Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

প্রশাসনের সতর্কতায় খাগড়াছড়িতে বৈসাবী উপলক্ষ্যে বড় ধরণের নাশকতার পরিকল্পনা ভণ্ডুল

SONY DSC

পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট :

বৈসাবী উৎসবকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়িতে বড় ধরণের নাশকতার পরিকল্পনা করেছিল ইউপিডিএফ। স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে এ ধরণের আশঙ্কার কথা আগেই জানিয়েছিল গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। ফলে প্রশাসন ও নিরাপত্তাবাহিনীর সতর্কতার কারণে বড় ধরণের নাশকতা থেকে রক্ষা পেয়েছে জেলাবাসী। পার্বত্যনিউজের কাছে এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন জেলার সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষকর্মকর্তাগণ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, ইউপিডিএফ তাদের পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক বৈসাবীর আগে ব্যাপক চাঁদাবাজি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করে। পরে প্রত্যেক উপজেলাকে একলক্ষ করে টাকা দেয়া হয় লোক জমায়েত করার জন্য। পরিকল্পনা মোতাবেক গতকাল খাগড়াছড়ির বিভিন্ন উপজেলা থেকে শত শত চাঁন্দের গাড়ি করে হাজার হাজার উপজাতি জনগোষ্ঠীকে তারা খাগড়াছড়ি সদর ও মানিকছড়িতে বৈসাবী র‌্যালীর নাম করে জমায়েত করার চেষ্টা করে। কিন্তু পূর্ব তথ্য থাকায় প্রশাসন সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সহায়তায় শান্তিপূর্ণ বৈসাবী র‌্যালীতে বাঁধা না দিলেও একস্থানে বড় ধরণের জমায়েত হতে দেয়নি। ফলে নস্যাৎ হয়ে যায় ইউপিডিএফ’র বড় ধরণের নাশকতার পরিকল্পনা।

সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসন নেতৃস্থানীয় ও বরেণ্য ব্যক্তিদের পরামর্শ ও সহায়তায় জেলা পরিষদ, ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট ও বিভিন্ন গোত্রীয় সংগঠনগুলো ব্যাপকভাবে বৈসাবী উৎযাপন করছে। এরমধ্যে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট ৮-১০ এপ্রিল তিনদিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে যার উদ্বোধন করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। এর মধ্যে তাদের আয়োজিত র‌্যালীতে বিভিন্ন ধর্ম, গোত্রের দশ সহস্রাধিক লোক অংশ নেয়। এ ছাড়াও সরকারী হাইস্কুল মাঠে চলছে বৈসাবী মেলা যেখানে ৬০টি স্টল অংশ নিয়েছে। এখানকার অনুষ্ঠানে ভারত থেকেও শিল্পীরা এসে গান গাইবেন বলে কথা রয়েছে।

কিন্তু এই উৎসব আয়োজন নস্যাৎ করার জন্য একটি পাহাড়ী সন্ত্রাসী সংগঠন গোপন পরিকল্পনা আঁটে। বেশ কিছুদিন যাবত নিজস্ব ব্যাপারে কোনো প্রোগ্রাম করতে না পারায় সার্বজনীন নাগরিক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে বিজু উৎসব আয়োজনের নামে এক বিশাল র‌্যালী করার পরিকল্পনা করে। কিন্তু এই নামে খাগড়াছড়িতে কোনো সংগঠনের অস্তিত্ব নেই। কিন্তু এই সংগঠনটির উদ্যোক্তারা সবাই পাহাড়ী সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ’র সাথে জড়িত। তাদের হীন উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে চাকমা ব্যতিত মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী এ র‌্যালী বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়। র‌্যালীতে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানালে স্থানীয় এমপি তাদেরকে সার্বজনীন র‌্যালী নাম না দিয়ে চাকমা র‌্যালীর নাম করার প্রস্তাব দেয়। কারণ বিজু চাকমাদের অনুষ্ঠান।

সূত্র জানিয়েছে, গতকালের র‌্যালী উপলক্ষে ইউপিডিএফ জেলায় ব্যাপক চাঁদাবাজি করে অর্থ সংগ্রহ করে। তারা খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সাড়ে তিন শতাধিক চাঁদের গাড়ী রিকুইজিশন করে। গতকাল সকাল থেকে ইউপিডিএফ’র নেতাকর্মীরা এসব গাড়িতে করে জেলার মানিকছড়ি উপজেলা সদর ও খাগড়াছড়ি জেলা সদরের দিকে রওনা হয়। এসব গাড়িতে তাদের সশস্ত্র সংগঠনের বিপুল সংখ্যক কর্মী সাধারণ পোশাকে যোগ দেয়। এর বাইরেও জেলার সাধারণ তরুণ যুবকদের বাধ্য করে র‌্যালীতে অংশগ্রহনের জন্য নিয়ে আসে। ইটপাটকেল ও লাঠিসোটাসহ তারা শত শত গাড়ী নিয়ে এগিয়ে আসতে থাকলে পূর্ব থেকেই নাশকতার খবর থাকায় প্রশাসন সেনা, পুলিশ, বিজিবির সহায়তায় তাদের গাড়ীগুলোকে পথেই থামিয়ে দিয়ে পায়ে হেঁটে র‌্যালীতে অংশ নিতে বলা হয়। কিন্তু তারা তা না করে সেখানেই নেমে রাস্তায় অবস্থান করে পুলিশ, সেনাবহিনী, প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে থাকে। ছবি তুলে বিভিন্ন সামাজিক গণমাধ্যমে পোস্ট করে, সাংবাদিকদের মেইল করে খাওয়া দাওয়া করে ফিরে যায়।

SONY DSC

এদিকে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের মধুপুর বাজারে রোববার সকাল ৯টার দিকে এই র‌্যালীকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ সারোয়ার আলম জানান, বৈসাবী উদযাপন কমিটির ব্যানারে র‌্যালির নামে মিছিল বের করতে চাইলে পুলিশ তাতে বাঁধা দেয়। এসময় তারা কোন ধরনের উস্কানী ছাড়াই পুলিশের উপর চড়াও হয়। এসময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় ইউপিডিএফ‘র সন্ত্রাসীদের হামলায় সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ সারোয়ার আলম আহত হন। এসময় আত্মরক্ষার্থে পুলিশ দুই রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ইউপিডিএফ কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ এলটন চাকমা নামে এক ইউপিডিএফ কর্মীকে আটক করে। খাগড়াছড়ি সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: শামসুদ্দিন ভুইয়া জানান, এলটন চাকমা নিয়মিত মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী।
তার বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর জনসভাগামী গাড়ি বহরে গুলিবর্ষণ ও ভাঙচুরের ঘটনাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। সূত্রে জানা গেছে, এলটন চাকমার মুক্তির জন্য স্থানীয় এমপি এবং সরকারের একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টা ফোন করেছিল। কিন্তু তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর গাড়ীবহরে হামলার মামলা থাকায় তাকে ছাড়া হয়নি। এদিকে র‌্যালীর আগেই তারা দৈনিক প্রথম আলোর স্থানীয় ফটোগ্রাফার নীরব চৌধুরী বিটনের উপর হামলা করে আহত করেছে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি অঞ্চলের কমাণ্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল স ম মাহবুব-উল-আলম পার্বত্যনিউজকে বলেন, বিগত সময়ের তুলনায় এবং অন্যান্য দুই পাহাড়ী জেলার চেয়েও অনেক বেশী জাকজমকপূর্ণভাবে এবছর খাগড়াছড়িতে চাকমা-মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠি সামাজিক অনুষ্ঠান বৈসাবী পালন করছে। অন্যান্য বছর ১২ এপ্রিল থেকে বৈসাবী পালন শুরু হলেও এবছর তারও চারদিন আগে ৮ এপ্রিল থেকে বৈসাবীর অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে, যা চলবে আগামী ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত। এ ব্যাপারে প্রশাসন ও সেনাবাহিনী স্থানীয় উপজাতীয় সংগঠনগুলোকে সকল ধরণের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।

তিনি বলেন, এবছরই প্রথম দেশের ও দেশের বাইরের শিল্পীদের সমন্বয়ে খাগড়াছড়িতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের উদ্যোগে সরকারী হাইস্কুল মাঠে আটদিনব্যাপী মেলা চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ মেলায় আগতদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যতম কাজ। খাগড়াছড়িতে অনেক অপরিচিতি লোকের সমাবেশ ঘটেছে। তারা আর্মস জড়ো করেছে বলে আমাদের কাছে খবর ছিল। আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল এতো লোক শহরে জমায়েত করতে পারলে তারা যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে তা মোকাবেলা করা যাবে না। এমন প্রাণবন্ত উৎসব আমেজের মধ্যে আমরা এই ঝুঁকি নিতে চাইনি। দিঘীনালায় ১৫ মার্চে আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই জনগণের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আমরা ঝুঁকি নিতে চাইনি।

এদিকে সেনাবাহিনীর গুইমারা রিজিয়নের রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল আহমেদ পিএসসি বলেন, বৈসাবী উৎসব পালনে কোথাও কোন ধরনের বাধা দেয়ার নজির নেই। এটা একতরফের অপপ্রচার উল্লেখ করে তিনি বলেন, খাগড়াছড়ির প্রতিটি জনপদে স্বাড়ম্বরে বৈসাবী পালিত হচ্ছে। গুইমারা রিজিয়নের উদ্যোগে গুইমারায় তিনদিনব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানেও তাদের হুমকির কথা শোনা যাচ্ছে। তারা এ ও বলেছে তাদেরকে র্যা লি করতে না দিলে তারা পাহাড়ীদের মেলায় আসতে দিবে না।

ইউপিডিএফ গত দুইদিন ধরে মানিকছড়ি, রামগড় ও গুইমারা থেকে ইউপিডিএফ‘র নেতাকর্মীরা স্থানীয় পাহাড়ীদের সংঘবদ্ধ করে একটি পরিস্থিতি তৈরীর চেষ্টা করে যাচ্ছে। এজন্য তারা প্রতিটি উপজেলা থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদাবাজি করেছে। তারা চারটি উপজেলা থেকে ৪৫টি করে গাড়িতে লোক এনে বিশাল সমাবেশ করতে চেয়েছিল। আসলে তারা মানিকছড়িতে তাদের দখল প্রতিষ্ঠা করার ষড়যন্ত্র করছিল বলে আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল। সেখানে এইচএসসি পরীক্ষা চলছে। সেই মাঠেই তারা সমাবেশ করতে চেয়েছিল। এটাতো কোনোভাবেই এলাউ করা যায়না। তিনি বলেন, চাকমা-মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠির প্রতিটি নাগরিক উৎসবমুখর পরিবেশে এখানকার শীর্ষ জনপ্রতিনিধিদের হাতে হাত আর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বৈসাবী পালন করছে। সেখানে ইউপিডিএফ‘র আলাদা করে বৈসাবী পালনের কি আছে এমন প্রশ্ন করে তিনি বলেন, বৈসাবী পালন নয় একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরীই ছিল মুল উদ্দ্যেশ্য।

পাহাড়ের নানামুখী সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সম্ভাবনা থাকলেও কেন পর্যটকরা এখানে আসতে চায় না। শুধুমাত্র নিরাপত্তাহীনতার কারনেই এখানে কেউ আসতে আগ্রহী হয়না। এটা কি দেশের বুদ্ধিজীবীরা বুঝেন না? পাহাড়ের সকল নির্মাণ থেকে কচু, কলা সবকিছু পর্যন্ত ইউপিডিএফকে চাঁদা দিতে হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব কথা কি বুদ্ধিজীবীরা জানে না। তারা এখানে প্যারালাল সরকার তৈরী করে রেখেছে। তাদের কারণে এখানো কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা যাচ্ছে না। শিল্পায়ন হচ্ছে না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ কি মানুষের নিরাপত্তা বিধান করা নাকি ইউপিডিএফসহ সন্ত্রাসীদের নিরঙ্কুশ চাঁদাবাজিতে সহায়তা করা এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, দেশের বুদ্ধিজীবী, বিবেক, গণমাধ্যম এসব বিষয়গুলোকে দেশপ্রেমের নিরীখে দেখবেন বলে প্রত্যাশা রাখি।

এদিকে খাগড়াছড়িসহ তিন পার্বত্য জেলায় জেএসএসসহ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সকল সম্প্রদায় ও সংগঠন মহা সমারোহে বৈসাবী উৎযাপন করছে। তাদের কোথাও কোনো সমস্যা হচ্ছে না দাবী করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই দুই সিনিয়র কর্মকর্তা পার্বত্যনিউজেকে বলেন, আগাম তথ্য ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ায় ইউপিডিএফ’র নাশকতা পরিকল্পনা ভণ্ডুল করা গেছে । তবে এখনই শেষ তা বলা যাচ্ছে না। আগামী ১৭ এপ্রিল বৈসাবী উৎযাপনের শেষ দিন পর্যন্ত এই সতর্কতা বহাল রাখা হবে বলে তাদের মত।

এ বিষয়ে ইউপিডিএফ’র মতামত জানতে সংগঠনটির নেতাদের কয়েকজনের নম্বরে যোগাযোগ করা হলেও কারো নম্বরে সংযোগ পাওয়া যায়নি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন