বর্ণিল আয়োজনে গুইমারাতে পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২১তম বর্ষপূর্তি উদযাপিত

গুইমারা প্রতিনিধি:

শান্তি র‌্যালি, শান্তি মেলা, শান্তি কনর্সাটসহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে খাগড়াছড়ির গুইমারাতে ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২১তম বর্ষপূর্তি পালিত হয়েছে।

রবিবার সকাল ৯টায় ২৪ আর্টিলারী গুইমারা রিজিয়নের উদ্যোগে বিভিন্ন উপজেলার কয়েক হাজার পাহাড়ি-বাঙ্গালী, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনিক বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য এশোভাযাত্রাটি স্কুল মাঠ থেকে শুরু করে গুইমারা রিজিয়ন মাঠে গিয়ে শেষ হয়।

চুক্তির ২১তম বর্ষপূর্তি  উপলক্ষে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরীসহ আমন্ত্রিতদের সাথে নিয়ে ২১টি শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে দুই দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন করেন, গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম সাজেদুল ইসলাম।

র‌্যালি শেষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম সাজেদুল ইসলাম বলেন, শান্তি চুক্তির ফলে পাহাড়ে রক্তক্ষয়ী সংর্ঘষের অবসান ঘটে শান্তির সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। বর্তমান সরকার ও নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা শান্তির এ পক্রিয়াকে অব্যাহত রাখতে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। চুক্তি পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সময়ের দিকে লক্ষ করলেই এ গুরুত্ব উপলব্ধি করা যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি মহল অপপ্রচার চালিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে সব সময় সরকারের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। তাই হিংসা, বিদ্বেষ, রেষারেষি, ছেড়ে সবাই হাতে হাত ধরে দেশকে ভালোবেসে পার্বত্য জনগোষ্ঠির উন্নয়নে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে বিজিবির গুইমারা সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আব্দুল হাই, মাটিরাঙ্গা জোন অধিনায়ক লে. কর্নেল নওরোজ নিকোশিয়ার, সিন্দুকছড়ি জোন অধিনায়ক লে. কর্নেল রুবায়েত মাহমুদ হাসিব, লক্ষীছড়ি জোন অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মিজানুর রহমান, যামিনীপাড়া জোন অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মাহমুদুল হক, পলাশপুর জোন অধিনায়ক লে. কর্নেল সাইফুল্লা মিরাজুল আলম, রামগড় জোন অধিনায়ক লে. কর্নেল তারিকুল হাকিম, রিজিয়ন বিএম মেজর ফাহিম মোনায়েম হোসেন, জিটু মো. পারভেছ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এটিএম কাইছার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার পঙ্কজ বড়–য়া উপজেলা চেয়ারম্যান উশ্যেপ্রু র্মামা, ইউপি চেয়ারম্যান মেমং র্মামা, চাইথোয়াই চেীধুরী ও রেদাক মার্মা বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী বলেন, সকল সমাজে কিছু দুষ্ট লোক থাকে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারই আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর চাঁদাবাজিও নিজেদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী সংর্ঘষের একমাত্র অবসান উল্লেখ করে তিনি বলেন, চাঁদাবাজির টাকায় কুড়ে ঘর থেকে পাকা বাড়ি, সন্তানকে বিদেশে পড়াশোনা করান চাঁদাবাজরা। এসময় তিনি সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন।

১৪ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারী সিন্দুকছড়ি জোন অধিনায়ক লে. কর্নেল রুবায়েত মাহমুদ হাসিব দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রি জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তির ফলে পাহাড়ে যে পরিমান  দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে তার সফলতা একমাত্র সরকার । তিনি বলেন, বর্তমানে যতটুকু শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেটা সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার প্রচেষ্টা  নিরাপত্তাবাহিনীর ত্যাগের বিনিময়ে ।

এদিকে বর্ষপূতি উপলক্ষে সেনাবাহিনীর উদ্যোগে রিজিয়ন মাঠে  দুই দিনব্যাপী  শান্তির মেলা, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ভলিবল খেলার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিবছর এ মেলাটিতে পাহাড়ি-বাঙ্গালীর মিলন মেলায় রুপান্তরিত হয়।

এর আগে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মেমং মার্মা বলেন, পার্বত্য এলাকায় আমরা সবাই একই মায়ের অভিন্ন সন্তানের মত করে বসবাস করছি । এ  অঞ্চলটি আমার মা, শান্তি চুক্তি করে এ অঞ্চলের শান্তি প্রতিষ্ঠিত করেছেন আরেক মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময়ে শান্তি নষ্ট কারীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, কুকিছড়ায় মন্দির ভাংচুর করে গুইমারা তথা পাহাড়ের শান্তি নষ্ট করতে চেয়েছিলো একটি মহল কিন্তু নিরাপত্তাবাহিনী এবং গুইমারার মানুষ তা সফল হতে দেয়নি। ভবিষ্যতেও কেউ সফল হতে পারবে না।

প্রসঙ্গত পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকার ও পার্বত্য চট্রগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতি বছর ২ ডিসেম্বর নানা আয়োজনে উৎসবমূখর পরিবেশে দিনটি পাল করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন