ব্যাটিংএ বাংলাদেশের বেহাল দশা

স্পোর্টস রিপোর্টার: জিম্বাবুয়ের মাটিতে সর্বনিম্ন ইনিংস ছিল ১৬৯ রান এই হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে ২০০৪ সালে। এবার বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আরেকটি সর্বনিম্ন রানের ইনিংস যুক্ত হলো। তা রচনা করলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা সীমাহীন ব্যাটিং ব্যর্থতায়। দলীয় ৫৩ রানে শাহরিয়ার নাফীস হাঁটেন সাজঘরের পথে। দলের হাল ধরেন জহুরুল ও  আশরাফুল। ১০২ রানের সময় জহুরুল ৪৩ রান করে আউট হলে মড়ক লাগে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে। দলের স্কোর বোর্ডে ২২ রান যোগ হতেই আউট হন ৪ ব্যাটসম্যান। আর দলের প্রথম ইনিংস ১৩৪ রানে থেকে একচুলও বাড়াতে পারেনি দলের বাকি ৪ ব্যাটসম্যান। আউট হওয়ার মিছিলে যোগ দিয়ে সবাই ফিরেন সাজঘরে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন রানে আউট হয় বাংলাদেশ। কি কারণ? জিম্বাবুয়ের বোলারদের অসাধারণ বোলিং? নাকি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন বাংলাদেশ দলের সাবেক দুই অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট ও খালেদ মাহমুদ সুজন। খালেদ মাসুদ মনে করেন ব্যাটসম্যানদের ব্যাট না করার ব্যর্থতাটাই মুখ্য। আর সুজন একই মত পোষণ করলেও তার ধারণা দল গঠনে গোড়াতেই গলদ ছিল টিম ম্যানেজমেন্টের।
খালেদ মাহমুদ সুজন তার বিশ্লেষণে বলেন, ‘জিম্বাবুয়ে পরিকল্পনা মতো চারজন পেসার নিয়ে খেলেছে। আর বাংলাদেশ প্রথমেই ভুল করেছে টিমকম্বিনেশনে একজন পেসার না নিয়ে। আর তার ফলস্বরূপ জিম্বাবুয়ের বোলাররা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের চেপে ধরেছেন। আর একের পর এক বাজে শট খেলে আমাদের ব্যাটসম্যানরা আত্মাহুতি দিয়েছে। আমার মনে হয় টিম সিলেকশনের ভুলটাই এখানে মুখ্য। এখানে জিম্বাবুয়ের পেসারদের মধ্যেই তিনজনই নতুন। শুধু চিগুম্বুরা ছাড়া।  মেথেরতো অভিষেক টেস্ট তার বলে এমন কি গতি আর এমনকি কারুকাজ ছিল যে, এভাবে আউট হতে হলো?’ অন্যদিকে খালেদ মাসুদ বলেন, ‘জিম্বাবুয়ের বোলাররা খুব আহামরি বল করেছে তা না। আমি মনে করি এখানে জিম্বাবুয়ে বোলারদের ক্রেডিট না দিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতাই বড় করে দেখা উচিত। ওদের অধিনায়ক টেইলর একা যে রান করেছে সেই রানতো বাংলাদেশের ১০ জন ব্যাটসম্যান মিলে করতে পারেনি। তাহলে ব্যাটসম্যানরা যদি ব্যাট করার মানসিকতা না দেখায় সেখানে কিভাবে রান হবে?’
এছাড়া দলের ব্যাটিং অর্ডারের গড়বড় ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একাদশ সাজানো নিয়েও সমালোচনা করেন খালেদ মাসুদ। তিনি বলেন, ‘মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ নিঃসন্দেহে ভাল ক্রিকেটার। কিন্তু বেশকিছু টেস্ট হলো তিনি ভাল করতে পারছেন না। অন্যদিকে মমিনুল শ্রীলঙ্কাতে ভাল করেছে। ও বেশ ফর্মে ছিল। দলের সহ-অধিনাক বলে তাকে বাদ দিয়ে মমিনুলকে নেয়া হবে না তা কি করে হয়। আসলে সহ-অধিনায়ক পদটা এমন কিছুই না যে দলের প্রয়োজনে আরেক জন ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যানকে বাদ দিতে হবে। এছাড়াও নাসির বেশ ভাল পারফরমেন্স করে আসছে। শ্রীলঙ্কাতেও সে খুবই ভাল পারফরমেন্স করেছে। তাকে ব্যাটিং অর্ডারের এতো পরে কেন খেলানো হচ্ছে? সেতো সেখানে গিয়ে বোলারদের সাপোর্ট পাচ্ছে বড়জোর। সে যদি মিডল অর্ডারে খেলতো তাহলে ব্যাটসম্যানদের সাপোর্ট পেতো আর নিজের ব্যাটিংটাতে মনোযোগ দিতে পারতো। আর আজ (গতকাল) কেন নাসিরের পরিবর্তে রিয়াদকে ব্যাটিং অর্ডারের উপরে পাঠানো হলো? আসলে আমরা এখনও কোন পরিস্থিতে কি করতে হবে তা চিন্তা করি না।’
খালেদ মাহমুদ সুজন আর খালেদ মাসুদ পাইলট এই দুই সাবেক অধিনায়কই মনে করেন আমাদের দল নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশকে আরও সাবধানী হতে হবে। আর দেশ ও কন্ডিশন অনুযায়ী দল নির্বাচন করতে হবে। সর্বোপরি বাংলাদেশের ব্যাটম্যানদেরকে ব্যাট করা মানসিকতা দৃঢ় করতে হবে বলে মনে করেন সাবেক দুই অধিনায়ক। এই বিষয়ে খালেদ মাসুদ আরও বলেন, ‘ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে না পারলে টেস্টে উন্নতি সম্ভব না।’

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন