বাইট্টাপাড়ায় নির্মাণ হচ্ছে লংগদু ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, সুবিধা বঞ্চিত হবে সড়ক যোগাযোগ বিহীন উপজেলার অধিকাংশ এলাকা


লংগদু প্রতিনিধি:
রাঙামাটির লংগদু উপজেলায় নির্মাণ হতে যাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন। বাইট্টাপাড়া বাজার সংলগ্ন এলাকায় তেত্রিশ শতক জায়গা অধিগ্রহণ করে সেখানে সাইনবোর্ড স্থাপন করে প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। দীর্ঘ দুই যুগ ধরে লংগদু উপজেলাবাসী একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের জন্য দাবী করে আসছিলো। অবশেষে উপজেলাবাসীর সেই দাবীটি এখন বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। তবে লংগদু সদর মাইনীমুখ এবং আদারকছড়াবাসী এর সুবিধা পেলেও সড়ক যোগাযোগ না থাকায় ফায়ার সাভির্সের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে উপজেলাধীন কালাপাকুইজ্যা, গুলশাখালী, বগাচত্তর, ভাসাইন্যাদম ইউনিয়নবাসী। তাই যে সকল হাট-বাজার বা এলাকার সাথে উপজেলা সদররের সড়ক যোগাযোগ নেই সেখানে নৌ-পথে ব্যবহার্য একটি ফায়ার সার্ভিসের ব্যবস্থা করা গেলে বাকী হাটবাজারগুলো অগ্নিকান্ডের ক্ষয়-ক্ষতি থেকে অনেকাংশে রেহাই পেত বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

লংগদুতে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণের জন্য গত ৪ এপ্রিল রাঙামাটি জেলা ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক মো. দিদারুল আলমের নেতৃত্বে একটি টিম কাজ শুরু করেছেন। তারা উপজেলা সদরের কাছে বাইট্টাপাড়া বাজার সংলগ্ন এলাকায় তেত্রিশ শতক জায়গা অধিগ্রহণ করে সেখানে সাইনবোর্ড স্থাপন করেছেন। টিমের অন্যান্য সদস্য ছিলেন রাঙামাটি জেলা ভূমি অফিসের কানুনগো ম্রাগ্যা মারমা, রাঙামাটি গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম। লংগদু থানা পুলিশ এসময় উপস্থিত ছিলেন।

রাঙামাটি জেলা ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক মো. দিদারুল আলম বলেন, আমরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের জন্য জেলা প্রশাসকের নির্দেশে জায়গা পরিমাপ করে এবং সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছি। এবার গণপূর্ত বিভাগ, রাঙামাটি নির্মাণ কাজটি বাস্তবায়ন করবে।

লংগদুতে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে দেখে এলাকার সচেতন মহলের অনেকেই কর্তৃপক্ষকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য রাঙামাটি জেলার মধ্যে লংগদু উপজেলা হচ্ছে সবচেয়ে জনবহুল একটি উপজেলা। উপজেলার অধিকাংশ এলাকা কাপ্তাই হ্রদ বেষ্টিত হওয়ার কারণে এখানে মৎস্য আহরণ, উৎপাদন, কৃষিজ পণ্য উৎপাদন এবং ব্যবসা বাণিজ্যের দিক থেকে এই উপজেলার গুরুত্ব রয়েছে। দূর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে হাতে গোনা কয়েকটি সাপ্তাহিক হাটবাজার ছাড়া আর তেমন কোন ব্যবসাকেন্দ্র গড়ে উঠেনি। বা কোথাও কোথাও গড়ে তোলার চেষ্টা করা হলেও তা ফলপ্রসু হচ্ছে না। কিন্তু যে কয়টি ব্যবসা কেন্দ্র আছে তার মধ্যে মাইনীমুখ বাজার হচ্ছে সর্ববৃহত ও গুরুত্বপূর্ণ। আবার সাপ্তাহিক বাজার হিসেবে করল্যাছড়ি বাজার, কাট্টলী বাজার, ভাইবোনছড়া বাজার, বৈরাগী বাজার জমজমাট হচ্ছে।

এখানে মাইনীমুখ বাজার ও উপজেলা সদরের সাথে করল্যাছড়ি বাজারের একমাত্র সড়ক যোগাযোগ রয়েছে। বাকী সব হাট-বাজারের সাথে নৌপথ ছাড়া যোগাযোগের আর কোন ব্যাবস্থা নেই। এই সব হাটবাজার, ব্যবসাকেন্দ্র, গ্রাম, পাড়া বা মহল্লায় বার বার অগ্নি দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। এর ফলে ক্ষতি শুধু ব্যাক্তি বা এলাকার নয় এটা দেশের অর্থনীতির জন্যেও ক্ষতিকর বলে মনে করেন সচেতন মহল।

মাইনীমুখ বাজারের বিশিষ্ট্য ব্যবসায়ী মো. শামসুল হক সওদাগর জানান, উপজেলার একটি বৃহত্তর ব্যবসা কেন্দ্র মাইনীমুখ বাজারটি সৃষ্টির পর থেকে আট থেকে নয়বার অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর ফলে অনেক ব্যবসায়ী বার বার অগ্নিকান্ডে শিকার হয়ে নিঃশ্ব হয়ে গেছে। যার ফলে এই বাজারের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারে দিক থেকে অনেক পিচিয়ে পড়েছে।

লংগদু উপজেলার প্রবীণ সাংবাদিক ও শিক্ষক মো. এখলাস মিঞা খান জানান, মাইনীমুখ বাজার, লংগদু সদর ব্যবসা কেন্দ্র, করল্যাছড়ি বাজার একাদিকবার অগ্নিকান্ডে ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে। একটি ফায়ার সার্ভিস থাকলে অনেকাংশে রক্ষা পেত। তিনি আরো বলেন, এই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে হাট-বাজারগুলো কাপ্তাই হ্রদ বেষ্টিত। তাই যে সকল হাট-বাজার উপজেলা সদররের সাথে সড়ক যোগাযোগ নেই সেখানে নৌ-পথে ব্যবহার্য একটি ফায়ার সার্ভিসের ব্যবস্থা করা গেলে বাকী হাটবাজারগুলো অগ্নিকান্ডের ক্ষয়-ক্ষতি থেকে অনেকাংশে রেহাই পেত।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন