Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

বিভেদ ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির খড়্গ হাতে বাসন্তী চাকমার আবির্ভাব

রিফাত শাহেদ রিদম:

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে মহান জাতীয় সংসদে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা রাংগামাটি, খাগড়াছড়ি আর বান্দরবান মিলে সংরক্ষিত নারী আসন-৯ এর নব নিযুক্ত সাংসদ বাসন্তী চাকমা তার প্রথম বক্তব্য প্রদান করেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের একজন বাসিন্দা হওয়ায় অন্য সবার মত আমিও অধীর আগ্রহ নিয়ে সেই বক্তব্য শুনেছিলাম। কিন্তু সাংসদ বাসন্তী চাকমার সেই বক্তব্য শোনার পর থেকে আমি যারপরনায় হতাশ এবং বিস্মিত হয়েছি। তাঁর সমগ্র ভাষণ জুড়ে ছিলো সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক, মিথ্যা, একপেশে এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য।

বাসন্তী চাকমার ভাষণে পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন শান্তিবাহিনীর স্তুতি এবং গুণগান এবং অপরপক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাংগালী এবং সেনাবাহিনীর মত একটি সুশৃংখল বাহিনীর বিরুদ্ধে যে মিথ্যাচার এবং বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রদান করেছেন তা শুনে আমার মনে হয়েছে তিনি এখনো সেই বর্বর শান্তিবাহিনীর মানসিকতা বয়ে বেড়াচ্ছেন।

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তিচূক্তি স্বাক্ষরিত হবার পর সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামে যখন শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে এবং শান্তিপ্রিয় পাহাড়ি-বাংগালী মিলেমিশে বসবাস করছেন ঠিক তখনই বাসন্তী চাকমা এই ধরণের উগ্র এবং সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান করে পাহাড়কে আবার অশান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা করে তুলছেন নয় কি? এটা শান্তিপ্রিয় পাহাড়ি-বাংগালীদের মধ্যে বিভেদের দেয়াল তৈরীর অপচেষ্টা নয় কি?

বাসন্তী চাকমা যদি তার বক্তব্যে নিরপেক্ষভাবে পাহাড়ি-বাংগালী সকলের নির্যাতনের কথা তুলে ধরতেন তাহলে বুঝতাম যে উনি সাম্প্রদায়িক নন। কিন্তু যেহেতু উনি সেটা না করে মুদ্রার একটিমাত্র দিক তুলে ধরেছেন তাই নির্দিধায় এটা বলা যায় যে উনি সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিনিধি নন। তিনি একপেশে, একচোখা এবং সাম্প্রদায়িক এক নারী নেত্রী।


এ সংক্রান্ত আরো লেখা

বাসন্তি চাকমা কি পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভেদ ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রতিভূ হতে চাইছেন


বাসন্তী চাকমা তার বক্তব্যে মুদ্রার একটি মাত্র দিক তুলে ধরে মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও উস্কানিমূলক বক্তব্য তুলে ধরেছেন এই কথাটি কেন বললাম সেটা প্রিয় পাঠকের সামনে তুলে ধরছিঃ

রাষ্ট্রবিরোধী বর্বর জংগী সংগঠন “শান্তিবাহিনী”কে তিনি যেভাবে “ভাই” বলে সম্বোধন করেছেন তাতে তাকে শান্তিবাহিনীর প্রতি মমতাময়ী এক বোন বলেই মনে হয়েছে। বাসন্তী চাকমা মহান সংসদে তার বক্তব্যে বলেছেন যে তার যখন ১৬/১৭ বছর বয়স তখন পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিলো। কিন্তু ঐ সময় যেই বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা নিজেদেরকে “শান্তিবাহিনী” নাম দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করছিলো তারাই যে এই অস্ত্রের ঝনঝনানির সৃষ্টি করেছিলো সে বিষয়টি তিনি সুকৌশলে এড়িয়ে যান। এ থেকে স্পষ্টতই প্রমাণিত হয় যে বাসন্তী চাকমা আজো সেই বর্বর শান্তিবাহিনীর মানসিকতা বয়ে বেড়াচ্ছেন।

বাসন্তী চাকমা তার বক্তব্যে স্বীকার করেছেন যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিবাহিনীর মধ্যে বিভেদের কারনে সন্তু গ্রুপ ও প্রীতি গ্রুপ নামে দুইটি গ্রুপের সৃষ্টি হয়েছিলো। ঐ দুই গ্রুপের অন্তর্কলহের কারনে বহু পাহাড়িকে প্রাণ দিতে হয়েছিলো। কিন্তু শান্তিবাহিনীর ঐ সন্ত্রাসীরা পার্বত্য চট্টগ্রামে যে হাজার হাজার বাংগালী আর নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের হত্যা করেছিলো সেই বিষয়টি তিনি সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে গিয়েছেন। কেন এই দ্বিমুখী আচরণ? এমন একজন দ্বিমুখী নেত্রীর কাছ থেকে পাহাড়ের উন্নয়ন আশা করা অসম্ভব।

বাসন্তী চাকমা তার বক্তব্যে বলেছেন ১৯৮৬ সালের ১ মে শুক্রবার খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়িতে নাকি সেনাবাহিনী এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বাংগালীরা মিলে “আল্লাহু আকবার” শ্লোগান দিয়ে পানছড়ির দুই তিন গ্রামের পাহাড়িদেরকে জবাই দিয়েছিলো। উনি তাঁর বক্তব্যের প্রথমে ১৯৮৬ সাল বললেও ঠিক একটু পরেই আবার বলেন সেটা নাকি ১৯৯৬ সালের ১ মে শুক্রবারের ঘটনা। কিন্তু ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টিয়ে দেখলাম যে ১৯৮৬ সালের ১ মে ছিলো বৃহস্পতিবার এবং ১৯৯৬ সালের ১ মে ছিলো বুধবার। তার মানে কি দাঁড়ালো?

যাই হোক, ১৯৮৬ সালে পানছড়িতে একটি গণহত্যা হয়েছিলো ঠিকই তবে সেটা বাসন্তী চাকমার দেয়া তথ্য ১ মে তারিখে নয়। সেটি হয়েছিলো ২৯ এপ্রিল দিবাগত রাত আনুমানিক ৯টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত সময়ে। স্থান ছিলো খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার লোগাং, চেঙ্গী, পানছড়ি, লতিবান, উল্টাছড়ি ৫টি ইউনিয়নের ২৪৫টি গ্রামে। ঐ দিন সেনাবাহিনী এবং বাংগালী মিলে কোন পাহাড়িকে “আল্লাহু আকবার” বলে জবাইও করেনি।

বরং বাসন্তী চাকমার শান্তিবাহিনীর ভাইয়েরা ঐ এলাকার প্রত্যেকটি বাংগালী গ্রামে অগ্নিসংযোগসহ লুটতরাজ এবং নিরস্ত্র নিরীহ ৮৫৩ জনের অধিক বাংগালী নারী, শিশু, আবাল-বৃদ্ধ বনিতাকে হত্যা করে। বাংগালী নারীদেরকে পাকিস্তানী সেনাদের মত করে গণধর্ষণ ও পরে হত্যা করে। শান্তিবাহিনীর হামলায় ঐদিন আহত হয় প্রায় ৫০০ জনের অধিক বাংগালী। ৬২৪০টি বাড়ি লুটতরাজ করে সম্পূর্ণভাবে পুড়িয়ে দেয় বাসন্তী চাকমার ভাই শান্তিবাহিনীর হায়েনারা। হাত-পা বেঁধে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে, দা-দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে জবাই করে,আগুন দিয়ে পুড়িয়ে,বেয়নেট ও অন্যান্য দেশি অস্ত্র দিয়ে খুচিয়ে খুঁচিয়ে নানাভাবে কষ্ট দিয়ে হত্যা করেছিল এই অসহায় মানুষগুলোকে।

প্রতিটি লাশকেই বিকৃত করে সেদিন চরম অমানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল বাসন্তী চাকমার ভাইয়েরা। ১৯৮৬ সালের ২৯ এপ্রিল ঐ রাতে খাগড়াছড়ি জেলাতে বাসন্তী চাকমার শান্তিবাহিনীর ভাইয়েরা আরো কয়েকটি গণহত্যা চালিয়েছিলো যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ দিঘীনালা গণহত্যা ও মাটিরাংগা গণহত্যা। এছাড়াও, কুমিল্লাটিলা, শুকনাছড়ি, দেওয়ান বাজার, সিংহপাড়া, তাইন্দং গণহত্যা (১৯৮৬ সালের ১৮ মে) এবং দিঘীনালা গণহত্যা (১৯৮৬ সালের ২ জুলাই) ঐ বছরেই সংঘটিত হয়েছিলো যেখানে বাসন্তী চাকমার ভাই বর্বর শান্তিবাহিনী বাংগালীদেরকে নির্বিচারে হত্যা করেছিলো।

পার্বত্য চট্টগ্রাম ইস্যুকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরার কৌশল হিসেবে ঐ সময়ে শান্তিবাহিনীরা পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয়দের শরণার্থি হিসেবে ভারতে পাঠানোর কৌশল গ্রহণ করে। কিন্তু শান্তিপ্রিয় পাহাড়ীরা নিজ ভিটা মাটি ছেড়ে যেতে না চাইলে তাদের উপর হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ, অপহরণের মতো নিপীড়নের স্টিম রোলার চালায় তারা। এতে কিছুটা সফল হলেও চুড়ান্ত সফলতা না আসায় শান্তিবাহিনীর সদস্যরা কৌশলে পাহাড়ী গ্রামের সন্নিহিত বাঙালী গ্রামগুলোতে অগ্নিসংযোগ, হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটাতে শুরু করে যাতে বাঙালীরা উত্তেজিত হয়ে প্রতিক্রিয়া হিসেবে পাহাড়ী গ্রামগুলোতে আক্রমণ করে।

ঠিক এমনটাই ঘটেছিলো ২৯ এপ্রিল ১৯৮৬ সালে শান্তিবাহিনী কর্তৃক পানছড়িতে বাংগালী গণহত্যার পর। শান্তিবাহিনীর বর্বর ও নৃশসংস হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে নিরস্ত্র বাংগালীরা সামান্য প্রতিরোধের প্রচেষ্টা করে ১ মে ১৯৮৬ সালে। কিন্তু বাসন্তী চাকমা ২৯ এপ্রিলের সেই গণহত্যার কথা সম্পূর্ণভাবে উহ্য রেখে নিরস্ত্র বাংগালীদের সামান্য প্রতিরোধের বিষয়টিকে “গণহত্যা” আখ্যা দিয়ে মহান সংসদে মিথ্যাচার করে একপেশে ও একচোখা মনোভাবের পরিচয়য় দিয়েছেন।

২৯ এপ্রিল ১৯৮৬ সালে শান্তিবাহিনী কর্তৃক বাংগালী গণহত্যার প্রতিবাদে ১ মে তারিখে নিরস্ত্র বাংগালীরা যখন সামান্য প্রতিরোধের প্রচেষ্টা চালিয়েছিলো তখন সেখানে পাহাড়ি-বাংগালী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার একটা ঝুঁকির সৃষ্টি হয়। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ঐ সময় সেনাবাহিনী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঝুঁকির হাত থেকে সবাইকে রক্ষা করার জন্য সেখানে গিয়ে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে কৌশলে সমগ্র পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হয়। কিন্তু বাসন্তী চাকমা তাঁর বক্তব্যে সে বিষয়টি উল্লেখ না করে সেনাবাহিনীকে নিয়ে মিথ্যাচার করেছেন।

পরিশেষে একথা বলতে চাই যে, বাসন্তী চাকমার এধরনের একপেশে, একচোখা, সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তব্য পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে কলুষিত করছে। শান্তিপ্রিয় পাহাড়ি-বাংগালীদের মধ্যে ভাতৃত্বপূর্ণ সহাবস্থানের মধ্যে বিভেদের দেয়াল সৃষ্টির নিয়ামক তৈরী করছেন। এমন একজন সাম্প্রদায়ক মনোভাবাপূর্ণ নারী কখনই মহান জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার যোগ্যতা রাখে না। এ ধরনের সাম্প্রদায়িক বক্তব্য প্রদানের জন্য বাসন্তী চাকমার ক্ষমা চাওয়া উচিৎ।

একজন সচেতন পার্বত্যবাসী হিসেবে দাবী জানাচ্ছি যে, মহান জাতীয় সংসদে বাসন্তী চাকমা কর্তৃক প্রদত্ত মিথ্যা, একপেশে, বিভ্রান্তিকর ও সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক ঐ বক্তব্য অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করা হোক। সেই সাথে সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন এই নারীকে অপসারণ পূর্বক একজন অসাম্প্রদায়িক ও যোগ্য নারীকে ঐ আসনের দায়িত্ব দেয়া হোক।

* লেখক: খাগড়াছড়ি থেকে


 * মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার বক্তব্য, তথ্য, সূত্র একান্তই পাঠকের। পার্বত্যনিউজের সম্পাদকীয় নীতি এক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: বাসন্তি চাকমা
Facebook Comment

One Reply to “বিভেদ ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির খড়্গ হাতে বাসন্তী চাকমার আবির্ভাব”

  1. সংসদ সদস্য বাসন্তি চাকমা ,সংসদে যে বক্তব্য প্রধান করেছেন সব গুলো মিথ্যা নয় পুরোটাই সত্যি এবং বাস্তব ! ইতিহাস সাক্ষি আছে , বইয়ের পাতা খুললে সব মিলে যাবে ! মুসলিম সেটালার দ্বারা পার্বত্য এলাকার ,গণ ধর্ষণ ও লুটপাত ,ভূমি বেদখল ,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন