বর্ণাঢ্য আয়োজনে বান্দরবানে বৈসাবি শুরু

Bandarban pic-3, 13.4

নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দরবান:

বান্দরবানে পিছিয়ে পড়া ম্রো সম্প্রদায় বর্ষবরণ বা বৈসাবি উৎসব পালন করেছে। ম্রোরা নববর্ষকে তাদের ভাষায় চাংক্রান বলে। চাংক্রান উপলক্ষে বৃহস্পতিবার লোকনৃত্য, কোমর তাঁত বুনন ও ম্রোরাদের ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে জেলার বিভিন্ন পাড়া থেকে দল বেধে শত শত যুবক-যুবতী নারী-পুরুষ সদর উপজেলার ভাইট্রা পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে উৎসবে মেতে উঠে। এ উৎসব পরিণত হয়েছে ম্রো সম্প্রদায়ের মিলন মেলা। চাংক্রান উৎসবে যোগ দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি।

ম্রো যুবকরা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিহিত করে মুখে ঠোঁটে টকটকে লাল রং লাগিয়ে আর মাথার খোপায় ও কানে পাহাড়ি ফুল গুজিয়ে উৎসবে আসে। আর যুবতীরা হাতে রুপার কাঁকন, পায়ে বালা ও গলায় রঙবে-রঙের পুঁতির মালা ও রুপার তৈরি গলা থেকে কোমর পর্যন্ত চেইন পরিধান করে চুলের খোপায় নানা রঙের ফুল গুজিয়ে মুখে বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী লাগিয়ে নানা রঙের পোশাকে উৎসবে জড়ো হয়।

Bandarban pic-2, 13.4

চাংক্রান উৎসবে বাঁশির সুরের মূর্ছনায় ঢাকঢোল ও কাঁসার তালে তালে দল বেঁধে লোকনৃত্য মাতিয়েছেন ম্রো তরুণ-তরুণীরা। এছাড়া ম্রো জনগোষ্ঠী লোকসংগীত, কোমর তাঁতে কাপড় বুনন, পুতির মালা গাঁথা ও পিঠা তৈরির প্রতিযোগিতার আয়োজন চলে। শক্তি ও কৌশল খাটিয়ে বাঁশ নিয়ে এক পাড়ার সাথে অন্য পাড়ার যুবক ও বিবাহিতদের চলে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। সবশেষে আয়োজন করা হয় গো হত্যার যুবক-যুবতী নাচ।

এদিকে সকালে ৪ দিনব্যাপী উৎসবের বর্ণাঢ্য আয়োজনে বর্ষবরণ বৈসাবি উৎসব উপলক্ষে র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিটি বান্দরবান শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়। র‌্যালির উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি।

এ সময় বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক, পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) হারুন অর রশীদ উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়াও মারমা, চাকমা, বম, লুসাই, চাকসহ ১২টি ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠির নারী পুরুষ নিজস্ব ঐতিহ্যের পোশাক ও গহনা পরিধান করে নেচে গেয়ে র‌্যালিতে অংশ নেন। তাদের বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের সুর মূর্ছনা ও সংস্কৃতিক ভাবধারা প্রদর্শনের মাধ্যমে নিজস্ব ঐতিহ্যকে তুলে ধরে। এসময় সকলের নজর কাড়ে ম্রো সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী ম্রো নৃত্য। পরে রাজার মাঠে সাংগ্রাই উপলক্ষে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী মার্মা সম্প্রদায়ের বয়োজেষ্ঠ্য পূজা অনুষ্ঠিত হয়।

এদিকে ‘সাংগ্রাইমা, ঞি ঞি ঞা ঞা, রিক্জে গে পা মে’- ‘এসো মিলি সাংগ্রাই এর মৈত্রী পানি বর্ষণের উৎসবে’ ঐতিহ্যবাহী এ মারমা গানের সুর মূর্ছনায় এখন উদ্বেলিত পাহাড়ি জনপদ বান্দরবান।

সোমবার সকালে অতীতের ব্যর্থতা আজ মুছে দিয়ে যায়, নতুনের অঙ্গীকার আর উদ্দীপনায়, ছুটেছি ছুটেছি সম্মুখে ছুটেছি সত্য সুন্দরের সম্ভাবনায় এ বিষয় নিয়ে মারমা সম্প্রদায়ের বর্ষবরণ সাংগ্রাই উৎসবে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়।

Bandarban pic-1, 13.4

শুক্রবার দুপুরে উজানী পাড়া সাঙ্গু নদীর ঘাটে মারমা সম্প্রদায়ের বৌদ্ধমূর্তি স্নান। রাতে চলবে পিঠা তৈরির উৎসব। শনিবার বিকালে উৎসব উদযাপন পরিষদের উদ্যাগে স্থানীয় পুরাতন রাজবাড়ীর মাঠে মৈত্রী পানি বর্ষণ। একই সাথে চলবে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। রাতে মারমা শিল্পী গোষ্ঠির সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শনিবার বিকালে আবারো মৈত্রী পানি বর্ষন, সাংস্কৃতিক উনুষ্ঠান, র‌্যাফেল ড্র ও রাতে স্থানীয় ও মারমা শিল্পী গোষ্ঠির সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

এছাড়াও জেলার সাত উপজেলায়, সদরের রেইছা, সুয়ালক, রাজবিলা, কুহালং এবং রোয়াংছড়ি, থানচি ও রুমা উপজেলায় মারমা, চাকমা, ত্রিপুরা ও তঞ্চঙ্গ্যারা বৈসাবি উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান মালার আয়োজন করেছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন