বিরোধী দলীয় নেত্রী মেট্রিক পরীক্ষায় অংক ও উর্দূ ছাড়া সকল বিষয়ে ফেল করেছিলেন- শেখ হাসিনা

pm  coxbazar ukhia high school math 01 (1)

শত শত কোরাআন পুড়িয়ে জামায়াত-হেফাজত কীসের হেফাজত করতে চায় ? তারা প্রকৃতপক্ষে দেশকে একটি জঙ্গিবাদি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করতে চায়। একজন মানুষ একটা শোকের যন্ত্রণা সইতে পারেনা। আমি মা বাবাসহ পরিবারের সকলকে হারানোর যন্ত্রণা নিয়েও দেশের জন্য কাজ করতে রাজনীতিতে এসেছি

আবদুল্লাহ নয়ন, কক্সবাজার:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উখিয়ার জনসভায় প্রশ্ন করে বলেন, হেফাজত-জামায়াত শত শত কোরআন পুড়িয়ে ও মসজিদে আগুন দিয়ে কীসের হেফাজত করতে চায়? তিনি বলেন,তারা প্রকৃতপক্ষে দেশকে একটি জঙ্গিবাদি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করতে চায়। কিন্তু সরকার কিছুতেই তাদের উদ্দেশ্য সফল হতে দেবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন,২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে পুরোপুরি ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত করতে চাই এবং এজন্য আওয়ামীলীগকেই রাস্ট্র ক্ষমতায় থাকতে হবে। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় আসলে দেশ আবারো পিছিয়ে পড়বে। তিনি আজ মঙ্গলবার বিকেলে উখিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দেয়ার সময় এ কথা বলেন।

বিকেল সোয়া চারটায় একটি হেলিকপ্টারে করে উখিয়ার জনসভাস্থলে পৌঁছেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর তিনি সুইচ টিপে ৩৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্থর ও উদ্ভোধন ঘোষণা করেন। দুপুর থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি এবং গুড়িগুড়ি বৃষ্টির মাঝেই প্রধানমন্ত্রী প্রায় ৩০মিনিট বক্তব্য রাখেন। এসময় তিনি বলেন, বিদায় বেলায় তেমন কিছু দেয়ার সময় নয় তবে কক্সবাজারের মানুষের জন্য যত উন্নয়ন করা দরকার আমরা সেটা করবো। আওয়ামী লীগ মানে দেশের উন্নয়ন আর বিএনপি জামায়াত হচ্ছে দেশকে পিছিয়ে দেয়া এবং জঙ্গিবাদি রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের মাঝে পরিচিত করা মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সময়ের বিভিন্ন উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে বলেন,আমরা ক্ষমতায় এসে দেশে কঠোর হাতে জঙ্গিবাদ দমন করেছি। দেশের ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসর্ম্পূণতা অর্জন করেছি। মিয়ানমারের সাথে সমুদ্র জয় করেছি। ২০১৪ সালে ভারতের সাথেও সমুদ্র জয়ের দৃঢ আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, এটা কেবল আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে পারবে। তিনি শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়নের বর্ননা দিয়ে বলেন,আমরা দেশের প্রতিটি মানুষকে শিক্ষিত করে একটি শিক্ষিত জাতি তৈরী করে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই।

তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন এখন মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বই কিনতে হয় না এবং প্রতিবছর জানুয়ারির মধ্যেই সব শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছানো কেবল আমাদের পক্ষেই সম্ভব। দেশের ছেলেমেয়েরা যেন মানুষের মত মানুষ হতে পারে সে জন্য ৫ লক্ষ ৩৩ হাজার শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিয়ে সরকার আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। দেশকে ডিজিটালাইজ করার বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি একটি মোবাইল সেট ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা বিক্রি করেছিল। আমরা সেই মোবাইল সেট অল্প পয়সায় মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে দিয়েছি। প্রতিটি ইউনিয়নে তথ্য সেবা কেন্দ্র করেছি। মানুষ এখন ঘরে বসেই সব সেবা পাচ্ছে। বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন,ওনি ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে বললেন আমরা নাকি পালাবার পথ পাব না। আর বড় হুজুর (আল্লামা আহমদ শফি) ‘তেতুল তত্ব আর ১৩ দফা দিয়ে এদেশের অর্ধেক নারীকে শিক্ষায় পিছিয়ে রাখতে চায়। তারা দেশকে জঙ্গিবাদি রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায় বলে নারী শিক্ষায় বাধা সৃষ্টি করছে।

খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ওনি সর্বসাকুল্যে মেট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। উর্দু ও অংক ছাড়া আর সব বিষয়ে ফেল করেছেন তিনি। অংকে তিনি সেই সময় থেকে ভাল বলেই দূর্নীতিতে পারদর্শী। তাই ক্ষমতায় গেলে তিনি শুধু পরিবার পরিজন নিয়ে দূর্নীতি করে টাকা কামাই করতে জানেন। তাই বিএনপি ক্ষমতায় আসতে চায় ব্যবসা করার জন্য। তিনি আরো বলেন হেফাজত-জামায়াত ইসলামের কথা বলে মসজিদে আগুন দিয়েছে। শত শত কোরআন শরীফে আগুন দিয়েছে। তিনি বলেন তারা এসব করে কিসের হেফাজত করতে চায়। তিনি বলেন, আমি ওই হুজুরকে জিজ্ঞেস করি যিনি প্রথম ইসলাম কবুল করেন তিনি একজন নারী যিনি প্রথম শহীদ হন তিনিও নারী কিন্তু নারীদের ইসলামের কথা বলে কেন তিনি এখন নারীদের শিক্ষা ও অগ্রগতিতে বাধা দিচ্ছেন।

বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন মানুষ একটা শোকের যন্ত্রণা সইতে পারেনা। আমি মা বাবাসহ পরিবারের সকলকে হারানোর যন্ত্রণা নিয়েও দেশের জন্য কাজ করতে রাজনীতিতে এসেছি এবং শেষ পর্যন্ত বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফুটাবই। উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আদিল উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় বক্তব্য রাখেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান,উখিয়া টেকনাফ আসনের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি,সাফিয়া খাতুন এমপি,অধ্যাপিকা এথিন রাখাইন এমপি কক্সবাজার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল আহসান পাপন,হাসিনা মান্নান এমপি,যুবলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী,চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমদ,কক্সবাজার জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট একে আহমদ হোসাইন, সহ-সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী,সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ সিআইপি,নজরুল ইসলাম চৌধুরী,কক্সবাজার জেলা প্রশিক্ষিত ইমাম সমিতির সভাপতি মওলানা সিরাজুল ইসলাম,জেলা জাসদ সভাপতি নইমুল হক চৌধুরী টুটুল,আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতা পিয়ারুল ইসলাম,ছিদ্দিকী নাজমুল আলম,কৃষক লীগ নেতা সোহেল রানা,চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম,টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শফিক মিয়া,অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা,অ্যাডভোকেট রজনজিত দাশ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ শাহজাহান স্থানীয় নেতা মাহমুদুল হক চৌধুরী,ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী প্রমুখ। প্রসঙ্গত,উখিয়ার জনসভা হলেও বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক দলীয় নেতাকর্মীরা জনসভায় যোগ দেয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন