‘বাংলাদেশ ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত মুখোমুখি’

1383677_10152388687373636_911016660_n
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র মুখোমুখি বলে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা টাইমস অব ইণ্ডিয়া। ইন্দ্রানী বাগচীর লেখা প্রতিবেদনটি পত্রিকাটি প্রকাশ করেছে ৩০ অক্টোবর। বাংলাদেশস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজেনার দিল্লী সফরের উপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদনটি রচনা করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি নিম্নরূপ:

বাংলাদেশে রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের মন মনকষাকষি – দরকষাকষি। “বাংলাদেশ ইন্ডিয়া এন অড ওভার বাংলাদেশ পলিসি” নামক এক প্রতিবেদনে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, বাংলাদেশে রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে প্রকাশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত দুই দেশকে সমানভাবেই উদ্বিগ্ন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান সংকটাপন্ন অব্স্থায় যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান তাতে ভারত ক্রমেই অস্বস্তিতে পড়ছে। ভারতের বিশ্বাস, বাংলাদেশ ও এ অঞ্চল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নেতিবাচক। আর এসব কারণে বাংলাদেশ বিষয়ে দিল্লির মনোভাব মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গির সাথে ক্রমেই বেখাপ্পা হয়ে পড়ছে।

বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক জটিল পরিস্থিতি সম্পর্কে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সাংঘর্ষিক মনোভাবের কথা তুলে ধরে প্রতিবেদনটিতে আরো জানানো হয়, গত সপ্তাহে দিল্লির সাউথ ব্লক ঘুরে গেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা। এ সময় তিনি যে লম্বা বৈঠক করেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের সাথে। তবে তাদের এই বৈঠকে মতনৈক্য হবার বদলে বেড়েছে দূরত্ব। আর এনিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত দুই দেশের মধ্যে দেখা দি্যেছে মন কষাকষি আর এ নিয়ে চলছে দর কষাকষি।

তারা যখন সাউথ ব্লকে বসে ঢাকায় কার কী নীতি বাস্তাবায়ন হবে তা নিয়ে দুই পক্ষ বোঝাপড়া করছিলেন তখন রাজধানী ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের হরতাল চলছিল। সূত্রের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়া বলেছে, ‘ভারত মনে করছে বিএনপি সহিংসতা বন্ধ করার ব্যাপারে আগ্রহী নয়, তারা তত্ত্বাবধায়কের দাবিতেই অনড় থাকতে চায়।

 আর ভারতে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ বিএনপি যে ধরনের রাজনীতি করছে তার ধরন নিয়ে। ঠিক এই জায়গাতেই যুক্তরাষ্ট্রের সথে ভারতের ‘বিরোধ’। ভারত মনে করে, প্রকাশ্যেই কট্টর হয়ে ওঠা রাজনৈতিক দল বিএনপি-জামায়াতের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। দিল্লির বিশ্বাস, তারা সফল হলে বাংলাদেশ জাতি হিসেবেই সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের হয়ে যাবে। কারণ গত দুই বছরে বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতি অনেক বেশি কট্টর ও চরমপন্থী হয়ে উঠেছে। জামায়াত ও বিএনপি রীতিমত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে ক্রমাগত প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে। আর এবিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব সম্পূর্ণ বিপরীত মুখী।

 শুধু তাই নয়, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জামায়াত-বিএনপির ওপর আল-কায়েদা ও পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বার গুরুতর প্রভাব ও সম্পর্ক সম্পর্কে যে সন্দেহ প্রকাশ করেছে তা নিয়েও রয়েছে মতপার্থক্য। পাকিস্তান ও পশ্চিম এশিয়ার কয়েকটি দেশের কাছ থেকে ব্যাপক আর্থিক তহবিলের যোগান পায় এই গ্রুপগুলো এমনটাই এখন ভারতের দাবি। এছাড়া বিএনপির সাথে ভারতের ভিন্ন অবস্থানের আরো বড় কারণের কথাও বলেছে পত্রিকাটি। পত্রিকাটি মনে করে, ২০০১ সালে পদুয়া-রৌমারি সীমান্তে বিডিআর গণহত্যা চালিয়ে বিএসএফের যে ১৫ জওয়ান নিহত হওয়ায় ঘটনা ঘটিয়েছে তার জন্য বিএনপিকে বিশ্বাস করতে পারে না ভারত। এই ঘটনা ভারত কোনোভাবেই ভুলতে পারছে না বলে জানিয়েছে পত্রিকাটি। বিএনপিতে ভারতের স্বাচ্ছন্দ্য না পাওয়ার আরো কারণ হল, জামায়াতকে নিয়ে তাদের আন্দোলন ও সরকার গঠন। জামায়াতের সাথে বিএনপির সম্পর্ক ভারত মেনে নিতে পারছে না।

পত্রিকাটি বলছে, এছাড়া বিএনপির প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঝোঁকটা আরো নানা কারণেও হতে পারে। প্রথমত ইতোমধ্যে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এবং আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব ড. মুহম্মদ ইউনূসের সাথে গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে হাসিনার মারাত্মক বিরোধ ঘটে গেছে। হাসিনা-ইউনূসের এই বিরোধ পদ্মা সেতু পর্যন্তও গড়িয়েছিল। একই সাথে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে ক্যালেঙ্কারি এবং যুদ্ধাপররাধ ট্রাইবুনালসহ নানা কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি-জামায়াত জোটেই সম্পর্ক খুঁজে নিতে চায়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

One Reply to “‘বাংলাদেশ ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত মুখোমুখি’”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন