বান্দরবানে রাজপূন্যাহ ছাড়াই খাজনা আদায়

স্টাফ রিপোর্টার, বান্দরবান:
বান্দরবান বোমাং সার্কেলের ঐতিহ্যবাহী রাজপূন্যাহ্ অনুষ্ঠান ছাড়াই ১৭ তম রাজা প্রকৌশলী উচ প্রু চৌধুরী হেডম্যান কারবারীদের কাছ থেকে জুমকর আদায় করেছেন। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান রাজপূন্যাহ বা প্যইজ্ঞারার মাধ্যমে বোমাং সার্কেলের রাজাকে খাজনা দেয়ার প্রথা চালু থাকলেও ইতিহাসের এই প্রথম এ ধরনের ঘটনা ঘটলো। এ নিয়ে অন্যান্য রাজপরিবারের সদস্যা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে রাজপরিবারের পক্ষ হতে বলা হচ্ছে গত বছর আর্থিক সংকটের কারনে রাজপূন্যাহ্ না হওয়ায় তার খাজনাগুলো এ বছর আদায় করা হচ্ছে।

জানা যায় বোমাং রাজা প্রকৌশলী উচ প্রু চৌধুরী সম্প্রতি তার সার্কেলের হেডম্যানরা কারবারীদের কাছ থেকে খাজনা (জুমকর) আদায়ের জন্য চিঠি দেন। রাজার চিঠির প্রেক্ষিতে হেডম্যানরা তাদের পাড়ার কারবারীদের কাছ থেকে জুমকর আদায় করে তা রাজার কাছে জমা দেন।

মূলত পাহাড়ে জুম উঠে যাওয়ার পর জানুয়ারী ফেব্রুয়ারী মাসের দিকে জুমচাষীদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করা হয়। এ সময় রাজার পক্ষ হতে রাজপূন্যার আয়োজন করা হয়ে থাকে। রাজপূন্যায় রাজা আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করেন। কিন্তু বছরের বৈশাখ জৈষ্ঠ মাসে পাহাড়ে জুম করা হয়। আগাছা পুড়িয়ে ফসল বোনা হয় পাহাড়ের ঢালে। বছরের মাঝামাঝি সময়ে জুমকর দিতে গিয়ে অনেককেই শিমশিম খেতে হয়েছে। থানছি, রুমা এলাকার অনেক পাড়ার কারবারী ও জুমচাষিরা খাজনা দিতে পারেনি।

চেমী মৌজার হেডম্যান পুলু প্রু মার্মা জানান, জুমকর দেয়ার রাজার চিঠি পাওয়ার পর তিনি তার মৌজার পাড়া প্রধান ও জুমচাষিদের চিঠি দিয়ে কর আদায় করেছেন এবং তা রাজার কাছে জমাও দিয়েছেন। গত বছর রাজপূন্যাহ্ না হওয়ার কারণে এবার রাজা সে সময়ের খাজনা নিচ্ছেন বলে তিনি জানান।
নোয়াপতং মৌজার হেডম্যান ম্যাচিং মার্মা জানান রাজার চিঠির প্রেক্ষিতে তিনিও খাজনা দিয়েছেন। তিনি জানান প্রতিবছর রাজপূন্যাহর মাধ্যমে রাজাকে খাজনা দেয়া হলেও এবার কোন অনুষ্ঠান ছাড়াই রাজা এই খাজনা নিয়েছেন।

রাজপরিবারের অন্যান্য সদস্যরা জানান, বোমাং সার্কেলের ঐতিহ্য রক্ষা কর রাজাদের কর্তব্য। প্রথা ভঙ্গ করা কোন ভাবেই ঠিক নয়। এ বিষয়ে ১৭ তম রাজা উচ প্রু চৌধুরীর সাথে যোগযোগ করা হলে তিনি অসুস্থ্য বলে জানান। এ বিষয়ে পরে কথা বলার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।

প্রসঙ্গত ১৮৭৫ সাল থেকে বোমাং সার্কেলে রাজপূন্যাহ্ অনুষ্ঠান হয়ে আসছে। কালের বিবর্তনে এই রাজপূন্যাহর ঐতিহ্য এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। শুধু প্রতীকি হিসেবে বোমাং  রাজারা এই উৎসব করে থাকেন। ১৬ তম রাজা কে এস প্রু চৌধুরীর মৃত্যুর পর ১৭ তম রাজা হিসেবে প্রকৌশলী উচপ্রু চৌধুরী দায়িত্ব গ্রহন করেন।
রাজপরিবার সূত্রে জানা গেছে বোমাং রাজা উচপ্রু চৌধুরী হ্রদ যন্ত্রের সমস্যার কারনে বর্তমানে তিনি অসুস্থ রয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: বান্দরবান, রাজপূন্যাহ্
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন