যাবাসনের জন্য সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এজন্য কাজ করছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ‘ইউএনএইচসিআর’ এবং শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) কার্যালয়।

তবে বাংলাদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা পরিষ্কারভাবে কিছু না বললেও প্রত্যাবাসন নিয়ে প্রস্তুতি চলছে। এ নিয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার খুবই আন্তরিক বলে জানা গেছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: প্রত্যাবাসন, মিয়ারমার, রাখাইন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন