বৌদ্ধ ধর্ম মানুষকে সুখ-শান্তি এবং অহিংসার পথে চলতে সাহায্য করে- কংজরী চৌধুরী

cibor dan pic-2
মুজিবুর রহমান ভুইয়া ও এম. সাইফুর রহমান :

বৌদ্ধ ধর্ম মানুষকে সুখ-শান্তি এবং অহিংসার পথে চলতে সাহায্য করে উল্লেখ করে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ সরকার ধর্র্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী এবং সব ধর্মকে শ্রদ্ধা করে। ধর্ম যার যার উৎসব সবার এ নীতিতে বিশ্বাস করে বর্তমান সরকার।

তিনি আরও বলেন, দেশে যারা ধর্মের নামে খুন খারাপি করে তারা বস্তুত ধর্মের ও গোত্রের মঙ্গল চায় না। তিনি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান কঠিন চীবর দানোৎসবের মধ্যে দিয়ে পার্বত্যাঞ্চলে সকল সম্প্রদায়ের সম্প্রীতি ও ঐক্য গড়ে তোলার আহবান জানান।

তিনি শনিবার খাগড়াছড়ির গুইমারা দেয়ানপাড়া মিশন বৌদ্ধ বিহারে দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বি.এম মশিউর রহমান ও সহকারী কমিশনার (ভুমি) ইমরুল কায়েস অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে শনিবার সকালের দিকে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে খাগড়াছড়ির গুইমারা দেয়ানপাড়া মিশন বৌদ্ধ বিহারে শুরু হয় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের হাজারো পুণ্যার্থীর অংশগ্রহণে এবং বিহার প্রধান সংঘ রত্ন থের এর সঞ্চালনায় সংঘ দান, চীবর দান ও কল্পতরু নৃত্যসহ ধর্মীয় সাংস্কৃতিক নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানটি উৎসবমুখর হয়ে উঠে। উৎসবকে ঘিরে বিহার প্রাঙ্গণে ঢল নামে অগণিত পুণ্যার্থীর। আশে-পাশের গ্রাম থেকে আসা পাহাড়ী-বাঙ্গালীর মিলন মেলায় পরিণত হয় উৎসবস্থল।

ড. জ্ঞানশ্রী মহাথের’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দানোত্তম কঠিন চীবর দান উৎসবে ধর্মদ্বেশনা প্রদান করেন শান্তি জ্যোতি মহাথের ও সুরিয়ন্ত মহাথের। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে গুইমারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মেমং মারমা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

শত শত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত ধর্মসভায় বক্তারা বলেন, গৌতম বুদ্ধের অহিংসা পরম নীতি অনুসরণ করে একে অপরের প্রতি মৈত্রীভাব আচরণ করাই মানব ধর্ম। এতে জন্ম-জন্মান্তরে সুখ ও শান্তি লাভ হয়। প্রাণী হত্যা, ব্যাভিচার, মাদক সেবন, মিথ্যাচার, কামলোভ, দ্বেষ ও হিংসা পরিহার করে চলতে পারলে ইহকাল পরকাল পরম শান্তি লাভ করা যায়।

উল্লেখ্য যে, আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে মহামতি গৌতম বুদ্ধের জীবদ্দশায় তার প্রধান সেবিকা মহাপুণ্যবতী বিশাখা ২৪ ঘন্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা কেটে রং করণ, বয়ন ও সেলাই শেষে চীবর (বিশেষ পরিধেয় বস্ত্র) দানকার্য সম্পাদন করেন। ২৪ ঘন্টার মধ্যে মহাদানযজ্ঞ সম্পাদন করার কারণে বৌদ্ধরা এই ধর্মীয় উৎসবকে ‘দানোত্তম কঠিন চীবর দান’ বলে। সেই থেকে হাজার বছরের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় দানোত্তম কঠিন চীবর দান দানোৎসব পালন করে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন