Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

বিদেশীদের চোখে রোহিঙ্গা নিমূর্লের হৃদয়বিদারক বর্ণনা

ডেস্ক নিউজ:
মিয়ানমারে একদল বিদেশী এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী রাখাইনের রোহিঙ্গাদের নিয়ে আলাপ করছিলেন। বিদেশীদের মধ্যে আমিও ছিলাম সেখানে। আলাপকালে একজন বর্মি বলল, রোহিঙ্গারা যদি কুকুরের মতো হয় ওদের সবাইকে মেরে ফেলা উচিত।

কোনো সমাজে যখন একটি গোষ্ঠীকে আর মানুষ হিসেবে গণ্য করা হয় না এবং সেটি যখন সমাজে স্বাভাবিক ব্যাপার বলে গ্রহণযোগ্যতা পায় আমার কাছে এটাই জাতিগত নির্মূল শুরুর একটা আলামত।
কথাগুলো বলছিলেন ক্যারোলাইন ভ্যানডেনাবিলি যিনি মিয়ানমারে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জাতিসঙ্ঘের আবাসিক সমন্বয়ক দফতরের প্রধান ছিলেন। এ ছাড়া মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশে তিনি ত্রাণকর্মকর্তা হিসেবেও কাজ করেছেন।

বিবিসির কাছে তিনি বলেন, জাতিগত নির্মূলের চেষ্টা কিভাবে শুরু হয়, তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আমার আছে। রুয়ান্ডা গণহত্যার আগে ১৯৯৩-৯৪ সালে আমি সেখানে নিজের চোখে দেখেছেন কী ঘটেছে। মিয়ানমারে এসে যখন পৌঁছাই, তখন এখানেও সেই একই দৃশ্য দেখেছি আমি।

প্রফেসর মং জানি বলেছেন, রাখাইনে ‘এথনিক ক্লিনজিং’ বা জাতিগত উচ্ছেদের চেয়েও বেশি কিছু চলছে। ‘এথনিক ক্লিনজিং’ হলো শুধু একটা বিশেষ জায়গা থেকে মানুষজনকে উচ্ছেদ করে দেয়া। কিন্তু এটা তার চেয়েও ভয়াবহ।

কারণ সেখানে একটা নীতি আছে যে, রোহিঙ্গা মানুষদের জন্য এমন একটা পরিবেশ-পরিস্থিতি তৈরি করা হবে যাতে তারা শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে যায় এবং গোষ্ঠীগতভাবে সমূলে উৎপাটিত হয়। তারা যাতে পুষ্টি না পায় সে জন্য তাদের বাইরের চলাচল সঙ্কুচিত এবং নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়। চাষবাস ও মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়।

মং জানি মিয়ানমারের নাগরিক। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উইসকসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণহত্যাবিষয়ক গবেষক এবং মানবাধিকার আন্দোলনের কর্মী। তার চাচা রোহিঙ্গা এলাকায় সেনা কমান্ডার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন এক সময়। গত বছর তিনি মারা গেছেন।

মং জানি বলেন, সেনাবাহিনী রাখাইনের বৌদ্ধ এবং রোহিঙ্গা মুসলমানদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে একে অপরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। সেনাবাহিনী মনে করে রোহিঙ্গারা বার্মার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য প্রধান হুমকিস্বরূপ। তার একমাত্র কারণ, তারা মুসলমান। তাই পরিকল্পনা করা হলো সবাইকে উচ্ছেদ করতে হবে। আপনি নিজের চোখে না দেখলে কখনোই বুঝতে পারবেন না যে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী একটা বিশাল কারাগারের মধ্যে বন্দী।

রোহিঙ্গা যুবকদের দেখুন তাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই, যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। শিশুসহ মানুষ পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। মানুষ যখন পালিয়ে যাচ্ছে তখনো সেনাবাহিনী পেছন থেকে গুলি করছে। স্পিডবোটে ধাওয়া করে, হেলিকপ্টার থেকে পলায়নরত মানুষের ওপর গুলি করা হচ্ছে। তারা রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যেতে বাধ্য করছে এবং একই সাথে চাচ্ছে যত বেশি হত্যাযজ্ঞ চালানো যায়। সুতরাং এটা একইসাথে গণহত্যা এবং এথনিক ক্লিনজিং বা জাতিগত উচ্ছেদ।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সিনিয়র গবেষক তেজশ্রী থাপা বলেন, বাস্তব অবস্থা খুব খারাপ। কোনো ছবি দিয়ে সেটি বর্ণনা করা সম্ভব নয়। আমি অনেক শরণার্থীর সাথে কাজ করেছি। কিন্তু কোনো শরণার্থীর এতটা বিধ্বস্ত অবস্থায় পাইনি।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ক্রাইসিস রেসপন্স বিভাগের পরিচালক তিরানা হাসান এক বিবৃতিতে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার থেকে বিতাড়নের জন্য মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী রাখাইন রাজ্যে সুনির্দিষ্টভাবে প্রচারাভিযান চালিয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের কাছে অকাট্য প্রমাণ রয়েছে। এটা জাতিগত নির্মূল। সেখানে ছকে বাঁধা নিয়মে ও পূর্বপরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার চালানো হচ্ছে। নিরাপত্তা বাহিনী একেকটি গ্রাম প্রথমে ঘিরে ফেলছে, পরে গুলি করছে এবং আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। আইনি ভাষায় এটাকে বলা হয় মানবতাবিরোধী অপরাধ।

ডিকশনারিসহ বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক জাতিগত নিধন বা নির্মূলের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, কোনো একটি জাতি বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে অপর একটি জাতি বা ধর্মীয় গোষ্ঠী কর্তৃক পরিককিল্পতভাবে তাদের আবাসভূমি থেকে উচ্ছেদ করা। এ জন্য জোর প্রয়োগ করা, ভয়ভীতি দেখানো, গণহত্যা এবং গণহত্যামূলক ধর্ষণের আশ্রয় নেয়া হয়।

সাবেক যুগোস্লাভিয়ায় আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন খতিয়ে দেখার জন্য গঠিত কমিশন জাতিগত নির্মূলের যে সংজ্ঞা দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, জোর করে বা ভয়ভীতি দেখিয়ে কোনো একটি নৃগোষ্ঠীকে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়া। এ ছাড়া উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোনো একটি নৃতাত্ত্বিক বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে অপর একটি নৃতাত্ত্বিক বা ধর্মীয় গোষ্ঠী কর্তৃক জোর করে, ভয়ভীতি দেখিয়ে বা সন্ত্রাসের মাধ্যমে সরিয়ে দেয়াও জাতিগত নির্মূলের মধ্যে পড়ে।

এ জন্য হত্যা, নির্যাতন, জোরপূর্বক গ্রেফতার, বন্দীকরণ, বিচার ছাড়া হত্যা, ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, নির্দিষ্ট এলাকায় জনগণকে সীমাবদ্ধ করে রাখা, জোরপূর্বক তুলে নেয়া, স্থানচ্যুত করা, উদ্দেশ্যমূলকভাবে সামরিক হামলা, ভয়ভীতি দেখানো, সম্পত্তি বিনাশ করাসহ অব্যাহতভাবে আরো অনেক পন্থার আশ্রয় নেয়া হয়।
এ ছাড়া জাতিগত নিধনের জন্য ওই জাতির ওপর পরিকল্পিতভাবে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়াসহ আরো অনেক ঘৃণ্য নীতি অবলম্বন করা হয় যার মাধ্যমে ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যায় একটি জাতি। জাতিগত নির্মূল বা নিধন বিষয়ে ওপরে যেসব উপায়ের কথা বলা হয়েছে তার চেয়েও ভয়াবহ এবং ঘৃণ্যসব পন্থা অবলম্বন করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের নির্মূলের জন্য।

রাখাইন গণহত্যার বিচারে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক গণ আদালত। আদালতের বিচার চলাকালে গত ১ অক্টোবর শুনানিতে অংশ নেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজ্ঞ এবং মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত গণহত্যা-সংক্রান্ত সাবেক বিশেষজ্ঞ গ্রেগরি স্ট্যানটন। তিনি শুনানিতে বলেন, সু চির সরকারের সংঘটিত ‘জেনোসাইডাইল ম্যাসাকার’ বা গণহত্যামূলক নিধনযজ্ঞ আন্তর্জাতিক আইনে ‘নবম ও দশম স্তরে’ পৌঁছে গেছে। নবম ধাপ হলো নিশ্চিহ্নকরণ বা এক্সটারমিনেশন এবং দশম ধাপ হলো প্রত্যাখ্যান করা। সু চি রাখাইনে গণহত্যা, নিধনযজ্ঞসহ সব অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করছেন।

জাতিগত নির্মূলের চেয়েও ভয়াবহ বর্মি পৈশাচিকতা
রোহিঙ্গা মুসলমানদের মিয়ানমারের জন্য প্রধান হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে দেশটির সেনাবাহিনীসহ অনেকে। সে জন্য রোহিঙ্গারা যাতে কোনো দিন সোজা হয়ে দাঁড়াতে না পারে তার জন্য যত ধরনের হিংস্র আর ঘৃণ্য পন্থা অবলন্বন করা যায় তার সবই করেছে তারা। কয়েক বছর পর পর গণহত্যা, গণধর্ষণ আর জ্বালাও-পোড়াও অভিযান চালায় তারা। এ সময় বেছে বেছে যুবকদের হত্যা করা হয়। হত্যা করা হয় যুবতী নারীদেরও ধর্ষণ শেষে। ধ্বংস করে তাদের সব সহায় সম্পদ।

এরপর প্রাণ রক্ষায় যারা অন্যত্র পালিয়ে যায় তাদের অনেকে আবার একদিন ফিরে আসে আপন ভিটায়। সহায় সম্বল আর স্বজন হারানোর শোকে তখন তারা থাকে শোকাহত আর নিঃস্ব, অসহায়। কয়েক বছরের সাধনার পর যখন তারা একটু সোজা হয়ে দাঁড়ায় তখন আবার শুরু হয় গণহত্যা, গণধর্ষণ আর জ্বালাও-পোড়াও অভিযান। ১৯৬২ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে সেনাবাহিনী চালিয়ে যাচ্ছে এ পৈশাচিকতা। এভাবে একটি জাতিকে তিলে তিলে নিঃশেষ করে দেয়ার নীতি গ্রহণ করেছে তারা।

গণহত্যা, গণধর্ষণ, উচ্ছেদ এগুলো জাতিগত নির্মূলের একেকটি উপায়মাত্র। জাতিগত নির্মূলের আরো অনেক উপায় রয়েছে। হত্যা, ধর্ষণ ছাড়াও রোহিঙ্গাদের ধীরে নিঃশেষ করে দেয়ার জন্য মিয়ানমার সরকার আরো যেসব ঘৃণ্য পথ অবলম্বন করে চলছে তার মধ্যে রয়েছে জোর করে চাপিয়ে দিয়েছে জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। বিয়েতেও আরোপ করেছে কঠোরতা। তাদেরকে সব ধরনের সরকারি চাকরি থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেড়ে নেয়া হয়েছে তাদের নাগরিকত্ব।

নিজ রাজ্য তো দূরের কথা নিজ গ্রামের বাইরেও যেতে হলে তাদের পাস সংগ্রহ করতে হয়। সে জন্য নিজ রাজ্যে বসানো হয়েছে অনেক অভিবাসী চেকপোস্ট। তাদের জন্য বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিসহ উচ্চশিক্ষার দরজা। তারা যাতে শিক্ষিত, শারীরিকভাবে শক্তিশালী না হতে পারে সে ব্যবস্থাও করা হয়। রোহিঙ্গাদের বঞ্চিত করা হয়েছে সব উন্নয়ন থেকে। ঠেলে দেয়া হয়েছে পুষ্টিহীনতা আর চরম দারিদ্র্যের দিকে। নেতাদের বেছে বেছে বন্দী ও হত্যা করা হয়েছে। এভাবে কালের পরিক্রমায় বার্মা সরকার এক সময় স্বাধীন সমৃদ্ধ একটি জাতিকে আজ বিশ্বের সবচেয়ে অসহায় নিপীড়িত জাতিতে পরিণত করেছে যার বাস্তব বিবরণ শুনলে যে কারোর গায়ের লোম কাটা দেয়।

মালয়েশিয়ার গণ আদালতে ডেপুটি চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘রাখাইনের তুলাতুলি গ্রাম থেকে আসা এক নারীর জবানবন্দী শুনে আমাদের পক্ষে অশ্রু সংবরণ কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ, তিনি তার চোখের সামনে ২০০ থেকে ২৫০ জন নারীকে নিহত এবং শিশুদের কাটাছেঁড়া করে তাদের লাশ নদীতে নিক্ষেপ করতে দেখেছেন। আমরা এমন ফুটেজ দেখেছি, যাতে প্লাস্টিকের চালের ব্যাগে লাশ ভাসছে মিয়ানমারের জলসীমায়। ৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া এক রোহিঙ্গা নারী তার জবানবন্দীতে বলেছেন, কী করে গণধর্ষণের জন্য ২০ তরুণীকে বাছাই করা হয়েছে, এরপর খালি বাড়িতে বন্দী রেখে তাদের জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে।’

বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রায় ৮০ ভাগই নারী শিশু ও বৃদ্ধা। যুবক কম। কারণ তাদের হত্যা করা হয়েছে। যেসব নারী পালিয়ে এসেছেন তাদের বেশির ভাগ আবার ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। যুবকদের হত্যা করা হয় ভবিষ্যতে যাতে কোনো দিন তারা প্রতিরোধ করতে না পারে। যেমন করেছিল ফেরাউন হজরত মূসার আগন প্রতিরোধের জন্য।

মায়ের কোল থেকে নবজাতক ছিনিয়ে নিয়ে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছে। নারীদের গণধর্ষণ শেষে হত্যা করে স্তন কেটে নেয়া হচ্ছে। আগুন দিয়ে লাশ পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। এমনকি লাশের চামড়া তুলে, কাটা অঙ্গ নিয়ে পাশবিক নৃত্যের ছবিও দেখেছে বিশ্ববাসী।

বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের বর্ণনা অনুযায়ী বর্মি সেনা, পুলিশ, সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও তাদের লেলিয়ে দেয়া স্থানীয় বৌদ্ধ সন্ত্রাসীরা বন্দুক, ধারাল অস্ত্র, পেট্রল নিয়ে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে আক্রমণ চালায়। সামনে যাকেই পায় নারী, পুরুষ শিশু নির্বিচারে গুলি করে, কুপিয়ে হত্যা করে। যুবতী নারী থাকলে প্রথমে দল বেঁধে ধর্ষণ করে। তারপর গুলি ও জবাই করে হত্যা করে। গোপন অঙ্গ কেটে বিকৃত করে। যার ভাগ্য ভালো তাকে অর্ধমৃত অবস্থায় ফেলে যায় জঙ্গল বা রাস্তায়। গণধর্ষণের ফলে অনেকে মারা যায় রক্তক্ষরণে। অনেক যুবতী তারা গাড়িতে করে নিয়ে যায় সেনা ক্যাম্পে। সেখানে তাদের বন্দী রাখা হয় মনোরঞ্জনের জন্য। অভিযান ছাড়াও অন্যান্য সময় টহলরত সেনারা দিনে রাতে রোহিঙ্গাদের ঘরে হানা দেয় নারীর সন্ধানে।

গত ৯ সেপ্টেম্বর গ্রাম ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া কয়েকজন রোহিঙ্গা জানান, সেনাবাহিনীর সদস্যরা এলাকার চেয়ারম্যানদের ডেকে নিয়ে সবাইকে বাড়িতে থাকতে বলে। আর কোনো সমস্যা হবে না বলে আশ্বস্ত করা হয়। এরপর গভীর রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয় তারা। আগুনে পুড়তে থাকা বাড়ি থেকে বের হয়ে রোহিঙ্গারা যখন অন্ধকারে ছোটাছুটি করেন, তখন তারা গুলি ছুড়ে হত্যা করে।

কক্সবাজার বালুখালী শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া আয়েশা বেগম বলেন, রাতে সেনারা আমাদের ঘরে হামলা করে। তারা আমাকে আর আমার চার ননদকে একটি ঘরে নিয়ে যায়। আমার সন্তানকে কোল থেকে নিয়ে লাথি মেরে ফেলে দেয়। এরপর আমাদের সবাইকে বিবস্ত্র করে ১২ সেনা মিলে ধর্ষণ করে। এরপর আট দিন ধরে হেঁটে বাংলাদেশে আসার পথে ধর্ষণের শিকার আমার দুই ননদ মারা গেছে পথে।

তামি গ্রামের মোহসিনা বেগম বলেন, মিয়ানমারের সেনারা ঘরে ঢুকে আমাদের ১৯ বছর বয়সী বোনকে তুলে নিয়ে যায় ক্যাম্পে। সে দেখতে খুব সুন্দরী ছিল। গ্রামের চেয়ারম্যানের মধ্যস্থতায় তাকে ফিরিয়ে আনি। কিন্তু ফিরিয়ে আনার আগ পর্যন্ত তাকে সেনারা আটকে রেখে ধর্ষণ করেছে। তাতে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ফলে বাংলাদেশে আসার পথে সে মারা যায়। আরেক নারী জানান, তার সামনেই স্বামী ও পাঁচ সন্তানকে হত্যা করে সেনারা। এরপর তাকে গণধর্ষণ শেষে মৃত ভেবে ফেলে যায়। তোলাতুলি গ্রামের রাজুমা বেগম (২০) বলেন, সেনারা আমার ছেলেকে কেড়ে নিয়ে গলা কাটে।

এরপর আমাকেসহ আরো চার নারীকে একটি ঘরের নিয়ে যায়। সেখানে আরো তিন নারী, এক কিশোরী ছিল। সেখানে সেনারা আমাদের সবাইকে ধর্ষণ করে। আরেক নারী আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের কাছে জানিয়েছেন কিভাবে তার সামনে স্বামী ও ভাইকে হত্যার পর একটি ঘরে আটকে ১০-১২ জন সেনা মিলে তাকে ধর্ষণ করেছে। আলমাস খাতুন নামে আরেক নারী বলেন, তার স্বামী এবং তার তিন ছেলেকে তার সামনেই হত্যা করা হয়েছে। দুই ছেলে পালিয়ে যাওয়ার সময় পেছন থেকে গুলি করলে সেখানেই তাদের মৃত্যু হয়।
এ ধরনের অসংখ্য মর্মান্তিক ঘটনার খবর এখন ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের বরাতে।

সূত্র: নয়াদিগন্ত

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন