বাংলাদেশেই স্বাধীনভাবে নামাজ ও রোজা পালন করছেন রোহিঙ্গারা

পবিত্র রমজানে রোহিঙ্গারা তাদের স্বদেশের (মিয়ানমার) তুলনায় স্বাধীনভাবে নামাজ ও রোজা পালন করতে পারছেন বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকেই। এমনটাই দাবি করেছেন তারা।

কক্সবাজারে বসতি স্থাপন করা ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গারা তাদের স্বদেশ মিয়ানমারে রাখাইনদের শোষণ-উৎপীড়নের শিকার হয়ে এদেশে পাড়ি জমানো শুরু করেছিলেন ২০১৭ সালের ২৫ আগষ্টে। আরাকান মুসলমানদের উপর এই নির্যাতন-অত্যাচার ও খুনাখুনি প্রথম শুরু হয়েছিল ২০১২ সালের দিকে।

তারা তখন থেকেই বাক স্বাধীনতা কিংবা ধর্ম পালন থেকে শুরু করে প্রতিটি কর্মে পেয়ে আসছিলেন বাঁধা। ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের করা হয়েছিল সর্বস্বান্ত। তারা এই শোষণ থেকে বাঁচার প্রত্যাশায় নাফ নদী পেরিয়ে পা এসেছিলেন বাংলাদেশে। মানবতার দেশ বাংলাদেশের লোকজনও তাদের নিরাশ করেননি বরং আশ্রয় দিয়েছেন বুকে।

প্রসঙ্গ ছিল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী তাদের দেশে (মিয়ানমার) রমজানে কিভাবে নামাজ ও রোজা পালন করতেন। এই প্রসঙ্গে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ১২ এর টুপি ও কোরআন বিক্রেতা নুুুরুল আমিনকে জিজ্ঞাসা করা হলে বলেন, “মিয়ানমারে নামাজ আদায়ে ছিল বড় বাধা।

কখনো দলগতভাবে নামাজ পড়তে পারিনি। দৈনন্দিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ বেশিরভাগ সময়ই বাড়িতে আদায় করতে হতো। মসজিদে গেলেও লুকিয়ে নামজ আদায় করতে হতো”।

তিনি আরো বলেন,”তবে বাংলাদেশে অবস্থান করার পর থেকেই আর যাই করতে পারি না কেন নামাজ ও রোজা নির্দ্বিধায় পালন করতে পারছি।”

এ বিষয়ে ক্যাম্প ১২ এর মসজিদে দায়িত্বরত হাফেজ নুর হাসান আরো পরিষ্কারভাবে বলেন,” আমরা মসজিদে নামাজ পড়তাম মসজিদের অদূরে চার পাশে চৌকি (পাহারাদার) দিয়ে। কারণ কখন না কখন প্রশাসন চলে আসে তার ভয় ছিল প্রতি সেকেন্ডে। একদল জড়ো হয়ে নামাজ আদায় করা কষ্টসাধ্য ছিল। সবাই সম্মিলিত হলেই প্রশাসনের ছিল ব্যাপক বাঁধা।”

মিয়ানমারে রোজা পালনে কি কি বাধা সম্মুখিন করতে হতো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন,”সেহরি ভোজন করতে আলোর প্রদীপ জ্বালানোর সময়ও বাধাগ্রস্থ হতাম। এতরাত জেগে কি করি তাঁর ব্যাখ্যা শোনাতে হতো মিয়ানমার প্রশাসনের কাছে।”

এছাড়া এ বিষয়ে রোহিঙ্গা নেতাদের (মাঝি) প্রশ্ন করা হলে ক্যাম্প- ১২ এর হেড মাঝি পেডান আলি ও মোঃ তোহা জানান,”আমরা আরাকানের মুসলমানরা একসময় ধর্ম পালনসহ বিনা বাধায় ও স্বাধীনভাবে চলতাম-ফিরতাম। কিন্তু ২০১২ সালের পর থেকে আমরা স্বাধীনতা হারা হয়ে যায়। দূর্দশায় পড়ে গেছিলাম ও চলতে ফিরতে ছিল বাধা।

অন্যায় ও অবিচার হচ্ছিল আমাদের সাথে। এরপর থেকে ধর্ম পালনেও ছিল বিরাট বাধা। এমনকি আমরা ঈদের নামাজ আগে ঈদগাহ ময়দানে আদায় করতে পারতাম। পরবর্তিতে তো একত্রিতভাবে নামাজও আদায় করা যেতো না। একত্রে পেলে সবাইকে নিয়ে গিয়ে জরিমানা করতো এবং মারধরের মতোও নৃশংসতা করতো।”

এদেশে রমজানে নামাজ ও রোজা পালনে কেমন বোধ করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন,”নিজের জন্ম ভূমিতে যেভাবে বাঁচার স্বাধীনতা ও স্বাধীনতার সাথে ধর্ম পালন করতে পারিনি সেটা আজ এদেশেই এসে বুঝতে পারছি এবং এদেশে নিজের মত করেই বাধাহীনতার সাথে নামাজ ও রোজা পালন করতে পারছি।”

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা, রোহিঙ্গা ক্যাম্প
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন