বান্দরবানের দুই ত্রিপুরা কিশোরীর প্রাথমিক ডাক্তারী পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত মেলেনি: ১ আসামী আটক

বান্দরবান ও লামা প্রতিনিধি:
লামার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের রামগতি ত্রিপুরা পাড়ায় দুই ত্রিপুরা কিশোরী ধর্ষণের ঘটনায় জনেরুং ত্রিপুরা (৩০) নামক এক গৃহিনীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে দুই কিশোরী ধর্ষণ মামলার এজহারে নামীয় ৪ নং আসামী ও তিন সন্তানের জননী। লামা থানা অফিসার ইনচার্জ অপ্লেলা রাজু নাহা জানান, জনেরুং ত্রিপুরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছে, ধর্ষণ মামলার অপর আসামী বিজিবি নায়েক রবিউল ইসলাম, সদস্য সুমন ও ফারুক নামক কাউকে সে চিনে না। ধর্ষণ ঘটনার বিষয় সম্পর্কে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই। এদিকে পুলিশ শনিবার বিকেলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করলে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

উল্লেখ্য, ধর্ষণের শিকার কিশোরীরা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিল, বিজিবি সদস্যরা জানেরুং ত্রিপুরার মুঠোফোনে ফোন দিয়ে তাদের দু’জনকে পাড়ার বাইরে ডেকে নেন। তারা যেতে চাইছিল না। তখন দিদি তাদের বলেন যে, না গেলে অসুবিধা হবে। এ কথায় ভয় পেয়ে তারা সেখানে গেছে।

বান্দরবান সিভিল সার্জন অংশৈপ্রু পার্বত্যনিউজকে জানিয়েছেন ধর্ষণের শিকার দুই কিশোরীর মেডিকেল পরীক্ষার জন্য শুক্রবার বোর্ড গঠন করা হয় এবং তাদের ডাক্তারী পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি আর বিস্তারিত জানাতে রাজি হন নি। মেডিকেল বোর্ড নিরপেক্ষ ও অবিতর্কিত করার জন্য সিভিল সার্জন বোর্ডের সদস্য হিসেবে পাহাড়ী ও বাঙালী সম্প্রদায়ের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠন করেছেন। তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের সভাপতি হচ্ছেন, ডা. শারমিন নাহার বাশার, সদস্য হচ্ছেন, ডা. চিং ম্রা সাং ও ত্রিভা তঞ্চঙ্গা।


এ বিষয়ে আরো পড়ুন:

বান্দরবানে দুই ত্রিপুরা কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে তিন বিজিবি সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা


তবে স্থানীয় একটি বিশ্বস্ত সূত্র পার্বত্যনিউজকে নিশ্চিত করেছে, প্রাথমিক ডাক্তারী দুই কিশোরীর শরীরে ধর্ষণের কোনো আলামত বা চিহ্ন পাওয়া যায় নি। তবে অধিকতর তদন্তের জন্য কিছু আলামত চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে।ডাক্তারী পরীক্ষার পর আজ তাদেরকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। আগামীকাল দুই কিশোরীর বয়স নিরূপনের জন্য, অধিকতর পরীক্ষার জন্য তাদেরকে চট্টগ্রাম পাঠানো হবে। সেখান থেকে রিপোর্ট পাওয়া গেলে সবকিছু নিশ্চিত হওয়া যাবে।

সূত্রটি পার্বত্যনিউজকে আরো জানিয়েছে, তাদের প্রাথমিক তদন্তেও ধর্ষণের ঘটনার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি। তাদের তদন্তে দেখা গেছে, মূলত অত্র এলাকায় বিগত কয়েক মাস যাবত পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজী ও সন্ত্রাস ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। এর প্রেক্ষিতে ত্রিশডেবা বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা টহল বৃদ্ধি করায় সন্ত্রাসীদের কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে পড়ে। ফলে সন্ত্রাসীরা স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্প প্রত্যাহারের জন্য দাবী জানিয়ে আসছিলো। এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবেই এ ধর্ষণের ঘটনা সাজানো হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, চুড়ান্ত ডাক্তারী পরীক্ষায় যদি ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর যদি ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত না হলে, তবে রাষ্ট্রীয় একটি বাহিনীর ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করার অপরাধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহিল বাকী জানান, দুই কিশোরীর ২২ ধারা জবানবন্দির জন্য আদালতে প্রেরণ করা হবে এবং তাদের বয়স পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে প্রেরণ করা হবে।

বনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ময়েইথিং মার্মা পার্বত্যনিউজকে জানান, ধর্ষণের শিকার দুই কিশোরী তার বিদ্যালয়ের পঞ্চম ছাত্রী নয়। গত ২০১৬ সনে তারা অত্র বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণী হতে ঝরে পড়ে।

ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ লামা উপজেলার সেক্রেটারী অংশেপ্রু ত্রিপুরা ও ত্রিপুরা স্টুডেন্ট ফোরামের নেলসন ত্রিপুরা পার্বত্যনিউজকে জানিয়েছেন ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশ নিয়ম মোতাবেক তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি তদন্ত পূর্বক প্রকৃত ঘটনা বের হয়ে আসবে এবং দোষীদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।

বিজিবির নাইক্ষ্যংছড়ি জোন কমান্ডার লে. কর্ণেল আসাদুজ্জামান পার্বত্যনিউজকে জানান, রবিউল ইসলাম, ফারুক ও সুমন নামে কোন বিজিবি সদস্য ত্রিশডেবা বিজিবি ক্যাম্পে কর্মরত নেই। বিজিবির ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করতে কেউ ছদ্মনাম ব্যবহার করেছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্তৃপক্ষ নিয়ম মোতাবেক কার্যক্রম গ্রহণ করবেন। ত্রিশ ডেবা বিজিবি ক্যাম্পের ব্যপারে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দীর্ঘ দিন থেকে অপতৎপরতা চালিয়ে আসছে বলেও তিনি জানান।

লামা থানার অফিসার ইনচার্জ অপ্লেলা রাজু নাহা পার্বত্যনিউজকে জানান, মামলা হওয়ার পর থেকেই পুলিশ গুরুত্বের সাথে মামলাটি তদন্ত করছে।

উল্লেখ্য যে, গত ২২ আগস্ট দুই ত্রিপুরা কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছে মর্মে অভিযোগ এনে শুক্রবার লামা থানায় তিন বিজিবি সদস্যসহ চার জনকে আসামীকরে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা দায়ের করেছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন