বেলজিয়ামকে হারিয়ে ফাইনালে ফ্রান্স


খেলা ডেস্ক:
কৌশলী ফুটবল খেলে বেলজিয়ামকে হারিয়ে ফ্রান্স ফাইনালে। শুরু থেকে প্রথমার্ধের ২৫ মিনিট পর্যন্ত আক্রমণের পসরা সাজিয়ে বসেছিল বেলজিয়াম। একের পর এক আক্রমণে ফ্রান্সের রক্ষণকে মনে হচ্ছিল পথ হারানো নাবিক। রক্ষণ সামলাতে ব্যস্ত দেশমের শিষ্যরা যেন আক্রমণে ওঠার সময়ই (পড়ুন সুযোগ) পাচ্ছিল না।

এই সময়ের মধ্যে হাতে গোনা দু একবার বেলিজায়ামের ডিফেন্স ভাঙার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছে ফ্রান্স। ১৮ মিনিটে এসে গোলমুখে প্রথম শট নেয় ফ্রান্সের ব্লাইস মাতুইদি। তবে ফ্রান্স খেলায় ফিরে আসে রয়ে-সয়ে।

দেশমের পরিকল্পনাটাই ছিল এমন। আক্রমণ ঠিক রেখে পাল্টা আক্রমণে প্রতিপক্ষকে খুন করা। ৪-২-৩-১ ফরমেশনটা সেটাই তো বলছে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে ফ্রান্সের খেলোয়াড়েরা। ৫১ মিনিটে এসে বার্সেলোনার ডিফেন্ডার স্যামুয়েল উমতিতির হেডে গোল পায় ফ্রান্স। গোল পরিশোধের আপ্রাণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় লুকাকুরা।

ফ্রান্সের রক্ষণে বেশ কয়েকবার ভয় ধরিয়ে দিয়েও গোলের দেখা পায়নি বেলজিয়াম। একজন ফিনিশারের অভাব হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে বেলজিয়াম। লুকাকু নিজের ছায়া হয়েই থেকেছে এই ম্যাচে। যার খেসারত দিয়েছে তাঁর দল। ১৯৮৬ সালের পর আরও একবার সেমিফাইনালে উঠে সুযোগ হাতছাড়া করল রবার্তো মার্টিনেজের শিষ্যরা। সেমিফাইনালে বেলজিয়ামকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে গেল ১৯৯৮’র চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। কে হবে তাদের প্রতিপক্ষ, ইংল্যান্ড নাকি ক্রোয়েশিয়া? ঘড়ির কাঁটা কয়েক ঘণ্টা ঘুরলেই সেটা জানা সম্ভব।

হেড টু হেড

ফ্রান্সের খেলোয়াড়রা পায়ে বল রাখতে না পারায় ১৫ মিনিটে সুযোগ তৈরি করেন কেভিন ডি ব্রুইন। তিনি পাস দেন ইডেন হ্যাজার্ডকে। বেলজিয়ান অধিনায়কের নিচু শট গোলবারের পাশ দিয়ে চলে যায়।

১৮ মিনিটে ফ্রান্স প্রথমবার গোলমুখে শট নেয়। ব্লেইস মাতুইদির শক্তিশালী শট কোর্তোয়াকে পরাস্ত করতে পারেনি। পরের মিনিটে বাঁপ্রান্ত দিয়ে শক্তিশালী শট নেন গোলে, কিন্তু রাফায়েল ভারানের গায়ে লেগে গোলবারের উপর দিয়ে মাঠের বাইরে যায়। ২১ মিনিটে নাসের চ্যাডলির কর্নার থেকে অ্যাল্ডারওয়েইরেল্ড পরীক্ষা নেন লরিসের। টটেনহ্যাম সতীর্থের শট ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রতিহত করেন ফরাসি গোলরক্ষক।

৩১ মিনিটে ফ্রি কিক থেকে বল নিয়ে পাভার্দ বক্সের মধ্যে ক্রস দেন। অলিভিয়ের জিরুদের হেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তিন মিনিট পর আন্তোয়ান গ্রিয়েজমানের নিখুঁত ফ্রি কিক বেলজিয়ান রক্ষণদেয়াল ভেদ করে বক্সে জায়গা করে নেয়। কিলিয়ান এমবাপে পাস দেন জিরুদকে। চেলসি ফরোয়ার্ডের দুর্বল ফিনিশিংয়ে বল জালে জড়ায়নি।

বিরতির ৬ মিনিট আগে দারুণ এক সুযোগ পায় ফ্রান্স। ৩৯ মিনিটে এমবাপের পাস থেকে বেঞ্জামিন পাভার্দ লক্ষ্যে শট নিয়েছিলেন, কিন্তু কোর্তোয়ার বাড়িয়ে দেওয়া পা ব্যর্থ করে দেয় তাকে।

যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে কেভিন ডি ব্রুইনের দুর্দান্ত ক্রস থেকে গোল করার সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন রোমেলু লুকাকু। গোলমুখের সামনে দাঁড়ানো এ স্ট্রাইকারের গায়ে বল লাগায় লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি।

বিরতির পর অ্যাক্সেল উইটসেলের ক্রস থেকে ভারানের চ্যালেঞ্জে ঠিকমতো হেড নিতে পারেননি লুকাকু। গোলবারের উপর দিয়ে মাঠের বাইরে চলে যায় বল।

৫০ মিনিটে জিরুদের শট ব্লক করে কর্নার বানান কোম্পানি। পরের মিনিটে গ্রিয়েজমানের ওই কর্নার থেকে কাছের পোস্টে ফেলাইনির চেয়ে উঁচুতে লাফিয়ে হেড করে বল জালে জড়ান উমতিতি।

এমবাপের ৫৬ মিনিটের ব্যাকহিল থেকে বল পেয়েছিলেন জিরুদ। কিন্তু কোর্তোয়া তাকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করে ব্যবধান দ্বিগুণ করতে দেননি ফরাসিদের।

৬৫ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে দ্রিয়েস মের্টেন্সের লম্বা ক্রস গোলমুখে হেড করেছিলেন ফেলাইনি। গোলপোস্টের কয়েক ইঞ্চি পাশ দিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় বেলজিয়াম মিডফিল্ডারের এ চেষ্টা। দুই মিনিট পর এমবাপের আবারও সুযোগ তৈরি করে দেন জিরুদকে। কিন্তু চেলসি ফরোয়ার্ড গোলবারের ওপর দিয়ে বল মেরে আবার সুযোগ নষ্ট করেন।

সমতা ফেরাতে মরিয়া বেলজিয়াম বক্সের মধ্যে জায়গা খুঁজছিল হন্যে হয়ে। ৭৩ মিনিটে ডি ব্রুইনের ক্রস বক্সের মধ্যে বিপদ ডাকার আগেই পল পগবা হেড করে মুক্ত করেন।

৮১ মিনিটে ট্যাকল করে হ্যাজার্ডের পা থেকে বল মুক্ত করেন ভারানে। কিন্তু বল চলে যায় উইটসেলের পায়ে। তার বুলেট গতির শট পাঞ্চ করে প্রতিহত করেন লরিস।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন