বান্দরবানে অর্ধশতাধিক অবৈধ ইট ভাটায় পাহাড় কেটে ভাটা প্রস্তুত কার্যক্রম চলছে


লামা প্রতিনিধি:

লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় অর্ধশতাধিক ইট ভাটায় পাহাড় কেটে ইট ভাটা নির্মাণ ও পরিচালনা কার্যক্রম চলছে। অবৈধ ইট ভাটায় পাহাড় কাটার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে অত্যাধুনিক বোল্ড ড্রোজার, এ্যাক্সক্যাভেটর ।

শুধুমাত্র লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নেই অবৈধভাবে ২৪টি ইট ভাটা স্থাপন করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে অবৈধ ইট ভাটা স্থাপন ও পরিচালনা করার অভিযোগ সর্বমহলের। পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বে থাকা

পরিচালক যুগ্ম সচিব মকবুল হোসেন জানিয়েছেন, অবৈধভাবে ইট ভাটা  বন্ধে প্রশাসনিক সকল দায়িত্ব জেলা প্রশাসকের। আমার জানামতে বান্দরবান জেলায় ইট ভাটা স্থাপনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ধরণের ছাড়পত্র নাই।

বান্দরবান জেলা আইন শৃংঙ্খলা কমিটির সভায় অবৈধ ইট ভাটা বন্ধ করার বিষয়ে একাধিকবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলেও মাঠ পর্যায়ে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হওয়ায় পরিবেশ সচেতন মহল বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও বান্দরবান আসনের সংসদ সদস্য বীর বাহাদুর ঊশৈসিং এমপি জেলা আইন শৃংঙ্খলা কমিটির সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, উন্নয়নের জন্য ইটের প্রয়োজন আছে। তাই বলে  এটাকে পুঁজি করে ফাইতং ইউনিয়নেই ২৪টি ইট ভাটা স্থাপন কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে বান্দরবান জেলার লামা, বান্দরবান সদর, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়িতে অর্ধশতাধিক ইট ভাটা স্থাপনের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। গত আগষ্ট থেকে ইট ভাটা সমূহে ভোল্ড ড্রোজার ও এ্যাক্সক্যাভেটর দিয়ে পাহাড় কেটে ভাটার মাটি প্রস্তুত করা হয়েছে। বর্তমানেও কিছু কিছু ইট ভাটায় পাহাড় কেটে মাটি কাটার কাজ চলছে।

লামা উপজেলা ফাইতং ইউনিয়নের রাম্যখোলা, শিবাতলী পাড়া, কুইজ্যাখোলা, হরিণ খাইয়া, বড়বিল, বাঙ্গালী পাড়ায় ২৪টি ইট ভাটায় নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ইট পোড়ানো শুরু হবে। এছাড়াও গজালিয়া, সরই, ছাগলখাইয়া, হারগাজা, মালুম্যাসহ বান্দরবান সদর, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়িতে আরো ৩০টি অবৈধ ইট ভাটা প্রস্তুত করা হয়েছে। গত বছরও ফাইতং ইউনিয়নে ২২টি অবৈধ ইট ভাটায় ইট পোড়ানো হয়েছে। বর্তমান বছরে আরো ২টি নতুন করে বাড়ানো হয়েছে।

ফাইতং ইউবিএম ব্রিকস এর পরিচালক কবির আহম্মদ জানান, ইট ভাটা স্থাপনের বিষয়ে আমরা হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছি। তবে পরিবেশ সম্মতভাবে ইট ভাটা স্থাপন ও পরিচালনার জন্য আমাদেরকে বলা হয়েছে। ফাইতং ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন জানিয়েছেন, ফাইতং ইউনিয়নের ইট ভাটা স্থাপনের বিষয়ে কোন ধরণের ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করা হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা উক্যমং ও হারিছ জানিয়েছেন, একই ইউনিয়নে ২৪টি ইট ভাটা স্থাপনের কারণে জনবসতি ও জীব বৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। এলজিইডির ও সড়ক বিভাগের একাধিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অবৈধ ইট ভাটার ইট পরিবহনের কারণে সরকারের কোটি কোটি টাকার সড়ক, ব্রিজ, কালভার্ট সহ স্থাপনা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

বান্দরবান জেলা আইন শৃংঙ্খলা কমিটির গত ২৮ জুনের রাজস্ব সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক বান্দরবান সদর ও লামা উপজেলায় স্থাপিত অবৈধ সকল ইট ভাটা বন্ধ করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার লামা ও বান্দরবান সদরকে নির্দেশ দিয়ে গত ৫ জুলাই পত্র ইস্যু করা হয়েছে।

লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয় হতে গত ১৭ আগষ্ট সকল অবৈধ ইট ভাটার মালিকদেরকে অবৈধ ইট ভাটা পরিচালনা কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য পত্র দেওয়া হয়েছে। ভূমি অফিসের জনৈক কর্মচারী জানিয়েছেন, অবৈধ ইট ভাটার মালিকগণ ভাটা বন্ধের পত্র পেয়ে বিষয়টিকে হাস্যকর ভাবে উড়িয়ে দিয়েছেন। লামা থানা অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, ইট ভাটায় পাহাড় কাটার দায়ে ৫টি বোল্ড ড্রোজার জব্দ করা হয়েছে।

লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার খিন ওয়ান নু জানিয়েছেন, লামা উপজেলার কোন ইট ভাটার লাইসেন্স নাই। অবৈধ ইট ভাটায় পাহাড় কাটার দায়ে সম্প্রতি ৪টি ইট ভাটার মালিককে ৮ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, অবৈধ ইট ভাটা বন্ধে অভিযান পরিচালনার বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও উপজেলা প্রশাসনের এখতিয়ারভুক্ত।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক বলেছেন, পরিবেশের ক্ষতি করে এমন কোন কাজ আমরা করতে দেব না।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন